বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

রাসেলস ভাইপার নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৩ জুন ২০২৪, ০০:০০
রাসেলস ভাইপার নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ

বিষধর সাপ চন্দ্রবোড়া বা রাসেলস ভাইপার নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী সামন্ত লাল সেন।

দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেছেন, "স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে আমি বলব, আপনারা আতঙ্কিত হবেন না। রাসেলস ভাইপারে দংশনের যে ওষুধ তা আমাদের হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত মজুত আছে। আমি পরিষ্কার নির্দেশ দিয়েছি কোনো অবস্থাতেই অ্যান্টিভেনোমের ঘাটতি থাকা যাবে না।"

1

শনিবার সারাদেশের সিভিল সার্জন, পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, বিভাগীয় পরিচালক, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকসহ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এ সময় বিভিন্ন এলাকায় সর্পদংশন ও রাসেলস ভাইপার নিয়ে কথা বলেন তিনি।

ডা. সামন্ত লাল বলেন, 'সাপের কামড় বা সর্পদংশনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে রোগীকে দ্রম্নত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া। অনতিবিলম্বে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে এক্ষেত্রে যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীকে

সম্পূর্ণ সুস্থ করে তোলা সম্ভব।

"সর্পদংশনের বিষয়ে জনগণকে সচেতন করা খুবই জরুরি। রোগীকে হাসপাতালে আনতে যাতে দেরি না হয়, সে বিষয়ে আমাদের সবাইকে সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করতে হবে।"

পদ্মা ও মেঘনা পাড়ের কয়েকটি জেলায় সম্প্রতি চন্দ্রবোড়া বা রাসেলস ভাইপার দেখতে পাওয়ার কথা জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এ নিয়ে জনমনে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।

এরইমধ্যে কয়েকটি জেলায় সাপের কামড়ে মৃতু্যর খবর এসেছে। তাদেরকে রাসেলস ভাইপার কামড় দিয়েছিল কি না, ওই সাপের কামড়ে এখন পর্যন্ত কতজনের মৃতু্য হয়েছে বা কতজনকে কামড় দিয়েছে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।

পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি

এদিকে রাসেলস ভাইপার নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে বলে জানিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। শনিবার মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, রাসেলস ভাইপারের উপস্থিতি উদ্বেগজনক হলেও এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে মানুষের সঙ্গে এই সাপের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা কম। এই সাপ সাধারণত নিচু ভূমির ঘাসবন, ঝোঁপজঙ্গল, উন্মুক্ত বন, কৃষি এলাকায় বাস করে এবং মানুষের বসতি এড়িয়ে চলে। সাপটি মেটে রঙের হওয়ায় মাটির সঙ্গে সহজে মিশে যেতে পারে। মানুষ খেয়াল না করে খুব কাছে গেলে সাপটি বিপদ দেখে ভয়ে আক্রমণ করে। রাসেলস ভাইপার দক্ষ সাঁতারু হওয়ায় নদীর স্রোতে ও বন্যার পানিতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিস্তৃত হয়েছে। এজন্য সবাইকে সাবধানতা অবলম্বনের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

সাপের কামড় এড়াতে করণীয় সম্পর্কে বিবৃতিতে বলা হয়, যেসব এলাকায় রাসেলস ভাইপার দেখা গেছে, সেসব এলাকায় চলাচলে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে; লম্বা ঘাস, ঝোঁপঝাড়, কৃষি এলাকায় হাঁটার সময় সতর্ক থাকতে হবে; গর্তে হাত-পা ঢুকানো যাবে না; সংশ্লিষ্ট এলাকায় কাজ করার সময় বুট এবং লম্বা প্যান্ট পরতে হবে; রাতে চলাচলের সময় টর্চ লাইট ব্যবহার করতে হবে; বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার ও আবর্জনামুক্ত রাখতে হবে; জ্বালানি লাকড়ি, খড় সরানোর সময় বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে; সাপ দেখলে তা ধরা বা মারার চেষ্টা করা যাবে না; প্রয়োজনে জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩ নম্বরে কল করতে হবে বা নিকটস্থ বন বিভাগের অফিসকে জানাতে হবে।

সাপ কামড়ালে করণীয় সম্পর্কে বলা হয়, দংশিত অঙ্গ নড়াচড়া করা যাবে না; পায়ে দংশনে বসে পড়তে হবে, হাঁটা যাবে না; হাতে দংশনে হাত নড়াচাড়া করা যাবে না- হাত-পায়ের গিড়া নাড়াচাড়ায় মাংসপেশীর সংকোচনের ফলে বিষ দ্রম্নত রক্তের মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে গিয়ে বিষক্রিয়া ঘটতে পারে; আক্রান্ত স্থান সাবান দিয়ে আলতোভাবে ধুয়ে অথবা ভেজা কাপড় দিয়ে আলতোভাবে মুছতে হবে; ঘড়ি, অলঙ্কার বা তাবিজ থাকলে খুলে ফেলতে হবে; দংশিত স্থানে কাঁটা, সুই ফোটানো কিংবা কোনোরকম প্রলেপ লাগানো যাবে না; সাপে কাটলে ওঝার কাছে গিয়ে অযথা সময় নষ্ট করা যাবে না; যত দ্রম্নত সম্ভব নিকটস্থ হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে যেতে হবে; আতঙ্কিত না হয়ে নিকটস্থ সরকারি হাসপাতালে গিয়ে অ্যান্টিভেনম নিতে হবে।

রাসেলস ভাইপারের প্রাদুর্ভাব কমাতে করণীয় সম্পর্কে বিবৃতিতে আরও বলা হয়- বেজি, গুইসাপ, বাগডাশা, গন্ধগোকুল, বন বিড়াল, মেছো বিড়াল, তিলা নাগ, ঈগল, সারস, মদন টাক এবং কিছু প্রজাতির সাপ রাসেল ভাইপার খেয়ে তাদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এসব বন্যপ্রাণীকে মানুষের নির্বিচারে হত্যার কারণে প্রকৃতিতে এ সাপের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। এ কারণে বন্যপ্রাণী দেখলেই অকারণে তা হত্যা, তাদের আবাসস্থল ধ্বংস করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

বিবৃতিতে বলা হয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর নির্দেশনায় বাংলাদেশ বন বিভাগ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। সচেতনতামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নে স্থানীয় বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ ও সচেতন সমাজের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। পরিস্থিতি সক্রিয়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, 'দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ অ্যান্টিভেনম আছে। সব হাসপাতালে অ্যান্টিভেনম রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে