মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদ-বৈশাখের ছুটি শেষে কর্মস্থলমুখী মানুষ

স্বদেশ ডেস্ক
  ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
পদ্মাসেতুর মাদারীপুরের শিবচর অংশে ঈদের ছুটি শেষে ভোগান্তি ছাড়াই গণপরিবহণে, ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটর সাইকেলে ঢাকায় ফিরছেন যাত্রীরা -যাযাদি

প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদুল ফিতর ও বাংলা নববর্ষ উদযাপন শেষে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে কর্মজীবী মানুষ। পদ্মাসেতু থাকায় দক্ষিণের জেলাগুলোর মানুষ স্বস্তিতে কর্মস্থল ঢাকায় ফিরতে পারছেন। এদিকে, পাটুরিয়া ও আরিচা ফেরিঘাট এলাকায় কর্মস্থল ঢাকায় ফেরা যাত্রীদের ঢল নামে। প্রতিনিধিদের পাঠানো বিস্তারিত খবর-

শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি জানান, পদ্মাসেতু থাকায় শিবচর থেকে ঢাকা যেতে এখন এক ঘণ্টার বিষয়। তাই ঈদের ছুটি শেষে কোনো ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই গণপরিবহণে, ব্যক্তিগত গাড়িতে ও মোটর সাইকেলে ঢাকায় ফিরতে দেখা গেছে যাত্রীদের। ঈদের ছুটির পর সোমবার থেকে সব অফিস-আদালত খুলেছে। তাই কর্মস্থলে যোগ দিতে সকাল থেকেই ট্রেন ও বাসে করে অনেকেই ঢাকায় ফিরছেন।

মঙ্গলবার সরেজমিন এক্সপ্রেসওয়ের পাঁচ্চর গোল চত্বরে দেখা যায়, যাত্রীবাহী বাসসহ নানা যানবাহনে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ফিরছে মানুষ। এক্সপ্রেসওয়েতে পরিবহণের চাপ কিছুটা লক্ষ্য করা গেলেও পদ্মাসেতুর টোলপস্নাজায় তেমন কোনো যানজট চোখে পড়েনি। তবে মোটর সাইকেলের চাপ ছিল চোখে পড়ার মতো। স্বাভাবিকভাবেই পরিবহণ সেতু পার হচ্ছে। এদিন ঢাকা থেকে অনেককে গ্রামের বাড়ি আসতেও দেখা যায়।

শিবচর হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঈদের ছুটির শুরু থেকে ঈদে পরবর্তী সাত দিন পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে হাইওয়ে পুলিশের বিশেষ তদারকি থাকছে। ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফিরতে যেন ভোগান্তিতে পড়তে না হয়, সেদিকে বিশেষ নজর রয়েছে হাইওয়ে পুলিশের।

যাত্রী ও চালকরা জানান, এবার ঈদ ভোগান্তি আর ঝামেলা ছাড়াই শেষ করে ঢাকায় ফিরতে পেরেছেন তারা। পদ্মা সেতু তাদের জীবনের যোগাযোগের আমূল পরিবর্তন করে দিয়েছে।

এদিকে এক্সপ্রেসওয়ের বিভিন্ন পয়েন্টে যানবাহনের অপেক্ষায় কর্মস্থলে ফেরা মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক যানবাহন না থাকায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন তারা। এ ছাড়া বাড়তি ভাড়া নিয়ে অভিযোগ করেন যাত্রীরা। ঈদ বকশিশের কথা বলে বাসগুলো বাড়তি টাকা আদায় করেছে বলে জানান তারা।

এক্সপ্রেসওয়ের পাঁচ্চর বাসস্ট্যান্ডে গাড়ির অপেক্ষায় থাকা ঢাকার যাত্রী আল আমিন ঢালী জানান, বাস পাচ্ছেন না। পেলেও অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করা হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ২০০ টাকার ভাড়া ৩০০ টাকা চাচ্ছে।

