শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্ঘটনা 'এড়াতে' ঈদের ছুটি ২ দিন বাড়ানোর দাবি

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৮ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

ঈদযাত্রায় মানুষের 'দুর্ভোগ কমাতে' দুই দিন ছুটি বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংগঠনটি বলছে, এবারের রোজার ঈদ ঘিরে রাজধানী ও এর আশপাশের জেলা থেকে গ্রামে ফিরবে ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ। ঈদের আগে-পরে সাপ্তাহিক ও উৎসবকেন্দ্রিক ছুটির কারণে এবার বেশি মানুষ ঘরমুখো হবে। সে কারণে ঈদের আগে সরকারি ছুটি দুদিন বাড়ালে লম্বা ছুটিতে মানুষ ধীরে-সুস্থে গ্রামে যেতে পারবে। এতে 'দুর্ঘটনার সঙ্গে ভোগান্তিও' কমবে।

বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে সরকারের কাছে এই সুপারিশ তুলে ধরেন সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

১১ এপ্রিল বাংলাদেশে ঈদুল ফিতর হতে পারে ধরে নিয়ে চলতি বছরের ছুটির তালিকা বছরের শুরুতেই সাজিয়ে রেখেছে সরকার। সরকারি ক্যালেন্ডারে ঈদের ছুটি ধরা হয়েছে ১০, ১১ ও ১২ এপ্রিল। ঈদের ছুটির পর ১৩ এপ্রিল শনিবার, ১৪ এপ্রিল নববর্ষের ছুটি।

আর ঈদের আগে ৭ এপ্রিল শবেকদরের ছুটি। তার আগের দুদিন ৫ ও ৬ এপ্রিল সাপ্তাহিক ছুটি রয়েছে। ফলে ৮ ও ৯ এপ্রিল ছুটি পেলে সরকারি চাকরিজীবীরা এবার ঈদে ছুটি পাবেন

টানা ১০ দিন।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির দাবি, ৮ ও ৯ এপ্রিল ঈদের ছুটি বাড়ানো হলে লম্বা ছুটিতে সবাই স্বাচ্ছন্দ্যে ও ধাপে ধাপে বাড়ি যাওয়ার সুযোগ পাবে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, 'দিনে ৬০ থেকে ৭০ লাখ মানুষ রাজধানী ছাড়বে। অথচ দেশের গণপরিবহণগুলোতে ২২ থেকে ২৫ লাখের মতো মানুষ পাড়ি দেওয়ার সক্ষমতা আছে। এমন পরিস্থিতিতে ঈদের আগে ছুটি না বাড়ালে দেশের সব পথে যাতায়াত পরিস্থিতি 'কোমায়' চলে যেতে পারে। এবার ঈদে ঢাকা থেকে ১ কোটি, গাজীপুর থেকে ৪০ লাখ, নারায়ণগঞ্জ থেকে ১২ লাখসহ মোট ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ ঘরমুখো হবে। ঈদের আগের চার দিনে বাস-মিনিবাসে ৩০ লাখ, ট্রেনে ৪ লাখ, প্রাইভেটকার-জিপ-মাইক্রোবাসে ৩৫ লাখ, মোটরসাইকেলে ১২ লাখ, লঞ্চে ৬০ লাখ, উড়োজাহাজে প্রায় ১ লাখ, ট্রেনের ছাদে, খোলা ট্রাক ও পণ্যবাহী পরিবহণে ১৮ লাখ যাত্রীর যাতায়াত হতে পারে। আন্তঃজেলার মধ্যে যাতায়াত করবে প্রায় ৪ থেকে ৫ কোটি যাত্রী। এজন্য গণপরিবহণের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা না গেলে এবারের ঈদযাত্রায় অচলাবস্থা তৈরি হতে পারে।'

সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক বলেন, 'ঈদে দেশে ৭১৪টি স্পটে যানজট হতে পারে- এমন খবর গণমাধ্যমে এসেছে। যার মধ্যে ১৪০টি স্পটে প্রখর নজরদারি দরকার। ১০টি জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের ২১৮টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ স্পটের বিষয়ে পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা সরকারকে সতর্ক করেছে।'

তিনি আরও বলেন, 'পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এসব স্পটেই ৬০ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এবারের ঈদযাত্রায় রাজধানীবাসী যানজটের কারণে বেশি ভোগান্তিতে পড়বে। তাই রাজধানীর প্রতিটি সড়কের ফুটপাতে হকার ও অবৈধ পার্কিং উচ্ছেদ, রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক প্রধান সড়কে চলাচল বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন।'

তিনি বলেন, 'আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্য ও পরিবহণ নেতাদের চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন টোল পয়েন্টের কারণে মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যানজট হয়। এদিকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চালাতে কিছু অসাধু পরিবহণ মালিক-চালকরা মরিরা হয়ে ওঠে।'

যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে ২০২৩ সালে ঈদুল ফিতরে ৩০৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৮ জনের প্রাণ গেছে। যাত্রীর চাপ দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় এবার ঈদে ছুটি ব্যবস্থাপনা করা না গেলে সড়ক ও নৌ দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি দেখছে সমিতি।

স্টেশনে প্রতারক চক্র রুখতে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা ও মহাসড়কে ডাকাতি রোধের দাবি জানিয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, 'ঈদ শেষে ফেরার সময় তেমন ভোগান্তি হয় না। ব্যবসায়ীরা যেমন দেরিতে আসে, তেমনি অন্যান্য মানুষও ধাপে ধাপে আসে। আর যাওয়ার সময়ই মূলত ভোগান্তি হয়। সবাই একই সময় একসঙ্গে যেতে চায়। তাই ঈদের আগে ছুটি দুইদিন বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।'

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহসভাপতি তাওহিদুল হক লিটন, যুগ্ম মহাসচিব এম মনিরুল হক ও প্রচার সম্পাদক মাহমুদুল হাসান ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে