সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

কালের আবর্তনে বিলীনের পথে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প

পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি
  ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
কালের আবর্তনে বিলীনের পথে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প
খুলনার পাইকগাছায় মাটির তৈরি তৈজসপত্র -যাযাদি

খুলনার পাইকগাছায় মৃৎশিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। মৃৎশিল্প এমন একটি মাধ্যম যা মাটিকে নিয়ে আসে মানুষের কাছাকাছি। মৃৎশিল্প বলতে মাটি দিয়ে তৈরি যাবতীয় ব্যবহার্য এবং সৌখিন শিল্পসামগ্রীকেই বোঝায়। শিল্প ও সংস্কৃতির বিভিন্ন মাধ্যমের মধ্যে মৃৎশিল্প অতি প্রাচীন। মাটির সঙ্গে মানুষের জীবন ঘনিষ্ঠভাবেভাবে জড়িয়ে আছে। মাটি যখন শিল্পের ছোঁয়া পায় তখন উঠে আসে ঘরে, সাজিয়ে তোলে আমাদের অন্দরমহল। সেই মাটির তৈরি সামগ্রী যখন ব্যাপক প্রসার লাভ করে তখন তার নাম হয় মৃৎশিল্প। কিন্তু কালের আবর্তনে বিলীনের পথে ঐতিহ্যবাহী এই মৃৎশিল্প। তবে পূর্বপুরুষের এই পেশা এখনো ধরে রেখেছেন কেউ কেউ।

খুলনার পাইকগাছায় মাটির তৈরি হাড়ি-পাতিল, থালা-বাসন, ফুলের টব, মাটির ব্যাংক, আগরদানি, মোমদানি, প্রদীপদানি, বাচ্চাদের খেলনাসহ আরও অনেক ধরনের তৈজসপত্র দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে মাটির তৈরি এসব ব্যবহার্য সামগ্রীর চাহিদা দিন দিন কমে যাচ্ছে, সে কারণে বংশানুক্রমে পাওয়া এ পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন মৃৎশিল্পীরা। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের অসঙ্গতি আর জীবনমান উন্নয়নের জন্য ক্রমশ অন্য পেশার দিকে ঝুঁকে পড়ছেন তারা। এমনকি মাটির তৈরি তৈজসপত্রের পর্যাপ্ত চাহিদা না থাকায় নতুন করে এ পেশায় কেউ প্রবেশ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

উপজেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, এ পেশার সঙ্গে জড়িতদের অধিকাংশই হিন্দু সম্প্রদায়ের। আবার কেউ কেউ জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের জন্য এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করছেন।

উপজেলার বোয়ালিয়া পাল পাড়ার পাল বলেন, 'বাপ-দাদার জাত ব্যবসা ধরে রাখার জন্য আমি ৩০ ধরে বছর এ পেশায় আছি। পরিবারের আর কেউ এই পেশায় আসতে চাচ্ছে না। দিন দিন মাটির তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদাও কমছে, বর্তমানে স্যানিটারি ল্যাট্রিনের চাক বা রিং বা কুয়ার রিং তৈরি করছি।' মৃৎশিল্পী পাল বলেন, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ পেশার শিল্পীদের বাঁচিয়ে রাখতে এখনই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। দেশের বিভিন্ন স্থানে মেলার ও প্রদর্শনীর আয়োজন করে মাটির জিনিসপত্রের প্রয়োজনীয়তা জনসাধারণের কাছে তুলে ধরা দরকার। তা না হলে মৃৎশিল্পীদের স্থান হবে শুধুই ইতিহাসের পাতায়।

পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন, মৃৎশিল্পীদের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, সমাজসেবা অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন অধিদপ্তরের মাধ্যমে তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া ও ঋণদান কর্মসূচিসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এসব কর্মসূচি আরও বেগবান করার চেষ্টা করবে উপজেলা প্রশাসন। তাতে মৃৎশিল্পে অনেকের আগ্রহ বাড়বে বলে আশা করছেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে