আর মাত্র ৩০ দিন বাকি। আগামী ২০ অক্টোবর শুক্রবার ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বড় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হবে। ২৪ অক্টোবর দশমী বিহিত পূজা দিয়ে শেষ হবে দুর্গাপূজার উৎসব। প্রতি বছর শরৎ ঋতুতে সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গা উৎসব পালিত হয়। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে দুই থেকে তিন মাস আগে থেকেই কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের বৈদ্যের বাজার নামক স্থানে প্রতিমা কারিগররা প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেন। ইতিমধ্যে তারা কয়েকটি স্পটে পাঁচ শতাধিক প্রতিমার কাজ শেষ করেছেন। এর মধ্যে দূর-দূরান্ত থেকে আগত পূজা প্রস্তুত কমিটির লোকজন বেশ কিছু প্রতিমার বায়না দিয়েছেন বলে ভাস্কররা জানিয়েছেন। এছাড়া প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতিমা কিনতে কিংবা দর্শন করতে ভিড় করছেন। ক্রেতাদের সুবিধার্থে ১৫ বছর ধরে এ এলাকায় প্রতিমার হাট বসান কারিগররা।
বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বৈদ্যের বাজার সংস্কৃত টোল বিদ্যালয়ের উত্তর-দক্ষিণ ও পশ্চিম, স্মার্ট ক্লাবের পাশে, বৈদ্যর বাজারের পাশে ৪টি স্পটে প্রায় পাঁচ শতাধিক দুর্গার মূর্তি, কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্ণী, সরস্বতী, মহিষাসুর ও মহিষের মুন্ডসহ তাদের বাহন মূর্তি তৈরি করেছেন কারিগররা। অনেক জায়গায় মূর্তিগুলোকে আলাদা, আবার কিছু মূর্তি এক ফ্রেমে রেখেছেন। প্রায় মূর্তিগুলোতে মাথা লাগিয়ে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। আবার কিছু মূর্তি মাথা ছাড়াই রেখেছেন।
ভাস্করা জানান, দুই মাটি হয়ে গেছে। মূর্তিগুলো রোদে শুকিয়ে গেলে আবার এর উপর মাটি দেওয়া হবে। এভাবে তিনবার মাটি দিয়ে শুকানোর পর হাতের তুলির পরশে রং করা হয়। তারপর মূর্তিগুলোকে বিভিন্ন অলংকার দিয়ে সাজিয়ে প্রকৃত রূপ দান করে বিক্রির উপযোগী করা হয়। এক একটি দুর্গার ফ্রেমসহ মূর্তির ধরন অনুযায়ী ১৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এসে এসব প্রতিমা কিছুটা সস্তা দরে কিনে নিয়ে যান।
কারখানার মালিক মিতু মালাকার (২৬) বলেন, তার কারখানায় ৫ জন ভাস্কর কাজ করেন। তিনি এবারে ২৫টি দুর্গা প্রতিমা তৈরির কাজ হাতে নিয়েছেন। এর মধ্যে ১০টি প্রতিমার কাজ অর্ধেক হয়েছে। প্রতিজন কারিগরকে মৌসুমে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা মজুরি দেন।
কারখানার মালিক সন্তোষ (৪০) বলেন, ৪০ বছর আগে তিনি ভারতে গিয়ে সেখানকার কারিগরদের প্রতিমা তৈরি দেখে উৎসাহিত হন। প্রথমে সরস্বতী প্রতিমা তৈরি করেন। আস্তে আস্তে দুর্গা প্রতিমা তৈরি করার চেষ্টা করেন। তার প্রতিমা দেখে মুগ্ধ হয়ে অনেকে তাকে উৎসাহ যোগান। এরপর থেকে নিয়মিত প্রতি বছর বিভিন্ন মন্দিরে গিয়ে প্রতিমা তৈরি করে আসছেন। এক একটি প্রতিমা তৈরি করতে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়। গত ৪ বছর ধরে তিনি আর বাইরে প্রতিমা তৈরি করতে যান না। বাড়ির পাশে প্রতিমা তৈরির কারখানা দিয়েছেন। সেখানে প্রতিমা তৈরি করে বিক্রি করেন।
শুধু তিনি নন, সেখানে তপন মালাকার, নরেশ মালাকার, বিধান, বিপিন, সুদয়, অজয়, জগদীশ চন্দ্রসহ বেশকিছু মালিক ও কারিগর মৌসুম এলেই শত শত প্রতিমা তৈরি করেন। প্রতিমা তৈরি করে বিক্রি করাই তাদের পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। সব মিলে প্রতি বছর দুর্গা পূজার আগে বৈদ্যের বাজার এলাকায় প্রতিমা তৈরির মহোৎসব শুরু হয়।
এ ব্যাপারে ছিনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাদেকুল ইসলাম নুরু জানান, বৈদ্যেরবাজার দুর্গা প্রতিমা তৈরির কারখানা থেকে প্রতিমা কারিগররা কয়েক লাখ টাকা আয় করেন। আবার জিনিসপত্রের দাম লাগামহীন হওয়ায় কখনো তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। বছরের প্রতিটি দিনই এসব কারখানায় বিভিন্ন ধরনের প্রতিমা বিক্রি করছেন কারখানার মালিকরা। তাই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে কারিগররা কর্মমুখী হয়ে আরও লাভবান হবেন।