সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাসহ জুলাই-আগস্টের গণহত্যায় জড়িতদের দেশে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি করতে যাচ্ছে সরকার।
রোববার সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালের পুরাতন ভবনের সংস্কারকাজ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, 'এই খুনি গোষ্ঠী জুলাই-আগস্ট মাসে গণহত্যা চালিয়েছে। যারা পালিয়ে আছে তাদের ধরার জন্য আমরা ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করতে যাচ্ছি। এটা খুব দ্রম্নত হবে। তারা যেখানে থাকুক না কেন আমরা তাদের গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশে নিয়ে আসার জন্য সর্বোচ্চ আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করব।'
একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যবনাল গঠন করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। এখন ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের চালানো দমন-পীড়নকে 'গণহত্যা' বিবেচনা করে এ আদালতে বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্র্বর্তী সরকার।
গত ৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে সারাদেশে 'গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের'
\হঅর্ধশতাধিক অভিযোগ ট্রাইবু্যনালের তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন অফিসে জমা পড়েছে।
এর মধ্যে একটি মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এবং আরেক মামলায় তার পরিবারের সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতাসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে ট্রাইবু্যনাল।
গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে সেখানেই আছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তার দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কয়েকজন গ্রেপ্তার হলেও অধিকাংশই এখনো আত্মগোপনে রয়েছেন।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এর আগে বলেছিলেন, বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলেই ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় ফেরত চাওয়া হবে। তবে বিচার শেষ হওয়ার আগে আসামি প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফেরত চাওয়া যাবে কিনা- তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন খোদ প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
অক্টোবরের শেষে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিনান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, 'তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। যখন রায় আসবে, ভারতের সঙ্গে প্রত্যর্পণ চুক্তির মাধ্যমে আমরা তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব। রায় হওয়ার আগে আমাদের এটা করার সুযোগ আছে বলে আমার মনে হয় না।'
সিলেটের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী গত ৮ নভেম্বর নেদারল্যান্ডসে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে (ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট) ইউনূসের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দায়ের করেছেন সে বিষয়েও রোববার কথা বলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
তিনি বলেন, দেশের মর্যাদা 'ক্ষুণ্ন' করতে আওয়ামী লীগের কেউ বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে ওই 'ভিত্তিহীন' অভিযোগ দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, 'তারা বিশ্ব জনমতকে, বাংলাদেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য মিথ্যা প্রচার চালানোর উপায় হিসেবে এটা করেছে।'
দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালের প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, 'যেহেতু তদন্ত প্রক্রিয়াটা অনেকদূর এগিয়ে আছে, সে ক্ষেত্রে আমাদের এই তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ করে সরকার যখনই বলবেন তখনই আমরা দল হিসেবে তাদের বিচারের মুখোমুখি করার জন্য প্রস্তুত করতে পারব।' ট্রাইবু্যনালের কৌঁসুলি গাজী এম এইচ তামিমও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।