সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

এবার বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে বড় রদবদল

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৬ জুন ২০২৪, ০০:০০
এবার বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে বড় রদবদল
এবার বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে বড় রদবদল

ঢাকা মহানগরসহ পাঁচ কমিটি বিলুপ্তির একদিন পর চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামন্ডলীসহ নির্বাহী কমিটির ৪৫ পদে নেতৃত্ব পরিবর্তন করেছে বিএনপি। আন্দোলনে ব্যর্থতার দায়ে একের পর এক পরিবর্তন হচ্ছে, দলটিতে এমন আলোচনা থাকলেও এই পরিবর্তনে সেই আভাস পাওয়া যায়নি। আন্দোলনে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করা অনেক নেতার পদোন্নতি হলেও কারো অবনমন ঘটেছে। আবার আন্দোলনে কোনো ধরনের ভূমিকা ছিল না- এমন নেতাকেও পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

1

শনিবার সকালে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ৩৯ নেতার পদে রদবদলের তথ্য জানানো হয়। পরে আরেক বিজ্ঞপ্তিতে ৬ নেতাকে অন্তর্ভুক্তির কথা জানানো হয়। বিবৃতিতে দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, অনেক নেতার পদোন্নতি হয়েছে। বেশ কয়েকজন নেতাকে সম্পাদকীয় থেকে নির্বাহী কমিটিতে পদায়ন করা হয়েছে। দলের বিশেষ সম্পাদক সাবেক ছাত্র দল সভাপতি আসাদুজ্জামান রিপনকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, মজিবুর রহমান সরোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হারুন অর রশিদ, আসলাম চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সাখাওয়াত হাসান জীবন, সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক বেবী নাজনীন এবং সহ তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক খালেদ হোসেন চৌধুরী ফাহিনকে দলীয় চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

স্বপন, খোকন, সরোয়ার ও আলালের মতো সাংগঠনিকভাবে দক্ষ নেতাদের উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দেওয়া মাধ্যমে তাদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা। সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট বিরোধের কারণে মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং একটি টেলিভিশন টক শোতে দলের নেতৃত্ব নিয়ে কথা বলায় তাদের প্রতি সুবিচার করা হয়নি এমনই আলোচনা শুরু হয়েছে দলটিতে।

সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে যুগ্ম মহাসচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন আবদুস সালাম আজাদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স এবং শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী।

সহ-সাংগঠনিক সস্পাদক থেকে পদোন্নতি পেয়ে সাংগঠনিক সস্পাদক হয়েছেন কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল (ঢাকা বিভাগ), সৈয়দ শাহীন শওকত খালেক (রাজশাহী বিভাগ) ও শরীফুল আলম (ময়মনসিংহ বিভাগ)। এছাড়া সমবায় বিষয়ক সম্পাদক জি কে গউছ (সিলেট বিভাগ) সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন। এর মধ্যে সাইয়েদুল বাবুল কয়েক মাস আগে সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছে। শাহীন শওকতের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে। সাংগঠনিকভাবে দক্ষ নয়। অনেকে বলছেন, এই দুই নেতাকে অতিমূল্যায়িত করা হয়েছে।

দলের প্রচার সম্পাদক করা হয়েছে সদ্যবিলুপ্ত কমিটির যুব দলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে।

এছাড়া সহ-প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খানকে গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক, সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীমকে গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক এবং যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া বিএনপির সভাপতি নাহিদ খানকে সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, ডা. শাহ মুহম্মদ আমান উলস্নাহ হককে সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক এবং এএসএম সাইফ আলীকে সহ-তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে।

সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীমকে রাজশাহী বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে। সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদকে ঢাকা বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে।

জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক আমিনুল ইসলামকে রংপুর বিভাগের সহ-সাংগঠনিক, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর হেলাল উদ্দিনকে চট্টগ্রাম বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, আবু ওয়াহাব আকন্দকে ময়মনসিংহ বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এবং মিফতাহ সিদ্দিকীকে সিলেট বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।

পদ অনুযায়ী আমিরুল ইসলাম আলীম অবমূল্যায়িত হয়েছেন। ছাত্রদলের সাবেক এই সাধারণ সম্পাদক আরও গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়ার যোগ্য ছিলেন বলে অনেকে মনে করছেন। অন্যদিকে নজরুল ইসলাম আজাদ ও মীর হেলাল রাজনীতিক ও সাংগঠনিকভাবে কম দক্ষতা সম্পন্ন হিসেবে পরিচিত। ছাত্র কিংবা যুব রাজনীতির তেমন কোনো অভিজ্ঞতা নেই।

জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সস্পাদক জালাল উদ্দিন মজুমদার, রংপুর বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, কুমিলস্না বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সায়েদুল হক সাঈদ, সহ-কৃষি বিষয়ক সম্পাদক চৌধুরী আব্দুলস্নাহ আল ফারুক, সহ-তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এস এম গালিবের পদাবনতি হয়েছে। তাদের ওপর তারেক রহমান সন্তুষ্ট ছিলেন না বলে গুঞ্জন আছে।

এছাড়া যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমেদ, সুইডেন বিএনপির সদস্য মহিউদ্দিন আহমেদ ঝিন্টু, ডেনমার্ক বিএনপির সদস্য গাজী মনির এবং ছাত্র দলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবালকে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য করা হয়েছে।

এদিকে শনিবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় অপর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য পদে ১ এবং জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য পদে ৫ নেতার অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে জানানো হয়। তারা হচ্ছেন- চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিল মেজর জেনারেল (অব.) মো. শরীফ উদ্দীন। আর নির্বাহী কমিটির সদস্যরা হলেন- জাহান পান্না (রাজশাহী), নাজমুন নাহার বেবী (চাঁদপুর), মো. মাইনুল ইসলাম (টাঙ্গাইল), আজম খান (দক্ষিণ আফ্রিকা) ও বেলায়েত হোসেন মৃধা (নরসিংদী) সদস্য।

২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিলে ৫০২ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। এছাড়া গঠন করার হয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদও। তিন বছর পরপর কাউন্সিল করার বিধান রয়েছে দলটির গঠনতন্ত্রে। সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে কাউন্সিল না হওয়ায় এই কমিটির মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। এখন কাউন্সিল না করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কমিটিতে রদবদল আনা হলো। ফলে বিএনপি আপাতত দলের কাউন্সিল করছে না তা অনেকটা পরিষ্কার হয়েছে।

বিএনপি সূত্রমতে, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গঠনতন্ত্র মোতাবেক একক ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে কমিটি পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। কমিটিতে বড় পরিবর্তন আনার আগে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। কমিটি ঘোষণা করার বিষয়টি দলের মহাসচিবসহ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারাও জানতেন না।

এবিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, কমিটি পুনর্গঠনের কিছু আলোচনা বিভিন্ন সময়ে স্থায়ী কমিটিতে হয়েছে। কিন্তু প্রক্রিয়ার বিষয়ে জানানো হয়নি। এমনকি কমিটি ঘোষণার আগে মতামতও নেওয়া হয়নি।

দলে রদবদল প্রসঙ্গে সিনিয়র যুগ্ম মহসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, নির্বাহী কমিটিতে কিছু পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদও কিছু নেতাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে এই পদায়ন করা হয়েছে।

সূত্রমতে, কমিটিতে নেতৃত্ব পরিবর্তন নিয়ে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ। কারণ, কমিটিতে এমন কিছু নেতাকে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হয়েছে যারা রাজনৈতিকভাবে একেবারে আনকোরা। এই কমিটি গঠনের মাধ্যমে মূলত তারেক রহমান দলে শক্ত বলয় তৈরি করছেন। দলের সব পর্যায়ের কমিটিতে নিজের পছন্দের নেতাকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, চট্টগ্রাম, বরিশাল মহানগর কমিটি বিলুপ্ত করে বিএনপি। একই সঙ্গে সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও মুনায়েম মুন্নার নেতৃত্বাধীন যুব দলেরও কমিটিও ভেঙে দেয় বিএনপি। শিগগির এই সব কমিটি পুনর্গঠন করা হবে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কমিটি পুনর্গঠন

বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কমিটিও পুনর্গঠন করা হয়েছে। কমিটির নাম দেওয়া হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসনস ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজরি কমিটি এবং স্পেশাল অ্যাসিসট্যান্ট টু দ্য চেয়ারপারসনস ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজরি কমিটি।

\হচেয়ারপারসনস ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজরি কমিটিতে তারেক রহমানের পদ হচ্ছে চেয়ার অব দ্য কমিটি। সদস্যরা হলেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউলস্নাহ, আন্তর্জাতিক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, সাবেক রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলাম ও কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপি সভাপতি তাজভিরুল ইসলাম।

\হস্পেশাল অ্যাসিসট্যান্ট টু দ্য চেয়ারপারসনস ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্যরা হলেন- শামা ওবায়েদ, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, নাসির উদ্দিন অসীম, নওশাদ জমির, কায়সার কামাল, আসাদুজ্জামান, আফরোজা খান রিতা, ফাহিমা নাসরিন মুন্নি, জিবা খান, নিপুণ রায় চৌধুরী, খান রবিউল ইসলাম রবি, মীর হেলাল উদ্দিন, তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেন, ফারজানা শারমীন পুতুল, ইসরাফিল খসরু, আবু সালেহ মো. সায়েম, ইকবাল হোসেন বাবু।

ছাত্রদলের আংশিক কমিটি

পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠনের সাড়ে তিন মাস পর ২৬০ সদস্যের ছাত্রদলের আংশিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। শনিবার রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানানো হয়।

গত ১ মার্চ রাকিবুল ইসলাম রাকিবকে সভাপতি ও নাসির উদ্দীন নাসিরকে সাধারণ সম্পাদক করে সাত সদস্যের আংশিক কমিটি গঠন করা হয়।

সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়া ২৬০ সদস্যের নতুন কমিটিতে একজন সিনিয়র সহ-সভাপতি, ৪১ জন সহ-সভাপতি, একজন সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ১১০ জন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, একজন সাংগঠনিক সম্পাদকসহ সহ-সাধারণ সম্পাদক, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও সম্পাদকীয় বিভিন্ন পদে নেতাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে