সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

দাগনভূঞায় জৈব সারে স্বাবলম্বী মারজাহান-তুহিন দম্পতি

দাগনভূঞা (ফেনী) প্রতিনিধি
  ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
দাগনভূঞায় জৈব সারে স্বাবলম্বী মারজাহান-তুহিন দম্পতি

ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার উৎপাদন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার ইয়াকুবপুর ইউনিয়নের মারজাহান আক্তার ও তুহিন ভূঞা দম্পতি। তাদের দেখাদেখি এখন সেখানকার আরও অনেক নারী এগিয়ে এসেছেন কেঁচো সার উৎপাদনে। জৈব এই সার মাটিকে তাজা করে। এর কোনো ক্ষতিকর দিক নেই। আর দামেও বেশ সস্তা। তাই কৃষকেরও পছন্দ এই সার। বাড়িতে বসেই কেঁচো ব্যবহার করে জৈব সার তৈরি করছেন নারী উদ্যোক্তা মারজাহান আক্তার। নিজেদের জমির চাহিদা মিটিয়ে এখন এই সার বিক্রি করছেন উপজেলার বিভিন্ন জায়গায়। দিন দিন বাড়ছে এ সারের চাহিদা। মাসে প্রায় অর্ধলাখ টাকা আয় করছেন এ দম্পতি।

জানা যায়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় ২০২১ সালে তিনটি রিং দিয়ে কেঁচো সারের উৎপাদন শুরু করেন মারজাহান ও তার স্বামী তুহিন ভূঞা। তারপর ধীরে ধীরে বাড়িয়েছেন উৎপাদনের পরিধি। বাড়ির উঠানে বিশাল টিনের শেড উঠিয়ে বসিয়েছেন ১৪টি বড় ও ১৬টি ছোট রিং। সার উৎপাদনের জন্য প্রতিটি হাউজে ৪০ মণ গোবর, শাকসবজির উচ্ছিষ্টাংশ ও কলাগাছের টুকরার মিশ্রণ করে তাতে ১০ কেজি কেঁচো ছেড়ে দেওয়া হয়। তারপর হাউজ ঢেঁকে দেওয়া হয় চটের বস্তা দিয়ে। এভাবে এক মাস ঢেকে রাখার পর তৈরি হয় ভার্মি কম্পোস্ট সার। এভাবে প্রতি মাসে মারজাহান দম্পতি সব মিলিয়ে ৩ থেকে ৪ টন সার উৎপাদন করে থাকেন। প্রতি কেজি সারের বিক্রয়মূল্য খুচরা ১৫ টাকা। খরচ বাদে প্রতি মাসে মারজাহান দম্পতির আয় হয় প্রায় অর্ধলাখ টাকা। এছাড়াও গোবর দিয়ে তৈরি করেছেন বায়োগ্যাস, যা নিজের চাহিদা মিটিয়ে অন্যদেরও চাহিদা মেটাচ্ছেন।

নারী উদ্যোক্তা মারজাহান জানান, স্বামীর রোজগারে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছিল। দাগনভূঞা কৃষি বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করেন জৈব সার তৈরি। প্রথমে একটি শেডে ১২টি, পরে একটি ছাপড়া তৈরি করে সেখানে আরও ১৪টি হাউস নির্মাণ করেন। প্রতি মাসে এখান থেকে প্রায় ৩ থেকে ৪ টন জৈব সার তৈরি হয়।

তিনি আরও জানান, এলাকার চাষিরা তার কাছ থেকে সার নিয়ে চাষাবাদ করছেন। খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তার এই জৈব সার। উপজেলার বিভিন্ন স্থানেও যাচ্ছে। এ কাজে তাকে পুরোপুরি সহযোগিতা করেন স্বামী তুহিন ভূঞা। প্রায় অর্ধলাখ টাকা মাসে আয় হচ্ছে। স্বামী-সন্তান নিয়ে অনেক ভালো আছেন। এখন অনেক নারী তার কাছ থেকে জৈব সার তৈরি করা শিখতে আসছেন। উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে চেষ্টা করেন সবচেয়ে ভালো মানের ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনের। সার যত ঝরঝরে ও গন্ধমুক্ত হবে তত মান ভালো হবে।

কৃষক আবু হোসেন জানান, বাজারে রাসায়নিক সারের তুলনায় জৈব সারের দাম কম, তাই জমিতে জৈব সার ব্যবহার শুরু করেছেন। ভালো ফলও পাচ্ছেন। কারণ এই সার ব্যবহার করে জমির উর্বরতা বাড়ছে, মাটির ক্ষতি হচ্ছে না। ফলনও ভালো পাচ্ছেন। উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি অফিসার পুলক চন্দ্র দাস বলেন, 'মারজাহানের আগ্রহের কারণেই তার পাশে থেকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছি। মাঝে মধ্যেই তার খামারে গিয়ে পরামর্শ দিয়ে আসি। মারজাহানের দেখাদেখি এখন অনেকেই এই জৈব সার উৎপাদন শুরু করেছে।'

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মহিউদ্দিন মজুমদার জানান, 'ভার্মি কম্পোস্ট সার ফসল উৎপাদনে খুবই উপযোগী। এছাড়া বাণিজ্যিকভাবে এ সার উৎপাদন করে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছে। আমরা কৃষক পর্যায়ে এ সারের ব্যবহার বাড়াতে কাজ করছি। সেই সঙ্গে উৎকৃষ্টমানের ভার্মি কম্পোস্ট সার প্রস্তুত করতে খামারিদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে