জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সাড়ে পনের বছরে মানুষকে শান্তিতে থাকতে দেয়নি। দেশের সব মানুষ তাদের কাছে নির্যাতিত হয়েছিল। বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশের অফিস সিলগালা করে বন্ধ করে দিয়েছিল। ঘরে বসেও জামায়াতের নেতাকর্মী শান্তি পায়নি। ঘর থেকে তুলে নিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দেওয়া হয়েছে। শীর্ষ নেতাদের নামে যুদ্ধাপরাধীর মিথ্যা ও সাজানো মামলা দিয়ে বিচারের নামে খুন করা হয়েছে।
শুক্রবার সকালে নীলফামারী বড় মাঠে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নীলফামারী জেলা শাখার কর্মিসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, 'ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ১০ জানুয়ারি ক্ষমতায় বসার পরই ঝাল মিটিয়েছিল আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর ওপর। তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে ৫৭ চৌকস, সাহসী ও দেশপ্রেমিক সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করে। হত্যা করেছিল নির্মমভাবে তাদের পরিবারের সদস্যদের। লাশ ভাসিয়ে দিয়েছিল পিলখানার ড্রেনের মধ্যে। রাতে বাতি নিভিয়ে দিয়ে ঘাতকদের পিলখানা থেকে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছিল। এই ঘাতক কারা ছিল। এদের পরিচয় জাতিকে জানতে দেওয়া হয়নি। সেনাবাহিনী নিজস্ব একটা তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল। তারা তন্ন তন্ন করে খোঁজ নিয়ে সত্যতা তুলে এনেছিল। কিন্তু সেনাবাহিনীর তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করতে দেওয়া হয়নি। এই হত্যাকান্ডের যারা প্রতিবাদ করেছিল তাদের চাকরিচু্যত করা হয়েছিল।'
তিনি বলেন, 'পিলখানার ঘটনার পরই তাদের পরবর্তী টার্গেট ছিল জামায়াতে ইসলামী। ২৯ জুন তৎকালীন জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমির আলস্নামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হলো তারা ইসলামের অবমাননা করেছে। যারা দেশের মানুষের শান্তি, সম্মান ও কল্যাণ উপহার দেওয়ার জন্য জীবন বাজি রেখে লড়াই করলেন তাদের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ আনা হলো।'
জামায়াত আমির বলেন, 'এরপর একে একে জামায়াতের শীর্ষ ১১ নেতাকে যুদ্ধাপরাধীর অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হলো। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হলো- খুন, ধর্ষণ, লুটপাট ও ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের। দেশবাসী সাক্ষী, ''আমি বুকে হাত দিয়ে বলছি আমাদের নেতাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছিল তা ষোলো আনা ছিল মিথ্যা। তার প্রমাণ হলো ১৯৭২ সালে শেখ মুজিবের শাসনামলে '৭১ সালে যারা বিভিন্ন অপরাধ করেছিল তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। যুদ্ধপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে যে মামলা হয়েছিল সেখানে ১টি মামলাও তাদের বিরুদ্ধে ছিল না। এ ছাড়া শেখ মুজিব সরকার সে সময় যাচাই-বাচাই করে ১৯৫ জনের যে তালিকা করেছিল, তার মধ্যে বর্তমান বাংলাদেশের সীমানার ভিতরে কোনো নাগরিক ছিল না।''
তিনি বলেন, 'যদি সত্যিই জামায়াত নেতারা বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকতেন তাহলে বাংলাদেশের কোনো না কোনো থানায় একটি হলেও মামলা হতো। তাহলে এতদিন পরে কেন মামলা দায়ের করা হলো। অভিযোগকারীদের দামি ফ্ল্যাট ও অর্থ সম্পদের লোভ দেখিয়ে রাজি করা হয়েছে। অভিযাগকারী ও সাক্ষীদের তোষামোদ করে এনে শিখিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিচারকরা ছিল হাতের পুতুল। তাদের যেভাবে রায় দিতে বলা হয়েছিল তারা সেভাবে রায় দিয়েছিল।'
তিনি আরও বলেন, 'সেই শহীদদের আপনারা উত্তরসূরি। আপনারা '২৪-এর শহীদদের উত্তরসূরি। যে শহীদদের রুহানী লাশ আপনাদের ঘাড়ে। এখন আমাদের আচরণে প্রকাশ করতে হবে। আগামীর দেশ পরিচালনায় সেটা প্রকাশ করতে হবে। এই শহীদদের আবেগের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। আগামীর দেশ পরিচালনায় এমন একদল মানুষ লাগবে যারা মুখে যা বলবে কাজেও তা করবে। ফ্যাস্টিস শেখ হাসিনা সাড়ে পনেরো বছর দেশ শাসন করেছে। তারা জাতির ওপর জুলুম করেছে। খুন, গুম ও আয়না ঘর তৈরি করেছে। হাজারো মায়ের বুক খালি করেছে।'
তিনি বলেন, 'রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে আমরা দুর্নীতি করব না, কাউকে দুর্নীতি করতে দেব না। আমরা ঘুষ খাব না, কাউকে খেতে দেব না। আপনাদের প্রত্যেককে সমাজের বিভিন্ন জায়গায় পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে। সেদিন আমরা থাকব সজাগ আর জাতি শান্তিতে ঘুমাবে। আমরা এমন একটি সমাজ গড়তে চাই, যে সমাজে লেখাপড়া করার পর এই শব্দটি আমাদের কানে আসবে না আমরা শিক্ষিত বেকার। শিক্ষা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজ যেন তাদের ঘরে চলে যায়।'
তিনি নারীদের উদ্দেশে বলেন, 'আমরা এমন একটা বাংলাদেশ গড়তে চাই যেখানে সমাজের উন্নয়নে নারীরা অবদান রাখতে পারে। নারীরা নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে মর্যাদার সাথে জাতি গঠনে অবদান রাখবেন।'
নীলফামারী জেলা জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তারের সভাপতিত্বে ও জেলা সেক্রেটারি আন্তাজুল ইসলামের সঞ্চালনায় কর্মিসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম। এ ছাড়া কর্মিসভায় মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমান বেলাল, আব্দুর রশীদ, ওবায়দুলস্নাহ সালাফী, ড. খায়রুল আনাম, অধ্যাপক বেলাল উদ্দীন প্রধান, অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, অ্যাডভোকেট আবু তাহের, অধ্যক্ষ আনিছুর রহমান, প্রভাষক ছাদের হোসেন, জেলা বিএনপির সভাপতি আলমগীর সরকার, খেলাফত মজলিসের জেলা সভাপতি সাদ্দাম হোসেনসহ বিভিন্ন স্তরের নেতা বক্তব্য রাখেন।