সরকারি-বেসরকারিভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করতে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হলেও মেহেরপুরের গাংনীতে কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না তামাকের উৎপাদন ও বিপণন। বিভিন্ন তামাক কোম্পানিগুলোর নানামুখী প্রচারণা ও প্রণোদনার কারণে চাষিরা ঝুঁকছেন তামাক চাষে। সবুজের আড়ালে প্রতিটি পাতায় পাতায় নিকোটিন নিয়ে বেড়ে উঠছে একেকটি তামাকের চারা। এদিকে চোখের সামনে তামাক চাষ হলেও তা রোধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না কৃষি বিভাগ, এমনি অভিযোগ সাধারণ চাষিদের।
বেশ কয়েকটি তামাক বিপণন প্রতিষ্ঠানের দেওয়া হিসেব মতে, গাংনীর ৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় রেজিস্ট্রেশনভুক্ত চাষিদের প্রণোদনা ও ক্রয়ের নিশ্চয়তা দেওয়ায় ৪ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে। গেল বছর তামাক আবাদ হয়েছিল ৩ হাজার ৬০০ হেক্টর। অন্য ফসলের চেয়ে লাভজনক হওয়ায় চাষিরা তামাক চাষে কোমর বেধে নেমেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন মাঠে ইতোমধ্যেই রোপণ করা হয়েছে তামাকের চারা। আবার কোথাও তামাক পাতা সঁ্যাকার জন্য তোলা হচ্ছে চুলস্নী। এসব চুলস্নীতে বিভিন্ন ধরনের পলিথিন ও ঝুটকাপড় পোড়ানো হয়। ফলে বিকট গন্ধে বাতাস দুষিত হয়। গেল বছরের তুলনায় এবার বেশি তামাক চাষ হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন চাষিরা। বিভিন্ন তামাক কোম্পানীর লোকজন প্রনোদনা দিয়ে থাকেন। এর মধ্যে রয়েছে কীটনাশক পলিথিন ও নগদ টাকা। চাষিরা তামাক বিক্রি করে ওই টাকা পরিশোধ করে থাকেন। মোটা অংকের টাকার লোভে চাষিরা তামাক কোম্পানীর কথায় তামাক চাষ করছেন।
কুঞ্জনগরের তামাক চাষি রফিকুল ইসলাম জানান, তামাক চাষে লাভ বেশি। মজুরীসহ এক বিঘা জমিতে তামাক চাষে খরচ হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। তামাক ভালো হলে বিঘা প্রতি পাওয়া যায় এক লাখ টাকা। সব বাদ দিয়ে প্রচুর টাকা লাভ হয়। তামাক চাষের প্রয়োজনীয় জিনিস কোম্পানী বহন করে। ফলে তামাক চাষ অত্যন্ত সহজ। কৃষক দাউদ হোসেন জানান, এক কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হয়েছে, সব খরচ ওনাদের। উৎপাদিত তামাক বাজারমূল্য ধরে যা দাম হবে ওনাদের খরচ বাদ দিয়ে বাকি টাকা দিয়ে তারা তামাক নিয়ে যাবে। একই কথা জানালেন শিমুলতলার চাষি মনিরুল ইসলাম। চাষিদের অভিযোগ, কৃষি অফিস তামাক চাষের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করে না।
তামাক চাষ স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ঝুঁকিপূর্ণ এমন প্রশ্নের জবাবে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের চিকিৎসক এমকে রেজা জানান, তামাক নানাভাবে স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। যারা তামাকের পরিচর্যা করে তারাও নানা শারীরিক সমস্যায় ভোগেন। বিশেষ করে হাপানি ফুসফুসে প্রদাহ ও ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রন্ত হন তারা। ইটভাটার নির্গত ধোয়ায় যে পরিমান ক্ষতি, তার চেয়ে ১০গুন বেশি ক্ষতি করে।
গাংনী উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেন জানান, এবার এ অঞ্চলে বেশি তামাক চাষ হচ্ছে। বিভিন্নভাবে তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা চলছে। তামাকের বদলে অন্য ফসল চাষ করার জন্য চাষিদেরকে উদ্বুদ্ধ ও প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। তবুও কিছু তামাক কোম্পানি কৃষকদের প্রভাবিত করছে। তবে অনেকেই তামাকের পরিবর্তে ভুট্টা আবাদে আগ্রহী হয়েছেন। আগামীতে তামাকের আবাদ অনেকটা কমে যাবে।