মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ও টিলাগাঁও ইউনিয়নে মনু নদীর উভয় তীরে বিশাল আকারের কমপক্ষে ১০টি বালুর স্তূপ রয়েছে। যা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় দু'শতাধিক কৃষক পরিবার। আউশ-আমন আর সবজি ক্ষেত সবই বিনষ্ট হচ্ছে বালুর কারণে। এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক সরেজমিন তদন্তক্রমে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে চিঠি দিয়েছেন।
সরেজমিন মনু নদীর বালুস্তূপ করা এলাকায় গেলে দেখা যায়, বালুস্তূপ নয়, যেন একেক স্তূপ একেক পাহাড়। ২০ থেকে ৩০ ফুট উচ্চতার এসব বালুর পাহাড়ের একেকটার আয়তন ৫ থেকে ১০ একর জায়গা জুড়ে। মনু নদীর টিলাগাঁও ইউনিয়ন অংশে সালন ও গন্ডারগড় এলাকায় এবং হাজীপুর ইউনিয়নের মন্দিরা ও হরিচক এলাকায় বৃহদাকার ১০টি বালুর পাহাড় রয়েছে। স্থানীয় কৃষক কবির মিয়া, আলীম, আশীষ দাস, সজ্জাদ মিয়া, নেপাল, খসরু মিয়াসহ অনেকেই অভিযোগ করেন বলেন, তার কৃষিনির্ভর মানুষ। কৃষিতে তাদের পরিবারের জীবিকা নির্বাহ হয়। ধান ও শীতকালীন সবজি বিক্রি করে বছরে হাজার হাজার টাকা আয় করেন তারা। কিন্তু বালুর স্তূপের কারণে ফসল ও শীতকালীন সবজি চাষে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিগত বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানির সঙ্গে বালু গিয়ে কৃষিজমি বিনষ্ট হয়। এতে আউশ ও আমন চাষ সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয় এবং শীতকালীন সবজি আবাদ করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে মনু নদীর বালু মহালের সাবেক ইজারাদার দীপক দাস ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা মূল্যে (১৪৩০ বাংলা পর্যন্ত) ইজারা নেন। তিনি এসব বালুর ইজারাদার হলেও নেপথ্যে বিগত আওয়ামী লীগের অনেক রাঘব বোয়াল। ফলে দল ও ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে মানুষের জমিতে বালুগুলো স্তূপ করে রাখেন। ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও দীপক দাস বালুগুলো না সরিয়ে জোরপূর্বক কৃষকের জমি দখল করে রাখেন। গত ৫ই আগস্টের পর কিছুদিন ছিলেন গা-ঢাকা দিয়েছিলেন দীপক।
অপরদিকে জমাটবদ্ধ এসব বালু বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসকের কাছে বর্তমান ইজারাদার খালেদ আহমদ একটি লিখিত অভিযোগ করেন। লিখিত অভিযোগে তিনি উলেস্নখ করেন, ১৪৩০ বাংলার ইজারাদার বালু স্তূপ করে রাখায় তিনি ইজারাকৃত স্থান থেকে বালু উত্তোলন ও পরিবহন করতে পারছেন না। এতে তিনি আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
এ ব্যাপারে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মহিউদ্দিন জানান, জেলা প্রশাসক এ ব্যাপারে সরেজমিন তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছেন। তদন্ত করে প্রতিবেদন পাঠানো হবে। পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা তিনি গ্রহণ করবেন।