বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২

শিবপুর-লোহাগড়া-ভালুকা ও দৌলতপুর মুক্ত দিবস আজ

নোয়াখালী ও বরুড়ায় পালিত
স্বদেশ ডেস্ক
  ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
শিবপুর-লোহাগড়া-ভালুকা ও দৌলতপুর মুক্ত দিবস আজ
নোয়াখালীতে মুক্ত স্কয়ারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড -যাযাদি

নরসিংদীর শিবপুর, নড়াইলের লোহাগড়া, ময়মনসিংহের ভালুকা ও কুষ্টিয়ার দৌলতপুর মুক্ত দিবস আজ। ১৯৭১ সালের এই দিনে এসব উপজেলা পাক হানাদার মুক্ত হয়।

এদিকে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নোয়াখালী ও কুমিলস্নার বরুড়ায় পালিত হয়েছে হানাদার মুক্ত দিবস। স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত খবর-

শিবপুর (নরসিংদ) প্রতিনিধি জানান, নরসিংদীর শিবপুরে আজ ৮ ডিসেম্বর পাক হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে তৎকালীন শিবপুর থানার 'পুটিয়া'র যুদ্ধই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সফল মুক্তিযোদ্ধা পাক হানাদার বাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধ। এদিনের যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনী কোন রকমে জান বাঁচিয়ে পুটিয়া থেকে পালিয়ে যায়। তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ মহকুমাধীন শিবপুর থানা পূর্ব থেকেই ছিল অত্যন্ত রাজনৈতিক সচেতন এলাকা। বলতে গেলে শিবপুর ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের অভয়ারন্য। যুদ্ধের শুরু থেকে শেষপর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধারা পাকহানাদার বাহিনীকে রেখে ছিল তটস্থ। দেশের সকল এলাকার মতো নরসিংদী জেলা শিবপুর থানায় ও ডিসেম্বর মাসে পাক বাহিনীর উপর মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ তীব্রতর হয়। ৮ ডিসেম্বর যুদ্ধকালীন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান ফটিক মাস্টার ও বেঙ্গল রেজিমেন্টের বীর সেনা মজনু মৃধার নেতৃত্বে সম্মিলিত এফ এফ ৬২ জনের মুক্তিযোদ্ধার দল তাদের নেতৃত্বে ভোর ৪টায় পাকবাহিনী পুটিয়া সংলগ্ন ক্যাম্পে চর্তুমুখী আক্রমণ চালায়। প্রচন্ড গোলাগুলির পর মুক্তিযোদ্ধারা দখল করে নেয় পাক বাহিনীর ক্যাম্প। ৮ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনীরা নরসিংদীর অভিমুখে পালিয়ে যায় ও ওই দিনে মুক্ত হয় শিবপুর। শিবপুর হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. ফারজানা ইয়াসমিন বলেন, ৮ ডিসেম্বর শিবপুর উপজেলাবাসীর জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন। এই দিনে হানাদার মুক্ত হয় শিবপুর। দিবসটি গুরুত্বসহকারে পালনের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু ছালেক রিকাবদার বলেন, ৮ ডিসেম্বর আমাদের শিবপুর মুক্ত দিবস। আমরা বীর মুক্তিযোদ্ধারা ওইদিন জীবন বাজি রেখে শিবপুরকে হানাদার মুক্ত করেছি। দিবসটি উদযাপনের জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধারা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন।

লোহাগড়া (নড়াইল) প্রতিনিধি একাত্তরের নভেম্বর মাসের শুরুতেই নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার অধিকাংশ এলাকা পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত হয়েছিল। তবে লোহাগড়া মুক্তির স্বাদ পায় ৮ ডিসেম্বর। সেদিন লোহাগড়ার বীর মুক্তিযোদ্ধারা লোহাগড়া থানায় গেরিলা আক্রমণ চালায়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পর্যুদস্ত করে উড়িয়ে দেয় লাল সবুজের পতাকা। এরপরই স্বতঃস্ফুর্ত বিজয় উলস্নাসে রাস্তায় নেমে আসে হাজার হাজার মুক্তিপাগল জনতা। জয় বাংলা স্স্নোগানে মুখরিত হয়ে পড়ে লোহাগড়ার রাস্তাঘাট। নভেম্বরের শুরুতে লোহাগড়ার বিভিন্ন স্থান থেকে পরাজয়ের পর স্থানীয় রাজাকাররা থানায় আশ্রয় নেয়। এ জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ও নড়াইল-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শরীফ খসরুজ্জামানের উপস্থিতিতে ২ ডিসেম্বর নোয়াগ্রাম ইউনিয়নের আড়পাড়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম বাবু মীরের বাড়িতে এক গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে গ্রম্নপ কমান্ডার ইমান আলী, ওয়ালিয়ুর রহমান, নূর মিয়াসহ ৩০ থেকে ৩৫ জন গেরিলাযোদ্ধা উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে মাকড়াইলের বীর মুক্তিযোদ্ধা কবির হোসেনের নেতৃত্বে ৪০ থেকে ৪৫ জন মুক্তিযোদ্ধার দল আরেক গোপন বৈঠকে লোহাগড়া থানা আক্রমণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্ত মোতাবেক, ৮ ডিসেম্বর ফজরের আজানের সাথে সাথে মুজিব বাহিনীর প্রধান শরীফ খসরুজ্জামানের নেতৃত্বে দেড় শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা লোহাগড়া থানা আক্রমণ করেন। ৪ ঘণ্টাব্যাপী যুদ্ধ শেষে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। এদিকে লোহাগড়া মুক্ত দিবস উপলক্ষে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সোমবার (৮ ডিসেম্বর) দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে পতাকা উত্তোলন,র্ যালি, কবর জিয়ারত ও দোয়া মাহফিল এবং আলোচনা সভা।

ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি জানান, ভালুকা ৮ ডিসেম্বর পাক হানাদারমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালে ১৭ এপ্রিল একটি মাত্র রাইফেল ও আটজন সদস্য নিয়ে মুক্তি বাহিনীর একটি গেরিলা দল গঠন মেজর আফসার উদ্দীন। পরবর্তীতে ভালুকা থানা দখল করে ১৫/১৬টি রাইফেল ও প্রচুর গোলাবারুদ সংগ্রহ করেন। আট সদস্যের দলটি পরবর্তীতে প্রায় সাড়ে চার হাজার মুক্তিযোদ্ধার বিশাল বাহিনীতে রুপ নেয়। এফ জে ১১নং সেক্টরের ময়মনসিংহ সদর দক্ষিণ ও ঢাকা সদর উত্তর সাব-সেক্টর অধিনায়ক মেজর আফসার ব্যাটেলিয়ন নামে পরিচিতি লাভ করে। ঐতিহাসিক ওই যুদ্ধের খবর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র হতে ফলাও করে সম্প্রচার করা হয়। এই যুদ্ধের পরে ভালুকা থানা ও বাজার এলাকায় পাক বাহিনীর ক্যাম্পটি শক্তিশালী করা হয়। আফসার বাহিনী যুদ্ধকালীন বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার ভালুকা পাক হানাদার ক্যাম্পে আক্রমণ চালিয়েছে। এছাড়া আমলীতলাযুদ্ধ, বলস্না যুদ্ধ, ত্রিশাল, গফরগাঁও, ফুলবাড়ীয়া, শ্রীপুর, মলিস্নকবাড়ি, মেদুয়ারীসহ বিভিন্ন স্থানে পাকসেনা ও রাজাকারদের সাথে আফসার বাহিনীর অসংখ্য যুদ্ধ হয়। দীর্ঘ ৯ মাসের বিভিন্ন যুদ্ধে ৪৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এ উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি জানান, কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে আজ ৮ ডিসেম্বর মুক্ত দিবস। তৎকালীন দৌলতপুর থানায় পাক হানাদারদের সাথে সবচেয়ে বড় গেরিলা যুদ্ধ সংগঠিত হয় ৯ নভেম্বর থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত টানা তিনদিন ভারত সীমান্তসংলগ্ন আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের ব্যাঙগাড়ি মাঠে। সেখানে চারজন মুক্তিযোদ্ধা এবং দুজন মিত্রবাহিনীর সদস্য শহীদ হন। এ যুদ্ধে প্রায় তিন শতাধিক পাকসেনা নিহত হয়। এরপর ২৬ নভেম্বর পিয়ারপুর ইউনিয়নের শেরপুর মাঠে পাক হানাদারদের সাথে আরেকটি বড় যুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান হাবিব শহীদ হন। এ যুদ্ধে প্রায় শতাধিক পাকসেনা ও প্রায় দুই শতাধিক আলবদর ও রাজাকার নিহত হওয়ার পর পাকসেনা ও রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধাদের তোপের মুখে কোণঠাসা হয়ে পড়ে। এবং প্রাণ বাঁচাতে দৌলতপুর থানার অভ্যন্তরে আশ্রয় নেয়। অবশেষে ৭ ডিসেম্বর রাতের অন্ধকারে পাকসেনারা পালিয়ে কুষ্টিয়ার শহরতলী জগতি ও বটতৈল এলাকায় আশ্রয় নেয়। ১৯৭১ এর আজকের এইদিনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা দৌলতপুরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তোলনের মাধ্যমে দৌলতপুরকে শত্রম্নমুক্ত ঘোষণা করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা রিয়াজুল ইসলাম জানিয়েছেন, যেহেতু সরকারিভাবে দিবসটি পালনের কোনো নির্দেশনা বা বরাদ্দ নেই, তাই আমরা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের পক্ষ থেকে শহীদ রফিকনগরে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্যোগে শহীদ রফিকের কবর জিয়ারত করা এবং ঘরোয়াভাবে আলোচনা সভার আয়োজন করেছি।

স্টাফ রিপোর্টার নোয়াখালী জানান, নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ৭ ডিসেম্বর নোয়াখালী মুক্ত দিবস উদযাপন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে শনিবার সকালে জেলা শহর মাইজদীতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের উদ্যোগে বিজয় শোভাযাত্রা বের করা হয়। পরে মুক্ত স্কয়ারে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এ সময় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা তরিক উল্যাহ জিন্নাহ, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কামাক্ষাস চন্দ্র দাস, শাহ জাফর উল্যাহ রাসেল, সাইফুল ইসলাম রাসেল প্রমুখ।

বরুড়া (কুমিলস্না) প্রতিনিধি জানান, কুমিলস্নার বরুড়ায় ৭ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত দিবস উদযাপন উপলক্ষে বরুড়া উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে বিজয়র্ যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকাল ১০টায় উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে বরুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নু-এমং মারমা মং এর নেতৃত্বে বিজয়র্ যালি বের হয়। শেষে বরুড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের কার্যালয়ে আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি আহমেদ হাসান, বরুড়া থানা অফিসার ইনচার্জ কাজী নাজমুল হক, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নাসরিন সুলতানা তনু, বরুড়া উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা নাসিমা আক্তার, বরুড়া উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হক সর্দারসহ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডারের সদস্য, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের নেতারা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে