বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২

সেপ্টেম্বরে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি তিন বছরে সর্বনিম্ন

যাযাদি ডেস্ক
  ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
সেপ্টেম্বরে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি তিন বছরে সর্বনিম্ন
সেপ্টেম্বরে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি তিন বছরে সর্বনিম্ন

দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ব্যবসায় পরিবেশে অনিশ্চয়তা আর ব্যাংক ঋণে উচ্চ সুদহারের প্রভাবে গত সেপ্টেম্বর মাসে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, অর্থবছরের তৃতীয় মাসে বেসরকারি ঋণ খাতে বিতরণের পরিমাণ আগের বছর একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ২০ শতাংশ বেড়েছে। সবশেষ ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে এ খাতে এর চেয়ে কম, ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। এরপর আর কখনো তা ৯ দশমিক ২০ শতাংশের নিচে নামেনি। গত আগস্টে প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির এ হার মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতিতে ঠিক করা লক্ষ্যমাত্রার খুব কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতিতে এই লক্ষ্যমাত্রা ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেই হিসেবে সেপ্টেম্বরের প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে খুব বেশি বাড়েনি।

1

কিন্তু যে মূল্যস্ফীতি মোকাবিলার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদ হার বাড়িয়ে বেসরকারি ঋণে লাগাম দিয়েছে, সেই মূল্যস্ফীতি অক্টোবরে হ পৃষ্ঠা ২ কলাম ৫

ফের দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছেছে। অর্থনীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে যাওয়ার মানে হল, ব্যবসা ক্ষেত্রে বিনিয়োগ কমে যাবে। সেই সঙ্গে কমবে নতুন শিল্প স্থাপন বা শিল্প সম্প্রসারণের গতি। অবধারিতভাবে তার প্রভাব পড়বে কর্মসংস্থানে।

নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলছেন, জুলাই-আগস্টের গণ-অভু্যত্থানের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে ব্যবসায় এক রকম নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করছেন কম। বিনিয়োগের পরিবেশ তখনই তৈরি হয় যখন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।

হাতেম বলেন, 'দেশের অর্থনীতির ওপর টানা দুই মাস ধকল যাওয়ার পর সবাই পরিস্থিতি বিবেচনার মধ্যে আনে। তাই ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার দরকার পড়েনি, কারণ চাহিদা কমে গেছে।'

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যও একই কথা বলছে। চলতি বছর জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে আমদানির এলসি খোলার পরিমাণ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ কমেছে। নিষ্পত্তির কমেছে ১৭ দশমিক ৫৭ শতাংশের মতো। এ সময়ে আমদানির এলসি খোলা হয়েছে ১ হাজার ৫৫৯ কোটি ডলারের। একই সময়ে নিষ্পত্তি হয়েছে ১ হাজার ৬৭১ কোটি ডলারের এলসি।

জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ৪১ শতাংশের বেশি। তিন মাসে ৩৮ কোটি ডলারের মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি হয়েছে। ২০২৩ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে আমদানি হয়েছিল ৬৫ কোটি টাকার মূলধনি যন্ত্রপাতি।

অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এবিসিসিআই) সভাপতি নির্বাচিত সৈয়দ মোয়াজ্জাম হোসেন মনে করেন, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহার ও দেশের রাজনৈতিক পরিবেশের জন্য ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ কম করায় ব্যাংক ঋণ নেওয়া কমিয়েছেন তারা।

তিনি বলেন, 'ব্যাংক ঋণের সুদহার ১৫ শতাংশে উঠে গেছে। এতে ব্যবসার কস্ট অব ফান্ডিং বেড়েছে। সে কারণে ঋণের চাহিদা নেই। কোনো ব্যবসায়ী তো নিজের লোকসান করে ব্যবসা করবে না। তাই ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা কমেছে।'

অক্টোবরের ২২ তারিখে মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে আরও এক দফা রেপো সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে এই সুদহার ১০ শতাংশে পৌঁছায়। নীতি সুদহার বাড়ালে ব্যাংক ঋণের সুদের হারও বেড়ে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংক রেপো রেট বাড়ায় মূলত টাকার সরবরাহ কমানোর জন্য। টাকার সরবরাহ কমালে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার টুল হিসাবে এ পদ্ধতি ব্যবহার করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

গভর্নর আহসান এইচ মনসুর দায়িত্ব নেওয়ার পত তিন দফায় নীতি সুদহার বাড়িয়েছেন। এতে ব্যাংক ঋণের সুদহার ১৫ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছে। আর আমানত পাওয়া যাচ্ছে ৮-১১ শতাংশ সুদে। কোনো কোনো ব্যাংক ১২ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দেওয়ার প্রতিশ্রম্নতি দিয়ে আমানত সংগ্রহ করছে।

এবিসিসিআই সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জাম হোসেন মনে করেন, এসব কারণ ছাড়াও কারখানায় গ্যাস সরবরাহে সংকট রয়েছে। তাতে উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে।

বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ২০২২ সালের প্রথম দিকে ১০ শতাংশের ওপর ছিল। ওই বছর তা ১৪ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছিল। এরপর বিভিন্ন কারণে মূল্যস্ফীতির পারদ চড়তে থাকলে তা কমিয়ে আনতে নীতি সুদহার রেপো বাড়ানো হয়। মুদ্রানীতিতে আরও সংকোচনমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়। তাতে ২০২৩ সালের মাঝামাঝি থেকে আবার কমতে শুরু করে ঋণ প্রবৃদ্ধি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে