বাংলাদেশের প্রাচীন পৌরসভাগুলোর মধ্যে একটি হলো ঝালকাঠি পৌরসভা। ২০০০ সালে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হয় এটি। প্রথম শ্রেণির এই পৌরসভা চত্বরে গিয়ে দেখা যায় খোলা গ্যারেজে দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে কোটি কোটি টাকা মূল্যের সরকারি ২২টি বিভিন্ন ধরনের গাড়ি। যার আনুমানিক মূল্য ৩ কোটি টাকার অধিক। এর মধ্যে ভারী ট্রাক, রোলার, লোডার, ডাবল কেবিন পিকাপ, মাইক্রোবাস, কার ক্যারিয়ার, ডাম্পার ট্রাক, বীম লিফটার রয়েছে। যার বেশির ভাগই অকেজো। মেরামতের নেই কোনো বরাদ্দ, নিলামে রয়েছে আইনগত বাধা। এমন অবস্থা সৃষ্টিতে বিগত মেয়রদের খামখেয়ালিপনাকেই দায়ী করছেন পৌর কর্মকর্তাদের অনেকে।
গণমাধ্যমে নাম প্রকাশ না করার শর্তে যানবাহন শাখায় কর্মরত অনেকেই জানান, 'এই পৌরসভার সাবেক মেয়রদের আমলে তাদের গাফিলতির কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে নতুন নতুন গাড়িগুলো। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গাড়ি নষ্ট হয়েছে গত ৮ বছরে। সদ্য বিদায়ী মেয়র লিয়াকত আলী তালুকদার গাড়িগুলো স্টার্ট করার মতো তেলটুকুও বরাদ্দ দিতেন না। অনেক মেশিন ও গাড়ির মবিল ৮ বছরেও পরিবর্তন করেননি। এ খামখেয়ালিপনাই কোটি টাকার সরকারি গাড়ি ধ্বংসের মূল কারণ।
পৌর এলাকার প্রবীণ নাগরিক সাবেক কাউন্সিলর বীর মুক্তিযোদ্ধা দুলাল সাহা বলেন, 'পুরোপুরি নষ্ট গাড়িগুলো নিলাম করে দেওয়া উত্তম। নচেৎ ভবিষ্যতে খোলা গ্যারেজে রাখা গাড়ির ইঞ্জিনগুলোও চুরি হওয়ার
\হসম্ভাবনা রয়েছে। আর আংশিক মেরামতের উপযোগী যানবাহনগুলো বরাদ্দ এনে মেরামত করে সচল রেখে রেজুলেশন করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে পারটাইম ভাড়া দেওয়া উচিত। তাহলে গাড়িগুলো সচল থাকবে।
এ পৌরসভার যানবাহন শাখার দায়িত্বরত কর্মকর্তা উপসহকারী প্রকৌশলী নাজমুল হাসান বলেন, 'বেশির ভাগ গাড়ি মেরামতের পুরোপুরি অযোগ্য। আর যেসব গাড়ি আংশিক নষ্ট রয়েছে সেগুলো বিগত মেয়ররা মেরামত না করে বছরের পর বছর খোলা গ্যারেজে ফেলে রাখায় চুরি হয়ে গেছে ব্যাটারিসহ অনেক যন্ত্রাংশ। এর বাইরে কিছু যানবাহন আছে যা হালকা মেরামত করলে চলাচলের উপযোগী করা সম্ভব। বর্তমানে মাত্র দুটি ট্রাক এবং তিনটি রোলার চলমান আছে, যা পৌরসভার কার্য সম্পাদনের জন্য মোটেই যথেষ্ট নয়।
পৌর নাগরিক প্রশান্ত দাস হরি বলেন, 'যথাসময়ে নিলাম না করায় রাষ্ট্রের অর্থে নতুন ক্রয় করা কোটি কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। এদিকে সরকারি সম্পদ এভাবে নষ্ট হওয়ায় অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশ। সামান্য ত্রম্নটির কারণে যে গাড়িগুলো অকেজো হয়ে পড়ে আছে সেগুলো মেরামতের মাধ্যমে ব্যবহার উপযোগী করতে হবে। অথবা সরকারি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিলামে বিক্রি করা যেতে পারে। তবে নিলাম প্রক্রিয়ায় যদি দীর্ঘসূত্রতা হয় তাহলে যত দিন বাড়বে ততই এর বিক্রয়মূল্য কমে যাবে। এ কারণে পৌর কর্তৃপক্ষকে দ্রম্নত সিদ্ধান্ত নিয়ে এসব গাড়ি ব্যবহার উপযোগী করতে হবে। অথবা নিলামে বিক্রি করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে অর্থ জমা করতে হবে।
ঝালকাঠি পৌরসভার প্রশাসক (অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক) কাওছার হোসেন বলেন, 'আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর দেখি কিছু গাড়ির বডি পুরোপুরি পচে গেছে, ইঞ্জিন বিকল। ১৭টি গাড়ির রেজিস্ট্রেশন করেননি সাবেক মেয়ররা। সরকারি বিধি অনুযায়ী নিলাম করতে হলে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন থাকতে হবে। অন্যথায় মন্ত্রণালয় থেকে নিলামের অনুমতি পাওয়া যাবে না। এককথায় আইনি জটিলতায় আটকে আছে নিলাম প্রক্রিয়া। আর যেগুলো আংশিক নষ্ট, সেগুলো মেরামত করে সচলের পরিকল্পনা আছে।'