কিশোরগঞ্জ জেলার হাওড় বেষ্টিত উপজেলা অষ্টগ্রামে একটি মহিষ চুরি করে ধরা পড়ে একাধিক মামলার আসামি দুই চোর গণপিটুনিতে মারা গেছে। নিহতরা অষ্টগ্রামের কাগজী গ্রামের হিরু মিয়ার ছেলে নাসির উদ্দিন (২৮) ও পার্শ্ববর্তী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় এলাকার ছারু মিয়ার ছেলে মো. শাহজাহান (৪০)। তাদের ওপর হামলাকালে অষ্টগ্রাম থানার পুলিশের একটি দল গেলেও পুলিশ রক্ষা করতে পারেনি বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। তবে বিক্ষুব্ধ জনতার ইটপাটকেলে কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এক পর্যায়ে সেনা সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখেন।
অষ্টগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন জানান, তারা ঘটনাস্থলে যাওয়া আগেই মূলত দুজনের মৃতু্য নিশ্চিত হয়ে গেছে। এসময় এলাকাবাসীকে শান্ত করতে চাইলে উত্তেজিত জনতা পুলিশের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এসময় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যের গায়ে ইট পড়ে। তবে তেমন আহত হননি বলে ওসি জানান। এসময় সেনা সদস্যরাও ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখেন। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
ওসি জানান, নিহতদের নামে অষ্টগ্রাম ও নাসিরনগর থানায় একাধিক চুরি ও ডাকাতির মামলা রয়েছে। এদের মধ্যে
শাহজাহান চিহ্নিত ডাকাত। মরদেহগুলো কিশোরগঞ্জ জেলায় ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় শনিবার বিকাল পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি, কেউ আটকও হয়নি। তবে এ বিষয়ে পরবর্তীতে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে ওসি জানিয়েছেন।
ওসি বলেন, হাওরের বর্ষার পানি নেমে যাওয়ায় ডুবন্ত সড়কগুলো ভেসে উঠেছে। ফলে গরু-মহিষ চুরির প্রকোপ বেড়েছে। যে কারণে এলাকাবাসী রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন। নিহত দুজন শনিবার ভোরে অষ্টগ্রাম উপজেলা বাংগালপাড়া ইউনিয়নের মনোহরপুর গ্রাম থেকে একটি মহিষ চুরি করে নৌকাযোগে অষ্টগ্রামের দেওঘর এলাকায় আসলে জনতা তাদের ধরে স্থানীয় একটি প্রইমারি স্কুলে বেঁধে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করেন।
দেওঘর এলাকার বাসিন্দা উপজেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, শনিবার ভোর সাড়ে ৩টার সময় মহিষ চুরি করে নেওয়ার সময় পাহারাদার সাইফুল ইসলাম ও রোকেলসহ কয়েকজন দুই চোরকে আটক করেন। খবর পেয়ে গ্রামবাসী গিয়ে গণপিটুনি শুরু করেন। গণপিটুনির সময়ই পুলিশ গিয়ে উপস্থিত হয়। কিন্তু জনরোষে থামানোর ক্ষমতা ছিল না। বরং কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন বলে জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এলাকাবাসী চোরের উপদ্রবে অতিষ্ঠ। প্রায় প্রতি রাতেই গরু-মহিষ চুরি হচ্ছে। যে কারণে প্রতিটি গ্রামে ১০-১২ জন করে পালাক্রমে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন। মহিলারা গরু-মহিষের গোয়াল ঘরে রাত জেগে বসে থাকেন। বিশাল হাওরে একবার গরু-মহিষ নিয়ে বেরিয়ে যেতে পারলে ধরাটা খুব কঠিন। এখন বোরো আবাদের মৌসুম। ফলে গবাদিপশু হাওরবাসীর জন্য মূল্যবান সম্পদ। এসব কারণেই ক্ষোভের বহিপ্রকাশ ঘটিয়েছে হাতেনাতে চোর ধরতে পেরে। নিহত দুজনের নামে ১০-১৫টি করে মামলা আছে।
এদিকে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. হাছান চৌধুরী জানিয়েছেন, আইন নিজের হাতে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, গরু চুরি রোধে হাওরের থানাগুলো আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছে।