চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় মসজিদের মাইকে ডাকাত এসেছে ঘোষণার পর পিটুনিতে নিহত দুজনের পরিচয় মিলেছে। তারা হলেন-উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়নের মধ্যম কাঞ্চনা এলাকার মাহমুদুল হকের ছেলে মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন (৪৫) ও একই ইউনিয়নের গুরগুরি এলাকার আবদুর রহমানের ছেলে মোহাম্মদ ছালেক (৩৫)। সোমবার রাতে সাতকানিয়ার এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা পশ্চিমপাড়া এলাকায় গণপিটুনিতে দুজন নিহত হন।
জামায়াতে ইসলামীর সাতকানিয়া উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়নের সেক্রেটারি জায়েদ হোছেন বলেন, নিহত ব্যক্তিরা জামায়াতের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। একটি সালিস বৈঠকের কথা বলে তাদের এওচিয়া এলাকায় ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। মৃতু্য নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত দুজনের মাথায় পর্যায়ক্রমে আঘাত করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নেজাম উদ্দিন এলাকায় আসতেন না। গত বছরের ৫ আগস্ট
\হআওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি এলাকায় ফেরেন। সোমবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে ৪ থেকে ৫টি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় নেজামসহ একদল যুবক ছনখোলা পশ্চিমপাড়া এলাকায় যান। সেখানে তাদের দেখে মসজিদের মাইকে এলাকায় ডাকাত পড়েছে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। ঘোষণা শুনে এলাকাবাসী তাদের আটকের উদ্দেশ্যে জড়ো হন। এ সময় এলাকাবাসীকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে পিটুনিতে নেজাম ও ছালেক নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন স্থানীয় তিন বাসিন্দা ও এক দোকানি। আহত ব্যক্তিরা হলেন-ওবায়দুল হক (২২), নাসির উদ্দিন (৩৮), আব্বাস উদ্দিন (৩৮) ও মো. মামুনুর রশিদ (৪৫।
সম্প্রতি স্থানীয় এওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নজরুল ইসলামের মাছের খামার ও ইটভাটায় লুটের ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে নেজাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় নজরুলের স্ত্রী জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। জামায়াতের কিছু স্থানীয় নেতা-কর্মী দাবি করেছেন, এলাকায় বিরোধ মীমাংসার জন্য একটি সালিস বৈঠকের কথা বলে নেজাম ও তাঁর সঙ্গীদের এওচিয়ায় ডেকে নিয়ে মাইকে ডাকাত পড়েছে ঘোষণা করা হয়। এরপর নেজাম ও তাঁর সঙ্গীদের পিটুনি দেওয়া হয়েছে।
তবে এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, গত বছরের ৫ আগস্টের পর এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে স্থানীয় আরেকটি পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে নেজামের। দুই পক্ষের মধ্যে অন্তত দুবার গোলাগুলির ঘটনাও ঘটেছে। প্রতিপক্ষের লোকজন নেজাম উদ্দিন ও তার সঙ্গীদের ওপর হামলা করেছেন।
জামায়াতে ইসলামীর ইউনিয়ন শাখার সেক্রেটারি নিহত দুজনকে জামায়াতের সক্রিয় কর্মী দাবি করলেও উপজেলা আমির মাওলানা কামাল উদ্দিন বলেন, নিহত ব্যক্তিরা জামায়াতের তালিকাভুক্ত কোনো কর্মী নন। তবে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় যেহেতু জামায়াতের জনসমর্থন বেশি রয়েছে, সে হিসেবে হয়তো তাঁরাও জামায়াতকে ভালোবাসতেন। এ ঘটনা কি পরিকল্পিত, নাকি এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঘটেছে, তা প্রশাসন খুঁজে বের করুক।
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহেদুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, আটটি গুলির খোসা ও একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা জব্দ করেছে পুলিশ। নিহত ব্যক্তিদের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সোমবার রাতেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। আহত ব্যক্তিরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ওসি মো. জাহেদুল ইসলাম আরও বলেন, নিহত যুবকেরা রাতে কেন ওই এলাকায় গিয়েছিলেন এবং তাদের পিটুনি দিয়ে কেন হত্যা করা হয়েছে, তা এখনো জানা যায়নি। তবে পুরো বিষয়টি জানার জন্য তদন্ত চলছে।###