দেশব্যাপী চলমান নারী ধর্ষণ, নিপীড়ন, নির্যাতন ও বিচারহীনতার প্রতিবাদে এবং ধর্ষকের বিচারের দাবিতে সোমবার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, আইনজীবী, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও সাধারণ মানুষ।
এর মধ্যে বেলা ১২টায় ঢাকার হাইকোর্টের প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। মানববন্ধনে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা বক্তব্য রাখেন।
ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, 'অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্মকান্ডের ব্যাঘাত ঘটে এজন্য আজ পর্যন্ত কোনো কর্মসূচি দিইনি। কিন্তু এই ধরনের ঘটনা অব্যাহত থাকে, নারী নিপীড়ন অব্যাহত থাকে এবং সুষ্ঠু বিচার আমরা না পাই, আমরা বলতে চাই, অতি শিগগরিই ছাত্রদল আবারও রাজপথে নামতে বাধ্য হবে। আমরা অনুরোধ জানাচ্ছি, বাংলাদেশের পুরো ছাত্র সমাজের অনুভূতি বুঝার চেষ্টা করেন, আছিয়ার ধর্ষকদের বিচার অতিদ্রম্নত সময়ের নিশ্চিত করেন। দয়া করে আজকে থেকে আরও বেশি সচেষ্ট হোন।'
তিনি বলেন, 'ধর্ষণ, নারী নিপীড়নের বিচার দ্রম্নততম সময়ে নিশ্চিত করেন। অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না করেন তাহলে আমরা আপনাদের দিকে আঙ্গুল তুলতে বাধ্য হবো। যেভাবে ছিনতাইকারীরা সন্ধ্যার পর হলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, এমনকি হ আরও খবর পৃষ্ঠা ১২ ছাত্রদলের নেতা-কর্মীসহ সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা আক্রান্ত হচ্ছে। আমরা স্পষ্টভাবে দাবি করছি, আপনারা আইনশৃঙ্খলার দ্রম্নত উন্নতি করুন। আছিয়াসহ বিভিন্ন ধর্ষণ ঘটনার দ্রম্নততম সময়ে তদন্ত শেষ করে বিচার সম্পন্ন করুন।'
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, 'আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, গত সাড়ে ১৫ বছর নারীর প্রতি যে নির্যাতন, নারীর প্রতি যে নির্মমতা অথবা যে গণধর্ষণের ঘটনাগুলো ঘটেছে, সেগুলোর কিন্তু গণমাধ্যমে খুব ফলাও করে প্রচার করা হয়নি। আপনারা দেখেছেন, ২০১৮ সালে নোয়াখালীর সূবর্ণচরে ধানের শীষে ভোট দেয়ার কারণে আমার বোন পারুলকে কিভাবে গণধর্ষণ করেছে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা, তার বিচার নিশ্চিত হয়নি। আমরা ভুলে যাইনি সিলেটের এমসি কলেজে স্বামীকে বেধে রেখে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা গণধষর্ণ করেছে- তার বিচার এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। গত সাড়ে ১৫ বছর যে নিপীড়ন, ধর্ষণ, অথবা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবণতি যেগুলো এদেশের মানুষ ভুলে যায়নি।'
নাছির বলেন, 'গত কয়েদিন আগে নারীর প্রতি যে সহিংসতা হয়েছে সেখানে অভিযুক্তকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিলো। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবিরের সভাপতি সেই ধর্ষক বা নারী নিপীড়নকারীকে তদবীর করে থানা থেকে তাকে ছাড়িয়ে নিয়েছে। আমরা দেখেছি, নতুন যে ছাত্র সংগঠন গঠিত হয়েছে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের একজন কেন্দ্রীয় নেতা, সে ইতিমধ্যে নারী নির্যাতনকারী হিসেবে দোষী প্রমাণিত হয়েছে, তাকে পর্যন্ত সেই কমিটিতে অন্তুর্ভুক্ত করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে এই সরকারের স্টেকহোল্ডার দু'একজন গুপ্ত নেতারা এখনো নারী নিপীড়নের পক্ষে তদবির করছে, তাদের বিষয়ে সরকারের সর্তক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে আমরা মনে করছি।'
মাগুরায় আইনজীবী ও ছাত্রদলের মানববন্ধন
এদিকে, নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা, নিপীড়ন, ধর্ষণ ও অনলাইনে হেনস্তা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ও বিচারহীনতার প্রতিবাদের অংশ হিসেবে মাগুরায় মানববন্ধন করেছে মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। সোমবার দুপুরে সরকারি কলেজের গেইটের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া সকালে ধর্ষণের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে মাগুরা জেলা আইনজীবীরা। মাগুরা জেলা জজকোর্টের সামনে ঘণ্টাব্যাপী এই মানববন্ধন করেন আইনজীবীরা। মানববন্ধন থেকে ধর্ষণের প্রতিবাদ ও দ্রম্নত বিচার দাবি করা হয়।
সোমবার দুপুরে মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা আট বছরের শিশু ধর্ষণকারীদের দ্রম্নত বিচার দাবি করেন। এছাড়া, সারাদেশে ধর্ষণের মতো নিকৃষ্ট কাজের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃতু্যদন্ডের দাবি জানান তারা। এজন্য প্রচলিত আইন ভেঙ্গে প্রয়োজনে নতুন করেন আইন প্রণয়ন করে হলেও এটি বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়।
এ সময় মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আব্দুর রহিমসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
মধ্যরাতে আদালতে শুনানি
চার আসামির রিমান্ড মঞ্জুর
এর আগে, নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা থাকায় রোববার দিনে ধর্ষণের আসামিদের আদালতে হাজির করতে পারেনি পুলিশ। পরিস্থিতি বিবেচনায় দিন শেষে গভীর রাতে রিমান্ড আবেদনের শুনানি করেছেন আদালত। শুনানি শেষে মূল অভিযুক্ত ভুক্তভোগী শিশুর বোনের শ্বশুরকে সাত দিন। স্বামী, শাশুড়ি ও ভাশুর প্রত্যেককে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। মাগুরার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল মতিন এ আদেশ দেন।
আদালত সূত্র ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোববার সকাল থেকে প্রায় দিনভর মাগুরা শহরে শিশু ধর্ষণে জড়িত ব্যক্তিদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মৃতু্যদন্ডের দাবিতে নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বেলা ১১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মূল ফটক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। এরপর সেখান থেকে সরে গিয়ে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ভায়না মোড় মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। সন্ধ্যার পর শহরে আবার মশাল মিছিল করেন আন্দোলনকারীরা। এমন পরিস্থিতিতে আসামিদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা থাকায় তাদের আদালতে হাজির করতে পারেনি পুলিশ।
রোববার দিবাগত রাত ১২টার পর শুরু হয় রিমান্ড শুনানি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আসামিদের ৭ দিন করে রিমান্ড আবেদন করেন। এ সময় আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী শুনানিতে অংশ নেননি। আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিলে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন আসামিরা। রিমান্ড না দেওয়ারও দাবি করেন তারা।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তার পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভুক্তভোগী শিশু অচেতন থাকায় জবানবন্দি নেওয়া যায়নি। ফলে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি। উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে মামলার মূল অভিযুক্তকে ৭ দিন এবং অন্য তিন আসামিকে ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, 'রিমান্ডের আবেদনসহ অন্য কাগজপত্র তৈরি থাকলেও দিনে আসামিদের আদালতে হাজির করার ঝুঁকি নেওয়া হয়নি। দিনভর আন্দোলনকারীরা আদালতের ফটক ঘিরে রেখেছিলেন। আসামিদের তাদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি করছিলেন। এ কারণে রাতে শুনানি করেছেন আদালত।'
মাগুরা শহরতলির নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয় বলে পরিবারের অভিযোগ। শিশুটি বর্তমানে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচে) চিকিৎসাধীন।
গত শনিবার শিশুটির মা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মাগুরা সদর থানায় মামলা করেন। এতে শিশুটির বোনের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে আসামি করা হয়েছে। তারা আগে থেকেই পুলিশের হেফাজতে ছিলেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বোনের স্বামী, শাশুড়ি ও ভাশুরকে কারাগারে পাঠানো হয়।