সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে ৩ নিহতদের লাশ কবর থেকে উত্তোলনে অনীহা প্রকাশ করেছেন তাদের স্বজনরা। এজন্য সংবাদ সম্মেলনও করেন তারা।
রোববার সকালে খুকনী ইউনিয়নে নিহত ইয়াহিয়ার নিজ বাড়িতে এ সংবাদ সম্মেলন করেন ইয়াহিয়ার স্ত্রী শাহানা খাতুন। এছাড়া নিজ নিজ বাড়িতে মাদ্রাসাছাত্র হাফেজ সিয়াম হোসেনের বাবা আব্দুল কদ্দুস ও কলেজ ছাত্র শিহাব হোসেনের মা শাহনাজ বেগমও সংবাদ সম্মেলন করেন।
এ সময় নিহত ইয়াহিয়ার স্ত্রী শাহানা খাতুন বলেন, 'গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আমার স্বামী ইয়াহিয়া পুলিশের গুলিতে নিহত হন। এই ঘটনায় আমি মামলা করতে ইচ্ছুক ছিলাম না। কিছু লোক এসে আমাদের পুরো পরিবার ও সংসারের দায়িত্ব নেন। তারপর তারা আমার কাছ থেকে একটা সই নেন। এরপর মুখে মুখে জানতে পারি তারা এই সই দিয়ে থানায় এজাহার দিয়েছেন। মামলার বিষয় আমি কিছুই জানি না। আমার স্বামীর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য উত্তোলন করতে দেব না। নতুন করে আর শোক নিতে পারব না। স্বামী হারিয়ে এমনিতে আমরা দিশেহারা। এখন মরা মানুষকে নিয়ে টানাটানি শুরু হয়েছে। আমার চাওয়া একটাই, আমার স্বামী যেন শহীদের মর্যাদা পান।'
মাদ্রাসাছাত্র হাফেজ সিয়াম হোসেনের বাবা বলেন, 'আমার ছেলে থানার সামনে পুলিশের গুলিতে মারা যান। খবর পেয়ে গিয়ে দেখি ছেলের লাশ হাসপাতালে। ওখান থেকে আমার ছেলের লাশ নিয়ে এসে দাফন করি। কে বা কারা এ বিষয় মামলা করেছে, মামলার বাদী কে তাকেও আমরা চিনি না। আমাদের কাছে থেকে মামলা বিষয়ে অনুমতি নেয়নি কেউ। আমার ছেলের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য উত্তোলন করবে বলে পুলিশ এসে বলে গেছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য উত্তোলন করতে দেব না। আমরা তো মামলা করিনি, লাশ কেন তুলবে। এ মামলার প্রত্যাহার চাই।'
অন্যদিকে কলেজ শিক্ষার্থী শিহাব হোসেনের মা বলেন, আমার সন্তান শিহাব হোসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে মারা যান, আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। সেজন্য আমরা পুরো পরিবার চরমভাবে কষ্ট পাচ্ছি। এর জন্য মামলা দিয়ে কোনো নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি আমরা করতে চাই না। কে মামলা দিয়েছে তাকে আমরা চিনি না। আমরা কাউকে মামলা দেওয়ার অনুমতি দেইনি। তাই মামলা চালানোর কোনো প্রশ্নই আসে না। আমি চাই এ মামলা প্রত্যাহার করা হোক। অহেতুক নিরপরাধ লোকদের আসামি করে শহীদ সন্তানের আত্মাকে কষ্ট দিতে চাই না, আর আমিও পাপের ভাগিদার হতে চাই না। মৃত দেহ যেন কাটাছেঁড়া না করা হয়। যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে এ স্বাধীনতা, তাদের প্রতি যেন যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা দেখানো হয়। এবং আমাদের পরিবারের চলার মতো ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।'
সংবাদ সম্মেলনে নিহতের স্বজন ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।