ঐক্যবদ্ধ হয়ে দল পুনর্গঠনের কাজ শুরু করতে দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, তৃণমূলকে আবার সংগঠিত করতে হবে। যে উৎসাহ, দেশপ্রেম নিয়ে আমরা শত গুম-খুনের পরেও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম, ঠিক একইভাবে দলকে পুনর্গঠনের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
সোমবার বিকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে 'বিএনপির সদস্য নবায়ন কর্মসূচি'র উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তিনি অনলাইনে ২০ টাকা (বৃটিশ মুদ্রায় ১৫ পেন্স) দিয়ে নিজের প্রাথমিক সদস্য পদ নবায়ন করেন।
একই সঙ্গে মঞ্চে বসা দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিলস্নাতও ফরম পুরণ করে তাদের সদস্যসপদ নবায়ন করেন।
লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান বলেন, 'আজকের দিন বিএনপির নেতা-কর্মীদের আনন্দের দিন। আজকে যে কর্মসূচি শুরু করলাম, আমার সামনে যে নেতৃবৃন্দকে দেখতে পারছি সকলের মাধ্যমে এই সাংগঠনিক কর্মসূচিটি সফল করতে হবে।'
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'আপনাদের দিকে দল থাকিয়ে আছে। আপনাদের জেলা, থানা, পৌর, ইউনিয়ন, গ্রাম পর্যায়ে যেসব নেতৃবৃন্দ আছেন তাদের ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, যেভাবে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময়ে আপনারা সকলকে সংগঠিত করে ঐক্যবদ্ধভাবে সফল করেছিলেন আমাদের কর্মসূচিগুলো, একইভাবে এই কর্মসূচিটিও আপনারা সফল করবেন।'
তারেক রহমান বলেন, 'এই দলকে যত শক্তিশালী করতে পারব, আমরা আগামীদিনে আমাদের ৩১ দফার মাধ্যমে রাষ্ট্র দ্রম্নত মেরামত করতে পারব, রাষ্ট্রকেও আমরা পুনর্গঠন করতে পারবো।'
ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের পর ২০১৭ সালে বিএনপির সর্বশেষ প্রাথমিক সদস্যপদ নবায়নের কর্মসূচি হয়েছিল দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মাধ্যমে।
'আমাদের ভালো মানুষ দরকার'
তারেক রহমান বলেন, 'জনগণের সমর্থন পাবার পরে দেশকেও পুনর্গঠন করতে হবে। দেশকে পুনর্গঠন করার জন্য, রাষ্ট্রকে মেরামত করার জন্য আমরা ৩১ দফা দেশের সামনে দেশের মানুষের সামনে উপস্থাপন করেছি। সেটিকে যদি বাস্তবায়ন করতে হয় অবশ্যই দলকে ঐক্যবদ্ধ পূনর্গঠিত করতে হবে। যারা মেধাবী মানুষ, সেই মানুষগুলোকে আমাদের সামনে নিয়ে আসতে হবে। যারা পরিশ্রমী, সৎ, আদর্শ আছে এরকম মানুষগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। আরো বেশি করে দলের কাছে নিয়ে আসতে হবে, দলের সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে। আমাদের ভালো মানুষ দরকার। কারণ এই রাষ্ট্রটিকে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচার ধবংস করে দিয়েছে, অনেক পিছনে নিয়ে গেছে। কাজেই আমাদের দলকে যদি পুনর্গঠন করতে হয় সেরকম মানুষ দরকার। সেই রকম মানুষকে বের করে নিয়ে আসতে হবে।'
'মেধার নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে'
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'আমাদের এখন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আছে। আমাদের কর্মীরা কেনো জানি না রাজনীতি থেকে দূরে যাচ্ছে। আমাদের কর্মীরা যারা মিছিলে আসেন সাধারণত ভাইদের পেছনে আসেন। এসে সেই ভাইদের পক্ষে স্স্নোগান দিতে থাকেন। তারপর স্স্নোগান দেন পূর্ব-পশ্চিম-উত্তর-দক্ষিণ। এটা রাজনীতি না।'
তিনি বলেন, 'রাজনৈতিক কর্মীর মুখ থেকে এ ধরনের স্স্নোগান আসা উচিত নয়। এতে রাজনীতির দেউলিয়াপনা ফুটে ওঠে।। আমি মনে করি, এখন বাধ্যতামূলক করতে হবে প্রত্যেকটি উপজেলা এবং জেলাতে রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ। বিএনপিকে আদর্শ দলে পরিণত করতে হবে, মেধার নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে। শুধুমাত্র শ্লোগান দিয়ে আমরা সামনে, আরও সামনের যুদ্ধ জয় করতে পারবো না।'
প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিলস্নাত বক্তব্য রাখেন।
প্রাথমিক সদস্যপদ নবায়ন কর্মসূচির উদ্বোধনী দিনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যার শামসুজ্জামান দুদু, উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উ্ন নবী খান সোহেল, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আবদুস সালাম আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবে রহমান শামীম, শামা ওবায়েদ, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, শরীফুল আলমসহ সাংগঠনিক সম্পাদক, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপি, বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন। মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যানসহ উপস্থিত নেতারা এদিন তাদের সদস্যপদ নবায়ণ করেন।