সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বছরে গড়ে ১২-১৫ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে

ইআরএফ'র সেমিনারে ইফতেখারুজ্জামান
যাযাদি রিপোর্ট
  ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
সেমিনারে বক্তব্য রাখেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান

বাংলাদেশ থেকে মোট কী পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা সম্ভব নয়। ব্যাংকের মতো আনুষ্ঠানিক মাধ্যম ব্যবহার করে ১৭ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ পাচারের কথা জানা যায়। বিভিন্ন ঘটনার ভিত্তিতে ধারণা করা যায়, বাংলাদেশ থেকে বছরে গড়ে ১২-১৫ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে।

শনিবার অর্থনীতি নিয়ে কাজ করা রিপোর্টারদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম-ইআরএফ আয়োজিত এক সেমিনারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবির নির্বাহী পরিচালক এসব কথা বলেন। সেমিনারের বিষয় ছিল 'সম্ভাবনার বাংলাদেশ'।

বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনা 'অসম্ভবের পর্যায়ে' বলে মন্তব্য করে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক সংস্কারে গঠিত কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অন্তর্র্বর্তী সরকার যদি একটি পেনিও ফিরিয়ে আনতে পারে, তিনি অবাক হবেন।

বাংলাদেশে টিআইবির প্রধান বলেন, 'পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা সম্ভব কিনা? উত্তর হচ্ছে, ইট ইজ অ্যাবসলিউটলি পসিবল, কোনো ডাউট নাই। কিন্তু এট দ্য সেইম টাইম যেটা বলতে হবে, ইট ইজ

এক্সট্রিমলি ডিফিকাল্ট, নেয়ারলি ইম্পসিবল। আমি কিন্তু পসিবল বলছি না, এটা এত ডিফিকাল্ট যে, নেয়ারলি ইম্পসিবল-অন্তর্র্বর্তী সরকারের সময় যদি পাচারকৃত অর্থ ১০০ মিলিয়নও ফেরত আসে, দ্যাট উইল বি সারপ্রাইজ। যদি এনি অ্যামাউন্টও ফেরত আসে, আমার জন্য সেটিও হবে সারপ্রাইজ।'

কেন এমনটি মনে করছেন, সেই কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'আজকেও যদি শুরু হয়, যেহেতু ইতোমধ্যে একটা টাস্কফোর্স হয়েছে, আমি তার ওপর আস্থা নিয়েই বলছি, তারা তাদের কাজটা সুন্দর করুক। ফেরত আনার প্রক্রিয়া শুরু করুক।

দুই বছরের মধ্যে যদি সম্ভব হয়, এর মধ্যে যদি একটা সিঙ্গেল পেনিও ফেরত আসে, আমাদের জন্য এটা সারপ্রাইজ হবে।'

কী করতে হবে

যেসব দেশে অর্থ পাচার হয়েছে, সেসব দেশের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষগুলোর 'পারস্পরিক আইনি চুক্তি' করার পরামর্শ দেন ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, তাদের মাধ্যমে এমন একটা পর্যায়ে যেতে হবে, যেখানে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব।

এই প্রক্রিয়াও 'অনেক দীর্ঘসূত্রতার বিষয়' উলেস্নখ করে তিনি দুদক, সিআইডি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা শাখা বিএফআইইউকে একসঙ্গে কাজ করার তাগিদও দেন।

তিনি বলেন, 'সংস্থাগুলো এককভাবে কাজ করলে হবে না। আমরা কতটুকু চাহিদা (পাচারের অর্থ যে দেশে গেছে, তাদের চাপ বা আলোচনা) সৃষ্টি করতে পারব, সেটি কিন্তু বড় প্রশ্ন।'

বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের সিংহভাগই বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে হয় বলেও মন্তব্য করেন দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান। এর মধ্যে বাণিজ্যের আড়ালে বছরে কমপক্ষে ৯ বিলিয়ন ডলার, রেমিট্যান্স, এমএফএস ও হুন্ডির মাধ্যমে বাকি অর্থ বিদেশে যায় উলেস্নখ করে তিনি বলেন, 'এক্সট্রিমলি কনজারভেটিভ হিসাব করলেও ১২-১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়।'

সালমান এফ রহমানকে হত্যা মামলা কেন?

ক্ষমতাচু্যত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ-বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে 'হত্যাচেষ্টার' অভিযোগে মামলার সমালোচনা করেন ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান চৌধুরী। এর বদলে তার বিরুদ্ধে খেলাপি ঋণের মামলা দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

হত্যা মামলায় তার সংযোগ প্রমাণ কঠিন হলেও ঋণখেলাপির মামলায় সহজে প্রমাণ সম্ভব বলে মত দিয়ে তিনি সালমানের বাড়িঘর, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ জব্দ করে বিক্রি করে টাকা আদায়ের পরামর্শও দেন তিনি। বলেন, 'এটার প্রমাণ সহজে করতে পারবেন। এটা করেন ইমিডিয়েটলি।'

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আট দিনের মাথায় গ্রেপ্তার হন সালমান এফ রহমান। তাকে বেশ কয়েকটি মামলায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

বৈদেশিক ঋণ রিভিউয়ের পরামর্শ

সেমিনারে মূল প্রবন্ধে এডিবি, জাইকা, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, চীন ও ভারত থেকে নেওয়া সব ঋণের স্বাধীন রিভিউ করার কথা বলেন আনিসুজ্জামান।

তিনি বলেন, 'দেখতে হবে আমরা যে বিদেশ থেকে লোন এনেছি, এর কতটুকু কাজে লেগেছে আর কতটুকু কাজে লাগেনি, কতটুকু যৌক্তিক ছিল? কতটুকু ব্যবহার হয়েছে আর কতটুকু 'চুরি' হয়েছে। ইন্ডিপেন্ডেন্ট রিভিউ করান।'

জাতিসংঘ বাণিজ্য ও উন্নয়ন সম্মেলন সংস্থা আঙ্কটাডের মাধ্যমে এই রিভিউয়ের দাবি তোলেন তিনি।

বাংলাদেশ থেকে শত বিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগ এনে মূল প্রবন্ধে বলা হয়, 'এটি না হলে আমাদের বৈদেশিক ঋণ ১০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছত না।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে