মানব শিশুর পৃথিবীতে আবির্ভাব সৃষ্টি জগতের চির রহস্যাবৃত্ত ও বিস্ময়কর ঘটনা। মায়ের গর্ভে থাকাকালীন থেকে আট বছর পর্যন্ত শিশুর শরীর ও মনের পরিবর্তনই হলো শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ। এ সময়ই শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে। শিশুর শারীরিক বর্ধন ও বিকাশ একটি নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া। এর সূচনা হয় মাতৃগর্ভে শিশুর বিকাশ ও বৃদ্ধি কিন্তু এক জিনিস নয়। কাজ করার ক্ষমতা ও দক্ষতা অর্জন হলো শিশুর বিকাশ। শিশুরা আমাদের ভবিষ্যৎ। একটি শিশু পরবতী জীবনে সুস্থ-সবল, বুদ্ধিমান, উৎসাহী, আগ্রহী, দক্ষ, ব্যক্তিত্ববান, দক্ষ, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি মানবসম্পদ, মূল্যবোধ, নৈতিকতাসম্পন্ন, মানবিক- মানুষ হয়ে উঠবে যদি গর্ভকালীন মায়ের যত্ন, মাতৃত্বকালীন পুষ্টি সঠিকভাবে পায় তাহলে পরবর্তী জীবনে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীল কর্মকান্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখতে সামর্থ্যবান হবে। মনোবিজ্ঞানী এরিকসনের মতে, শিশুকাল হলো মৌলিক বিকাশ অর্জনের সময় মায়ের গর্ভে থাকাকালীন সময়ে শিশুর মস্তিষ্কের প্রায় ৭০ শতাংশ সম্পন্ন হয় এবং বাকিটুকু অংশ গঠন হয়ে থাকে তিন বছর পর্যন্ত। এ সময়কে বলা হয় প্রারম্ভিক শৈশব সেবা বা আর্মি চাইল্ডহুড কেয়ার চাইল্ড ডেভেলাপমেন্ট অথবা ইসিসিউ শৈশবকালে শিশুদের শারীরিক ও সামাজিক বিপত্তি আকার ধারণ করে। শিশুর সামাজিক জ্ঞানভিত্তিক ও আবেগী উন্নয়ন বাদ দিয়ে সঠিক বিকাশ তথা সামাজিককরণ প্রা?িয়া সুসম্পন্ন হবে না। একটি শিশু যে পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্রে জন্ম গ্রহণ করে সেই পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের আর্থসামাজিক পরিবেশের ওপর শিশুর বর্তমান ভবিষ্যৎ বহুলাংশেই নির্ভর করে শিশু স্বাস্থ্যের বিষয়টি ছাড়াও প্রয়োজন তার বস্ত্র বাসস্থান, বিনোদন। এছাড়া, পরিবারের আর্থিক অবস্থা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সচেতনা সামাজিক মূল্যবোধ, দায়িত্বহীনতা, ভৌগোলিক অবস্থা, পারিপার্শ্বিক অবস্থা ইত্যাদি প্রভাব ফেলে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, সঠিক সময়ে যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমে শিশুর নানা ধরনের ঝুঁকি কমিয়ে শিশুর শারীরিক মানসিক বিকাশ বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করা সম্ভব।
দৈহিক ও মেধাবিকাশে পুষ্টির কোনো বিকল্প নেই। গর্ভকালীন থেকে অনূর্ধ্ব ৫ বছর বয়স অর্থাৎ মায়ের গর্ভে থাকাকালীন এবং গর্ভপরবর্তী সময়কে 'গোল্ডেন থাউজ্যান্ড ডে, বলা হয়।
বাংলাদেশে ৫ বছরের কম বয়সি শিশুর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯ শতাংশ। শিশু বিকাশ একটি বিজ্ঞান। আবার এভাবেই বলা যায়- এটি শুধু বিজ্ঞানই নয় এটি একটি দর্শন। তাই প্রারম্ভিক বিকাশের দর্শনের ওপর বিনিয়োগ করতে হবে। শিশু চিকিৎসকরা চিকিৎসা ক্ষেত্রে শৈশবকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন একটি হচ্ছে প্রারম্ভিক শৈশব অন্যটি হচ্ছে শৈশব। এ সময়ে শিশুর ইতিবাচক ও নেতিবাচক অভিজ্ঞাগুলো পরবর্তী জীবনে জোড়ালোভাবে প্রভাব ফেলে। এ সময়ের অবহেলা, নির্যাতন, মায়া, মমতা শিশুর বুদ্ধিভিত্তিক, আচরণগত ও আবেগের ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি করে। শিশুর সঠিক চিকিৎসা, খাদ্য নিরাপত্তা, খাদ্য পুষ্টি উদ্দীপনা, শারীরিক ও মানসিক সুস্বাস্থ্য শিক্ষা, নিরাপত্তা, বিনোদন, নিরাপদ বাসস্থান এ বিষয়গুলো নিশ্চিতকল্পে শিশুর পরিবার, অভিভাবক সমাজ, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজনীয়তা অত্যবশকীয়। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতির অধ্যাপক জেমস হেকম্যান তার গবেষণায় দেখিয়েছেন যে, 'যত অল্প বয়সে শিশুর জন্য বিনিয়োগ করা যায় পরবর্তী সময়ে তার ইতিবাচক প্রভাব তত বেশি হয়। মায়ের গর্ভকালীন থেকে শিশুর তিন বছর সময় পর্যন্ত বিনিয়োগ বিদ্যালয় বা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় থেকেও অধিক কার্যকরী।'
বাংলাদেশে প্রায় এক চতুর্থাংশ শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে। এক জাতীয় দৈনিক থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে মোট শিশুর প্রায় ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বাস করে অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল তথা দরিদ্র পরিবারে। আর প্রায় ৭০ শতাংশেরও বেশি শিশু নূ্যনতম পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খাদ্যপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত। প্রায় ৪৫ শতাংশ শিশুর মৃতু্যর জন্য পুষ্টিহীনতা দায়ী শিশুপুষ্টি খাতে যথাযথ বিনিয়োগের মাধ্যমে শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত ও উচ্চ মৃতু্য হার ঠেকানো অনেকাংশেই সম্ভব। পর্যাপ্ত পুষ্টি গ্রহণকারী শিশু পরিণত বয়সে কর্মজীবনে প্রবেশ করলে সেই সব শিশুদের আয় প্রায় ৫-৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভবনা রয়ে যায়।
গবেষণা থেকে আরও জানা যায় যে, পুষ্টিতে প্রায় ১ টাকা বিনিয়োগ করলে প্রায় ১৬ টাকার পরিমাণ ফল ফেরত পাওয়া যায়।
বাংলাদেশে স্থানকাল পাত্র, শ্রেণিপেশা, ভৌগোলিকভাবে দুর্গম, দুর্যোগ, সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, নাজুক জনগোষ্ঠী পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী রয়েছে।
নদীপাড়ের, চরাঞ্চলের, পাহাড়ি এলাকা সমুদ্র তীরবর্তী, হাওড়-বাঁওড়, প্রত্যন্ত গ্রামীণ অজ পাড়াগাঁ। সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। আরও রয়েছে লিঙ্গভিত্তিক বিভাজিত নারী ও কন্যাশিশু, হতদরিদ্র ও দারিদ্রসীমার নিম্নে বসবাসকারী পরিবারের শিশু, কর্মজীবী নারী, শিশু ও পথশিশু। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নানা বৈষম্যে সুবিধাবঞ্চিত বিপন্ন শিশু, ক্ষুধা ও দরিদ্রতা, পুষ্টিহীনতা মানবেতর জীবনযাপন করে থাকে। সেটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। এসব পিছিয়ে পড়া শিশু পরিবার তথা, বিপন্ন শিশুদের প্রাথমিক বিকাশের চ্যালেঞ্ছগুলো নানারকমের হয়ে থাকে। শিশুদের সঙ্গে সহিংস আচরণ, মায়া-মমতাহীনতা, অবহেলা শিশুর বুদ্ধিবৃত্তিক আচরণগত ও আবেগের ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি করে।
বাংলাদেশে শিশুদের প্রাথমিক বিকাশে চ্যালেঞ্ছগুলো মোকাবিলা করতে না পারার কারণে প্রতি তিনটি শিশুর মধ্যে দুটি শিশু শারীরিক অশান্তিতে থাকে। এ ক্ষেত্রে দারিদ্র ও পুষ্টিহীনতা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এক্ষেত্রে দারিদ্র্য ও পুষ্টিহীনতার চ্যালেঞ্ছগুলো জটিল, সময় সাপেক্ষ ও বহুমাত্রিক বাংলাদেশে প্রায় ২৫ শতাংশ শিশু অপুষ্টির শিকার। শিশুর খাদ্য নিরপত্তাহীনতায় থাকে। বিশ্বের শীর্ষ ২০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। প্রতি আট শিশুর মধ্যে একটি শিশু মারাত্মক খাদ্য নিরাপত্তহীনতার মধ্য রয়েছে। বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে ২০২৪-এর তথ্যানুযায়ী ১২৫টি দেশের মধ্য বাংলাদেশের অবস্থান ৮১ তম।
গণসাক্ষরতা অভিযান ও ব্র্যাক শিক্ষা উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রাথমিক স্তরের ৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ভীত-আতঙ্কগ্রস্ত। ৩৬.৯ শতাংশ শিক্ষার্থীর মধ্যে বিদ্যালয়বিমুখতা এবং ২৮.৬ শতাংশ শিশুর মানসিক ক্ষতির লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়েছে। এর কারণ হিসেবে রাজনৈতিক অস্থিরতা, সংঘাত-সহিংসতা, মিছিল, মিটিং, ভাঙচুর, অগ্নি-সংযোগ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা শিশুর মনে অজানা ভয়ভীতি, নিরাপত্তহীনতা, উৎকণ্ঠা, নেতিবাচক চিন্তাচেতনার উদ্রেক সৃষ্টি করে থাকে। শারীরিক মানসিক সঠিক বিকাশ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিরাট অন্তরায়। এছাড়াও যুদ্ধ বিগ্রহ, নানা প্রাকৃতিক ও সামাজিক, দুর্যোগ, মহামারি ইত্যাদি। সামাজিক নানা প্রতিবন্ধকতা, কুসংস্কার, কূপমন্ডূকতা, অশিক্ষা, কুশিক্ষা ধর্মীয় গোঁড়ামি অজ্ঞতা, বাল্যবিয়ে, ও অপরিণামদর্শী চিন্তাচেতনা, বহুমুখী, ধারণা, অন্ধ অনুকরণ নারীর সিদ্ধান্তহীনতা পুষ্টিহীনতা প্রারম্ভিক। শিশু বিকাশের পথে বাধার সম্মুখীন হতে হয় আমাদের সমাজ বাস্তবতায় নিরীক্ষে। বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে ভালো অবস্থান থাকলেও পুষ্টিহীনতা। খর্বতা ইত্যাদি নেতিবাচক ইসু্যগুলো রীতিমত উদ্বেগের কারণ।
মায়ের বুকের দুধ শিশুর মৌলিক অধিকার। মায়ের বুকের দুধে রয়েছে প্রায় ৩৫টি অ্যান্টিবায়োটিক। মায়ের বুকের দুধের কোনো বিকল্প নেই বুকের দুধ প্রাপ্তি এবং অপুষ্টিজনিত সমস্যা সমাধান করা গেলে দেশের প্রায় সব ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়বে। বিবি এইচ এসের ২০২২ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী ৫৫ শতাংশ নারী শিশুকে মাতৃদুগ্ধ পান করান। নানা কারণে নারী তার শিশুকে মায়ের বুকের দুধ অর্থ্যাৎ প্রকৃতিকভাবে প্রকৃতি প্রদত্ত খাবার খাওয়াতে পারে না। যেমন- কর্মজীবী নারী কর্মস্থলে ব্রেস্টফিডিং কর্নার না থাকার কারণে অথবা ভ্রমণকালে, শপিং করার সময় শিশুরা প্যাকেটজাত দুধ পান থাকে; বুকের দুধ পান করাতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় এ কারণে। আবার কোনো কোনো নারীর প্রয়োজনীয় পুষ্টি ঘাটতি তথা শারীরিক সমস্যার দরুন শরীরে প্রয়োজনীয় মাতৃদুগ্ধ তৈরি হয় না- এতে করে শিশু মাতৃদুগ্ধ থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে। আবার মাতৃমৃত্যের কারণে নবজাতক শিশু মায়ের বুকের দুধ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে নবজাতক শিশুদের জন্য নিরাপদ ৩ মাস সম্মত খাদ্য বিনিয়োগে প্রয়োজন দেখা দেয়। এক্ষেত্রে মিল্ক ব্যাংক স্থাপন না থাকার কারণে শিশুর জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ে। দিবাযত্ন কেন্দ্রের অভাবের কারণে এমনকি দিবাযত্ন কেন্দ্র থাকলেও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষিত লোকবলের অভাবে দিবাযত্ন কেন্দ্রগুলো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলায় সেবার মান যৎসামান্য থাকে। দিবা যত্ন কেন্দ্রগুলোর সীমাবদ্ধতা রয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় দিবাযত্ন কেন্দ্র অপ্রতুল, দিবাযত্ন কেন্দ্র খাদ্য-পুষ্টির ঘাটতি, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, নার্স ডাক্তারের অভাব, টিকা কর্মসূচি না থাকা প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না থাকায় প্রয়োজনীয় সেবার অনিশ্চয়তা থেকেই যায়। দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কল্যাণের ধারণাকে অব্যাহত রাখতে হবে। সার্বিক দিকগুলো নিয়ে গবেষণা করতে হবে গবেষণা লক্ষ্য আন্তরিক ও সচেতনভাবে কাজে লাগাতে হবে। শিশু স্বাস্থ্য সুরক্ষা স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করতে হলে মাতৃত্বকালীন পুষ্টি, প্রসূতি মায়ের স্বাস্থ্য পুষ্টির বহুমাত্রিকতা বিবেচনা করে মা ও শিশু স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে ব্যক্তিগত সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, জাতীয় ও স্থানীয় সরকারিভাবে সুনির্দিষ্ট পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সম্বন্বিতভাবে সরকারের স্বাস্থ্য, কৃষি, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ, খাদ্য মন্ত্রণালয় স্থানীয় সরকার মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ধর্ম মন্ত্রণালয় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, পরিবেশ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয় দপ্তরকে সম্মিলিত পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে উদ্যোগী হতে হবে।
শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশের ক্ষেত্রে জিডিপিতে কমপক্ষে প্রায় ১ শতাংশ বরাদ্দ দরকার। শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশের কিছু কর্মসূচি রাজস্ব বাজেটের আওতায় নিয়ে আসতে হবে টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে। এক্ষেত্রে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে।
প্রারম্ভিক শিশু বিকাশের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগত অর্থাৎ নীতিমালা প্রণয়নের প্রতিটি পদক্ষেপে পালন করে সব অংশীজন ও নীতি বাস্তবায়নকারী ব্যক্তিদের যুক্ত করাটা খুব জরুরি। শুধু প্রতিটি শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ নিশ্চিত করাটা সহজসাধ্য ব্যাপার নয়- এক্ষেত্রে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
দিবাযত্ন সেন্টারের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এছাড়া, অভিভাবক, বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যদের প্যারেটিং সম্পর্কে সম্যক ধারণা দিতে হবে। বাল্যবিয়ে রোধ করতে হবে। শিশুদের প্রকৃতির কাছে নিতে হবে। প্রকৃতির ঘনিষ্ঠতার কোনো বিকল্প নেই। শিশুদের শেকড় সন্ধান করতে উৎসাহিত করতে হবে। শিশুদের সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশুদের দুপুরে পুষ্টিকর ও নিরাপদ খাবারের সুব্যবস্থা করতে হবে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মনোবিজ্ঞানী নিয়োগ দিতে হবে। শিশুদের বাড়তি বইয়ের বোঝা কমাতে হবে। শিশুবান্ধব গল্প, ছড়া, কবিতা, নীতিশাস্ত্র, পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। শিশুদের গবেষকদের রাষ্ট্র কর্তৃক পৃষ্টপোষকতা বাড়াতে হবে।
মাতৃমৃতু্য ও শিশুমৃতু্য প্রতিরোধ সুরক্ষিত ডেলিভারি নিশ্চিত করতে সম্মিলিতভাবে সমন্বিত প্রয়াস চালাতে হবে। আন্তঃযত্নমন্ত্রণালয়গুলোকে শিশু খাদ্য- দামি হওয়ার চেয়ে স্বাস্থ্যসম্মত অধিক পুষ্টিসমৃদ্ধ হওয়ার খুব জরুরি। এ ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করতে হবে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে। শিশুর পুষ্টি নিশ্চিতকল্পে পুষ্টিবিদ নিয়োগ দিতে হবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, বিভিন্ন হসপিটাল, বিভিন্ন কমিউনিটিভিত্তিক- পুষ্টিবিদ নিয়োগ দিতে হবে। শিশু খাদ্য নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য সম্মত উপায়ে শিশু খাবারের সঠিক মান মাত্রা ঠিক রাখতে উপযোগী পরিবহণ ব্যবস্থাটা খুব জরুরি। জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, গ্রাম, ওয়ার্ড, গ্রাম পর্যায়ে স্থানীয় সরকারের বাজেট বরাদ্দ রাখতে হবে এবং অব্যাহতভাবে নিয়মিত মনিটরিং এবং গুরুত্বপূর্ণ এ কাজে গাফলতিতে কঠোর আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। উঠান বৈঠক করতে হবে।