'সুদৃঢ় ঐক্য রুখে দিতে পারে সকল ষড়যন্ত্র' স্স্নোগান নিয়ে প্রায় সাত বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিএনপির বর্ধিত সভা। আজ জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হল সংলগ্ন মাঠে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্য দিয়ে পুরো দলকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনমুখি করার কৌশল নিয়েছে বিএনপি। সভা থেকে একদিকে যেমন তৃণমূলের কথা শোনা হবে তেমনি সর্বোচ্চ হাইকমান্ড থেকেও দেওয়া হবে নানান বার্তা। দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখে আগামীর পরিবর্তনের জন্য নেতাকর্মীদের দেওয়া হবে নির্দেশনা।
বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, সভায় মূলত তারা দলের নির্দেশনা জানতে উম্মুখ হয়ে আছেন। সেখানে তারাও বক্তব্য রাখবেন। এলাকার নানাবিধ সমস্যা, একটি দলের ষড়যন্ত্র, নির্বাচন নিয়ে দলের মধ্যে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীর দ্বন্দ্ব, সুবিধাভোগিদের দৌড়াত্ব নিয়েও তারা সোচ্চার থাকবেন এদিন। তাদের এসব সমস্যা সমাধানে তাদের হাইকমান্ড যে নির্দেশনা দেবেন তা তারা মেনে চলবেন।
বিএনপির বেশ কয়েকজন জেষ্ঠ্য নেতা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে দলের বির্ধিত সভায় তৃণমূল নেতাদের সুখ, দুঃখের পাশাপাশি প্রত্যাশার কথা শুনতে চান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। একইভাবে সাংগঠনিক বিষয়সহ সার্বিক বিষয়ে মতামত নেবেন তিনি। তারা মনে করেন, ফ্যাসিস্ট সরকার বিগত ৩টি নির্বাচনকে কলঙ্কিত করেছে। নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। জনগণ ভোট কেন্দ্রে যেতে পারেনি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি ও মিত্রদের যারা অংশ নিয়েছেন তাদের ওপরও নানা দমন-পীড়ন হয়েছিলো। এখন সেই পরিবেশ না থাকলেও তাদের নানান কষ্টের কথা শুনবেন তারেক রহমান। এছাড়া বিএনপিকে নিয়ে নানামুখি ষড়যন্ত্র, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি সমস্যা ছাড়াও আভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনে করণীয় বিষয়ে পরামর্শ নেওয়া হবে বলে ওইসব নেতারা জানান।
বর্ধিত সভায় থেকে কি বার্তা আসতে পারে জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, যে সমস্ত নেতা বর্ধিত সভায় আসবেন, যাদের ডাকা হয়েছে তাদের বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করেই অনেক কিছু উঠে আসবে। দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে নির্বাচন নিয়ে তৃণমূলের নেতারা কী ভাবছেন, বর্ধিত সভা থেকে তার একটি ধারণা পাওয়া যাবে। সেই নিরিখে তৃণমূলকে সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক নির্দেশনা দেওয়া হবে। তিনি বলেন, এসব নেতারা দীর্ঘদিন ধরেই রাজপথের আন্দোলন করেছেন। এখনকার পরিস্থিতিতে করণীয় কি, কি ধরনের প্রস্তাবলী গ্রহন করা যায় তাদের বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে সেটা আসবে।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৪ ফেব্রম্নয়ারি রাজধানীর 'লা মেরিডিয়ানে' বর্ধিত কমিটির সভা হয়। যেখানে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বক্তব্য দেন। এর চারদিন পর ৮ ফেব্রম্নয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির সাজানো মামলায় কারাগারে যান বিএনপি চেয়ারপারসন।
জানা গেছে, এবারের বর্ধিত সভায় সারাদেশে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত ছয় স্তরের প্রায় সাড়ে তিন হাজার নেতা উপস্থিত থাকবেন। দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সকল কর্মকর্তা ও সদস্যগণ, সকল মহানগর, জেলা, থানা-উপজেলা-পৌর কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক অথবা আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব ছাড়াও বিএনপির ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক অথবা আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবগণ থাকবেন। এছাড়া ২০১৮ সালের একাদশ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থী এবং মনোনয়ন ইচ্ছুক যেসব প্রার্থী প্রাথমিক পত্র পেয়েছিলেন তারাও এই সভায় থাকবেন।
বর্ধিত সভায় কি ধরনের বার্তা দিতে চাইবেন এমন বিষয়ে দলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, অনেক ত্যাগের বিনিময়ে আজকের বাংলাদেশ। দীর্ঘ ১৬ বছরে অনেক নেতাকর্মীর জীবনের বিনিময়ে, জেল-জুলুম আর নির্যাতন সহ্য করে এক রক্তাক্ত গণঅভু্যত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদকে মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন তারা। এখন তাদের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে- দেশকে যত তাড়াতাড়ি গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে। দেশের জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে। সেজন্য জাতীয় নির্বাচনকেই তারা সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিচ্ছেন। কিন্তু সেখানেও অনেক বাধা আছে, ষড়যন্ত্র আছে, চক্রান্ত আছে। ষড়যন্ত্রকারীরা এখন বিএনপিকে টার্গেট করেছে। সেই চক্রান্ত মোকাবেলায় দলের প্রত্যেক নেতাকর্মীর মধ্যে ঐক্য ধরে রাখার বার্তা থাকবে এই সভা থেকে। এটাই তিনি মনে করছেন।
তৃণমূল পর্যায়ের কয়েকজন নেতা জানান, যত তাড়াতাড়ি নির্বাচন হবে তত সঙ্কট থেকে দেশ মুক্ত হবে। এখন সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকটা ভেঙে পড়েছে। হত্যা, মারামারি, চাদাবাজি, দখল এখন নিত্যনৈমেত্তিক বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। একটি দলের নাম উলেস্নখ করে ওইসব নেতারা বলেন, এই দলের নেতাকর্মীরা ঘাপটি মেরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সবকিছু দখল করছে তাদের মতাদর্শি দিয়ে। উল্টো বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গুজব ছড়াচ্ছে, অপবাদ দেওয়া হচ্ছে। যেসব ঘটনা ঘটছে তার মধ্যে অনেক ঘটনার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। এসব ষড়যন্ত্র আর চক্রান্ত মোকাবেলায় তাদের সচেতন থাকতে হবে, সজাগ থাকতে হবে। এজন্য তাদের মধ্যে ঐক্য সবচেয়ে জরুরি। এই সভা থেকে সেই ঐক্যের বিষয়ে সর্বোচ্চ কঠোরবার্তা দেওয়া হতে পারে।
নেতারা বলেন, সংস্কারের নাম করে ভোটের তারিখ পেছানোর চেষ্টাও তারা মানবেন না। নির্বাচনের সময় নিয়ে সরকার বা অন্য কোনো পক্ষ বাড়াবাড়িতে গেলে তারা মাঠের কর্মসূচি জোরদার করবেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এই বর্থিত সভা আয়োজনকে খুবই সময়োপযোগী উলেস্নখ করে বলেন, আমাদের নেতা-কর্মীরা নির্বাচনমুখী হয়ে গেছে, জনগণ নির্বাচনমুখী হয়ে গেছে। মানুষ অপেক্ষা করছে নির্বাচনের জন্য।