ভাঙ্গা থেকে আসা নজরুল ইসলাম জানান, ঈদে বাড়ি ফেরার জন্য লঞ্চে করে পদ্মা নদী পার হতেন। ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লঞ্চে বসে থাকতে হয়েছে। এখন আর ঝামেলা নেই। সহজেই অল্প সময় ঢাকা থেকে বাড়িতে ঈদ করতে আসতে ও চলেও যেতে পারছেন।

শিবচর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাকিল আহম্মেদ জানান, ঈদের ছুটি শেষে রাজধানীতে ফিরছে সাধারণ মানুষ। গাড়ির চাপ থাকলেও এক্সপ্রেসওয়েতে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তার জন্য হাইওয়ে পুলিশের টিম নিয়মিত মহাসড়কে টহল দিচ্ছে। গাড়ির অতিরিক্ত গতিরোধে এক্সপ্রেসওয়ের বিভিন্ন স্থানে হাইওয়ে পুলিশের তৎপরতা রয়েছে।

শিবালয় (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, পাটুরিয়া ও আরিচা ফেরি-লঞ্চ ঘাট এলাকায় মঙ্গলবার সকাল থেকে কর্মস্থলে ঢাকায় ফেরা মানুষের ঢল নামে। লঞ্চ ও ফেরিতে গাদাগাদি করে পদ্মা-যমুনা নদী পাড়ি দিয়ে পাটুরিয়া ঘাটে আসছেন তারা। অনেকেরই মঙ্গলবার ঈদের ছুটি শেষ। বুধবার থেকে অফিস করতে হবে। অনেক গার্মেন্টস বুধবার থেকে খোলার কারণে যাত্রীরা আগেভাগেই বাড়ি থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঢাকায় ফিরে যাচ্ছেন। ঈদ উপলক্ষে তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে গ্রামের বাড়িতে ছুটে গিয়েছিলেন। কর্মস্থলে ঢাকায় যাওয়ার জন্য এখন লঞ্চ ও ফেরিতে গাদাগাদি করেই দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার কর্মজীবী মানুষ নদী পাড়ি দিয়ে পাটুরিয়া ও আরিচা ঘাটে আসছেন।

মঙ্গলবার পাটুরিয়া ও আরিচা ঘাট এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কর্মজীবী হাজার হাজার মানুষ পরিবার নিয়ে লঞ্চ ও ফেরিতে গাদাগাদি করে নদী পাড়ি দিয়ে পাটুরিয়া ও আরিচা ঘাটে আসছেন। ঘাটে অতিরিক্ত যাত্রীদের চাপের কারণে এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজ বাস মালিক শ্রমিক যাত্রীদের কাছে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্বাভাবিক সময়ে যেসব বাসের ভাড়া পাটুরিয়া থেকে নবীনগর পর্যন্ত ১২০ টাকা, সেগুলো এখন নিচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। পাটুরিয়া থেকে গাবতলীর ভাড়া স্বাভাবিক সময়ে নেওয়া হয় ১৮০ টাকা। এখন যাত্রীদের কাছে থেকে নেওয়া হচ্ছে ৩০০টাকা করে। কেউ অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার ব্যাপারে প্রতিবাদ করলে লাঞ্ছিত হতে হচ্ছে বাস শ্রমিকদের হাতে।

শিবালয় বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আপেল মুন্সী জানান, একশ' টাকার বেশি জিপি নেওয়ার নিয়ম নেই। অতিরিক্ত জিপির নামে চাঁদা নেওয়া হলে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।

আরিচা অফিসের বিআইডবিস্নউটিসির ডিজিএম খালেদ নেওয়াজ জানান, মঙ্গলবার সকাল থেকে ঢাকায় ফেরা যাত্রীদের পাটুরিয়া ও আরিচা ঘাটে ঢল নামে। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুটে ১৫টি ও আরিচা-কাজীরহাট-নৌরুটে ৫টি ফেরি দিয়ে যাত্রী, প্রাইভেটকার ও জরুরি পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার করা হচ্ছে।

শিবালয় থানার ওসি আব্দুর রউফ সরকার জানান, অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার ব্যাপারে কেউ অভিযোগ করেননি। অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে