সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
বিবিএস-এর প্রতিবেদন

দেশে শ্রমজীবী শিশুর সংখ্যা ৩৫ লাখ

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৫ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

দেশে বর্তমানে ৩৫ লাখ ৪০ হাজার শ্রমজীবী শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরো (বিবিএস)। বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান বু্যরোর অডিটরিয়ামে 'জাতীয় শিশুশ্রম ২০২২'-এর প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার, বিশেষ অতিথি ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পুটিআইনেন, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন, বিবিএস মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জরিপের ফোকাল পয়েন্ট মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন খাঁন।

বিবিএস জানায়, শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক কনভেনশন চুক্তি এবং কাঠামোগত উন্নয়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বর্তমান সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে সব ধরনের শিশুশ্রম নির্মূল করতে প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধ। শিশুশ্রম নির্মূলে কৌশল নির্ধারণ ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্দেশ্যগুলোকে সামনে রেখে জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ ২০২২ এবং সেক্টরভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শিশুশ্রম জরিপ ২০২৩ পরিকল্পনা করা হয়েছে। জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ ২০২২ এবং সেক্টরভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শিশুশ্রম জরিপ ২০২৩ এর প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল ৫-১৭ বছর বয়সি জনসংখ্যার শ্রমশক্তি, কর্মসংস্থান এবং বেকারত্বের ওপর তথ্য সংগ্রহ করা।

জরিপের ফোকাল পয়েন্ট মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন খাঁন জানান, দেশে পরিচালিত জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ ২০২২ শিশুশ্রম সংশ্লিষ্ট চতুর্থ জরিপ যা শ্রমজীবী শিশু, শিশুশ্রম এবং বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম সংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করবে। জেনেভায় ২০১৮ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত আইসিএলএস (ইন্টারন্যাশনাল

কনফারেন্স অফ লেবার স্টাটিসটিসিয়ানস) সম্মেলনে গৃহীত শিশুশ্রম সম্পর্কিত পদ্ধতি অনুসরণ করে এ জরিপটি পরিচালনা করা হয়। জরিপে ১ হাজার ২৮৪টি প্রাথমিক স্যাম্পলিং ইউনিট (পিএসইউ) থেকে ৩০ হাজার ৮১৬টি খানা (১২টি নন-রেসপন্স খানাসহ) নির্বাচন করা হয় এবং ৬৪টি জেলা থেকে স্যাম্পল বেসিস তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছিল। এই জরিপের তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম গত বছরের ৫ ফেব্রম্নয়ারি থেকে ৫ মে পর্যন্ত পরিচালিত হয়।

তিনি আরও জানান, প্রতিবেদনে জাতীয় গণনার সঙ্গে শ্রমজীবী শিশু, শিশুশ্রম এবং ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ ২০২২ অনুসারে, ৫-১৭ বছর বয়সি ৩.৫৪ মিলিয়ন (৩৫ লাখ ৪০ হাজার) শ্রমজীবী শিশু রয়েছে। যার মধ্যে ১.৭৬ মিলিয়ন শিশু শ্রমের বাইরে এবং ১.৭৮ মিলিয়ন শিশুশ্রমে রয়েছে। এর মধ্যে ১.০৭ মিলিয়ন ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম রয়েছে। পলস্নী এলাকায় ২.৭৩ মিলিয়ন শ্রমজীবী শিশু রয়েছে এবং শহরাঞ্চলে রয়েছে ০.৮১ মিলিয়ন, শিশুশ্রমে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা পলস্নী এলাকায় ১.৩৩ মিলিয়ন এবং শহরাঞ্চলে ০.৪৪ মিলিয়ন। অন্যদিকে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা পলস্নী এলাকায় ০.৮২ মিলিয়ন এবং শহরাঞ্চলে ০.২৪ মিলিয়ন রয়েছে।

সর্বোচ্চ শিশুশ্রম অটোমোবাইল ওয়ার্কশপে

এদিকে, বিবিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়, সেক্টরভিত্তিক সবচেয়ে বেশি শিশুশ্রম অটোমোবাইল ওয়ার্কশপে নিয়োজিত। বিবিএস জানায়, জরিপের প্রাক্কলিত ফলাফলে জানা যায়, ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সি মোট ৩৮ হাজার ৮ জন শ্রমজীবী শিশু রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ সেক্টরগুলোতে কর্মরত শ্রমজীবী শিশুদের মধ্যে ৯৭.৬ শতাংশ ছেলে এবং ২.৪ শতাংশ মেয়ে শ্রমজীবী শিশু রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ৫টি সেক্টর নিয়ে জরিপ করেছে বিবিএস।

পাঁচটি সেক্টরে মোট শ্রমজীবী শিশুদের মধ্যে শুঁটকি মাছ উৎপাদনে রয়েছে ৮৯৮ জন, চামড়াজাত পাদুকা শিল্পে রয়েছে ৫ হাজার ২৮১ জন, ওয়েল্ডিং কাজ বা গ্যাস বার্নার মেকানিকের কাজে ৪ হাজার ৯৯ জন, অটোমোবাইল ওয়ার্কশপে রয়েছে ২৪ হাজার ৯২৩ জন, অনানুষ্ঠানিক স্থানীয় টেইলারিং এবং পোশাক খাতে ২ হাজার ৮০৫ জন শ্রমজীবী শিশু রয়েছে। শ্রমজীবী শিশুদের মধ্যে অটোমোবাইল ওয়ার্কশপে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক শিশু নিযুক্ত রয়েছে।

অঞ্চলভিত্তিক বিভাজনে দেখা যায়, ঝুঁকিপূর্ণ সেক্টরে কর্মরত শ্রমজীবী শিশুদের মধ্যে পলস্নীতে বাস করে ৩৫.৭ শতাংশ। অপরদিকে, শহরে বাস করে ৬৪.৩ শতাংশ। ফলে এই সেক্টরগুলোর বেশিরভাগ শ্রমজীবী শিশুই শহরে কাজ করে তা এ জরিপের মাধ্যমে ওঠে এসেছে। ঝুঁকিপূর্ণ কাজ যেমন ভারী বোঝা বহন করার কাজে ছেলে শ্রমজীবী শিশু কিছুটা বেশি পাওয়া যায় যা ১৯.১ শতাংশ। কিছু শিশু আগুন, গরম যন্ত্রপাতি বা বিপজ্জনক বৈদু্যতিক সরঞ্জামের সংস্পর্শে আসে যা ২০.২ শতাংশ, ধুলোবালি, ধোঁয়া বা ধোঁয়ার কারণে শ্বাস-প্রশ্বাস বাধাপ্রাপ্ত হয় এমন কাজে কর্মরত রয়েছে ৩১.১ শতাংশ শ্রমজীবী শিশু। বিরতি ব্যতীত দীর্ঘ সময় ধরে রোদে কাজ করে ১৪.৮ শতাংশ এবং অল্পসংখ্যক শ্রমজীবী শিশু (৩.৯ শতাংশ) কীটনাশক এবং অন্যান্য রাসায়নিকের সংস্পর্শে এসে কাজ করছে। এই পাঁচটি সেক্টরে গড়ে শিশুরা প্রতিদিন ৯.৪ ঘণ্টা কাজ করে। শিশুরা যেসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে সেসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি প্রতিষ্ঠান নিরাপত্তা ব্যবস্থা বা সুরক্ষা পদ্ধতি মেনে চলে না। শ্রমজীবী শিশুদের মধ্যে অর্ধেকেরও কম তাদের স্ব-স্ব কর্মস্থল থেকে বিনামূল্যে খাবার পায়।

জরিপের তথ্যে দেখা যায়, ৫১.৪ শতাংশ প্রতিষ্ঠান শ্রমজীবী শিশুদের মাসিক ৫ হাজার টাকা বা তার কম বেতন দেয়। ২৮.৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠান ১০ হাজার টাকা বা তার কম মজুরি প্রদান করে এবং মাত্র ১.৪ শতাংশ প্রতিষ্ঠান উচ্চ বেতন বা মজুরি দেয়। এই শ্রমজীবী শিশুদের বেশিরভাগই (৮৮.৪ শতাংশ) সপ্তাহ শেষে ছুটি উপভোগ করে এবং উৎসবের সময় ছুটি পায়। পরিশেষে এই জরিপটি টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি)-এর লক্ষ্য-৮ 'শোভন কাজ এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি' বিশেষ করে সূচক ৮.৭.১ এর চাহিদা পূরণে তথ্য উপাত্ত সরবরাহ করে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে