মৌসুমের 'আগে'ই বাজারে উঠতে শুরু করেছে আম। যদিও এসব আমের দাম বাড়তি তবে তাতে চাষি আর বিক্রেতাদের লাভ। ক্রেতা-বিক্রেতা দুই পক্ষই বলছেন, সেই আমের স্বাদ ভালো না। তবু মৌসুমের শুরুতে মানুষ কিনছে সেগুলো।
এর মধ্যে আবার মাঝেমধ্যে প্রশাসন অভিযান চালাচ্ছে, জব্দ করা আম ধ্বংস করছে। হরমোন ব্যবহারের অভিযোগ এনে ধ্বংস করা হচ্ছে আমগুলো। তবে এই হরমোন ব্যবহারে স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে কি না- সে বিষয়ে মাঠ প্রশাসন ও কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের মধ্যে মতের মিল নেই।
মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দাবি, এভাবে কৃত্রিমভাবে ফল পাকালে তাতে স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকে। তবে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যান তত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ফল বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেছেন, এই হরমোন ব্যবহার করে সব দেশেই ফল পাকানো হয়।
কৃত্রিমভাবে ফল পাকানো নিয়ে প্রতি বছরই এ বিষয়টি দেখা যায়। কয়েক বছর আগে হরমোন ছাড়াও ফলে 'ফরমালিন ব্যবহার' নিয়েও নানা কথা ছড়ায়। ওই অভিযোগে কেবল আম নয়, অন্যান্য ফলও নানা সময় ধ্বংস করা হয়। কিন্তু পরে সরকারের তরফ থেকেই সেই ভুল ভাঙা হয়েছে। তবু নানা সময় প্রশাসনের কর্মকর্তারা ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে এই কাজ করছেন।
এতে ভোক্তাদের মনে যেমন
ভুল ধারণা জন্ম দিচ্ছে তেমনি 'ফরমালিনমুক্ত' দাবি করে বিভিন্ন এলাকায় ফল বিক্রি করা হয়, সেখানে দাম বেশি রাখা হয়।
'অপরিপক্ব' আম বাজারে
এদিকে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ও পাড়া-মহলস্নার দোকানগুলোয় পাওয়া যাচ্ছে পাকা আম। ক্রেতারা হলুদাভ রং দেখে কিনে ঠকছেন।
শনিবার রাজধানীর কারওয়ানবাজারে দেখা যায়, গোবিন্দভোগ, গোপাল ভোগ এমনকি হিমসাগর পাকা আম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে।
তারা জানান, পাকা আমের মৌসুম এখনো শুরু হয়নি। আরও অন্তত ৫ দিন পর গোবিন্দভোগ আমের মৌসুম শুরু হবে।
আসলাম মিয়া নামে ক্রেতা বলেন, 'মূলত কাঁচা আম নিতে এসেছিলাম। পাকা আম পেয়ে যাওয়ায় এক কেজি কিনলাম। মৌসুম শুরু হয় নাই, তাই দামটা একটু বেশি।'
সাতক্ষীরা থেকে মধ্যরাতে আম আনা হয় কারওয়ানবাজার আড়তে। পরদিন সকাল ৯টার ভেতরেই আড়ত থেকে বিক্রি শেষ হয়ে যায়। এরপর সারাদিন খুচরায় বিভিন্ন দামে বিক্রি চলে।
তবে এসব আম যে পরিপক্ব না- সে তথ্য পাইকারি বিক্রেতারাও স্বীকার করলেন।
কারওয়ানবাজারে আমের পাইকারি দোকান মেসার্স শাহ আলী ফার্মের বিক্রেতা মো. ফারুক বলেন, 'সত্যি বলতে এখনো আম পরিপক্ব হয়নি। তবুও আম ব্যবসায়ীরা অধিক লাভের জন্য বিক্রি করে দেয়। এরপর সরবরাহকারীরা আমাদের কাছে নিয়ে আসে। এগুলোকে মেডিসিন দিয়ে পাকানো হয়। প্রশাসন তো এখনো অনুমতি দেয় নাই। যেগুলো আসে এগুলো লুকিয়ে আনে। রোববার এক জায়গায় ট্রাকভর্তি আম আটক করে সব নষ্ট করে দিছে।'
মেহেদী হাসান দেড় কেজি আম কিনেছেন ২১০ টাকা দিয়ে। তিনি বলেন, 'জানি না কেমন হবে। শখ করে কিনলাম।'
ভ্যানে করে খুচরায় সাতক্ষীরার গোবিন্দভোগ আম ১৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন আক্তার হোসেন। তিনি বলেন, 'কিছু বিক্রেতা আছে ১০ থেকে ১২ দিন ধরে বিক্রি করতেছে। আমি আজ (রোববার) প্রথম বেচতাছি। আমি কাউকে বলি না যে আমার আমের আঁটি পরিপক্ব হইছে। রেখে দিছি ভ্যানে, যে আসে কেনে। আম পরিপক্ব নাকি অপরিপক্ব সে দায়ভার আমার না।'
ফরহাদুর রহমান হিমসাগর আম বিক্রি করছেন ২০০ টাকা কেজিতে। তিনি জানালেন, সাতক্ষীরা থেকে আনা হয়েছে হিমসাগর আম।
অথচ সরকারি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২৭ মে থেকে হিমসাগর আম পরিপক্ব হিসেবে পাওয়া যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
রাজশাহীতে আমের বাগান রয়েছে ইকবাল হোসেনের। তিনি বলেন, ভৌগোলিক কারণে অনেক জেলার আম ভিন্ন ভিন্ন সময়ে পরিপক্ব হয়। যেমনটা সাতক্ষীরার নাম সবার আগে বাজারে আসে। পর্যায়ক্রমে রাজশাহীর আম সাতক্ষীরা থেকে ২০ থেকে ২৫ দিন পরে ওঠে।
ছয় বছর ধরে অনলাইনে আম বিক্রি করেন মিঠুন খান। প্রতিবারই রাজশাহীর আম দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করেন তিনি।
তিনি বলেন, 'বর্তমান বাজারে এখন যেগুলো আম পাওয়া যাচ্ছে এই আমগুলো পরিপূর্ণ হয় নাই। তবে এখন দাম বেশি, তাই কিছু ব্যবসায়ী বেশি লাভের আশায় সেগুলো বিক্রি করছে।'
'আমের ক্যালেন্ডারে' কী বলে?
এদিকে বাংলাদেশে রপ্তানিযোগ্য আম সংগ্রহের সময়পঞ্জি (ক্যালেন্ডার) প্রকাশ করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। গবেষণা করে সময় নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। যা চলতি বছরের এপ্রিল মাসে প্রকাশিত হয়েছে।
এতে গোবিন্দভোগ আমের সময়কাল বলা হয়েছে ১৫ মে থেকে, হিমসাগর বা খিরসাপাত ২৬ মে থেকে।
ল্যাংড়া আম ১০ জুন, লক্ষ্ণণভোগ ১৬ জুন, আম্রপালি ১৭ জুন, ফজলি ২৩ জুন, হাঁড়িভাঙা ২০ জুন ও ব্যানানা ম্যাঙ্গু ৭ জুন থেকে রপ্তানিযোগ্য শুরুর সময়কাল বলা হয়েছে। সূত্র : বিডিনিউজ