সোমবার, ০২ জুন ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
মামলা করেও মেলেনি প্রতিকার

হাটহাজারীতে কৃষি বীজাগারের জায়গায় গরুর খামার

হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
  ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
হাটহাজারীতে কৃষি বীজাগারের জায়গায় গরুর খামার

হাটহাজারী উপজেলার ফরহাদাবাদ ইউনিয়ন কৃষি বীজাগার বেদখল করে কৃষি অফিসের জায়গায় গরুর খামার গড়ে তোলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২০১৭ সালে জায়গা দখলের পর কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পায়নি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতনদের অবগত করলেও সাত বছর ধরেই হাতছাড়া ওই জায়গা।

এদিকে উপজেলা কৃষি অফিস ছাড়া পৌরসভাসহ প্রত্যেকটা ইউনিয়নের কৃষি বীজাগার জরাজীর্ণ। ঝুঁকি নিয়ে দুএকটিতে কার্যক্রম চালু থাকলেও বাকিগুলো পরিত্যক্ত। হারাতে বসেছে ভবনের অস্তিত্ব। পরিনত হয়েছে ভূতুড়ে বাড়িতে। পাশাপাশি নাঙ্গলমোড়া, মেখল ইউনিয়নের কৃষি অফিস গিলে খেয়েছে ইউপি পরিষদ। সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মকর্তারা অনেকটা জাযাবরের মতই অর্পিত দায়িত্ব পালন করছেন। দীর্ঘ চার যুগেরও বেশি সময় ধরে এভাবে চলতে থাকলেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কোন ভ্রম্নক্ষেপ নেই।

1

জানা গেছে, ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের কৃষি অফিস জরাজীর্ণ হলেও ঝুঁকি নিয়ে অফিসে বসেই দায়িত্বরত কর্মকর্তা কৃষকদের সেবা প্রদান করতেন। বিগত ২০১৭ সালের দিকে ওই এলাকার কিছু দুর্বৃত্ত অফিসটি জোরপূর্বক দখল করে জরাজীর্ণ ভবন ভেঙে দিয়ে অফিসে থাকা কৃষি উপকরণসহ যাবতীয় কিছু লুটে নেয়। পরবর্তীতে এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ হয়। কিন্তু অভিযোগের তদন্তে কোন সত্যতা পায়নি বলে থানা থেকে রিপোর্ট দিয়ে অভিযোগটি খারিজ করে দেয়। বিষয়টি উপজেলা অফিসার ঊর্ধ্বতনকে অবগত করলেও আজ অব্দি বেদখলেই থেকে যায়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ওই জায়গায় কামাল নামে এক ব্যক্তি গরুর খামার করে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। কামালকে পাওয়া না গেলেও ভবন ভাংচুর, দখল, লুটপাট ও বর্তমানে কামালের গরুর খামারের বিষয়ে যায়যায়দিনকে বিস্তারিত জানান নাম প্রকাশ না করার শর্তে ষাটোর্ধ্ব এক প্রবীণ ব্যবসায়ী। তৎকালিন ইদ্রিস চেয়ারম্যানের আমলে এ ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, ওই জায়গার দক্ষিণ পাশেও একটি সরকারি সোসাইটির জায়গা। তারা কৃষি অফিসের একটি কক্ষও ব্যবহার করতেন। ক্ষমতার দাপট আর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে জায়গাটি পুনরুদ্ধার হয়নি।

এদিকে ফতেপুর ও ধলই ইউনিয়নে দেখা গেছে, উভয় ভবনই পরিত্যক্ত। ফতেপুরে লতিফ পাড়ার প্রবেশ মুখে অবস্থিত ভবনে এক ফার্নিচার ব্যবসায়ী গোডাউন হিসেবে এবং ধলই কাটিরহাট বাজার হাটহাজারী-নাজিরহাট সড়কের পশ্চিম পাশে লাগোয়া ভবন সপ্তাহে দুদিন হাটবারে লক্ষণ নামে ফটিকছড়ি নানুপুর এলাকার এক কামার জরাজীর্ণ ভবন দুটি ব্যবহার করছেন।

উপজেলার মেখল ও নাঙ্গলমোড়া ইউনিয়নে দেখা গেছে, কৃষি অফিসের কোন অস্তিত্ব নেই। অনেক বছর আগেই তা পরিষদ গিলে খেয়েছে। নাঙ্গলমোড়া ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান ফাতেমা বেগমের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানেনই না সেখানে কৃষি অফিসের জায়গা বা অফিস ছিল।

মেখল ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান রাশেদুল আলম বলেন, পরিষদের ভেতরে কৃষি অফিসের জায়গা আছে কিনা সঠিক না জানলেও পরিষদের ভেতরের সব জায়গা পরিষদের নয় সেটা জানেন। উত্তর মাদার্শা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স সংলগ্ন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম রাশেদুল আলমের বাড়ির প্রবেশ মুখেই জরাজীর্ণ ভবন। ঝুঁকি নিয়ে কর্মকর্তারা কৃষকদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

মির্জাপুর চারিয়া এলাকায় হাটহাজার-নাজিরহাট সড়কের পাশে অবস্থিত ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। মাঝে মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে কার্যক্রম চলছে। ভবনের পূর্ব পাশের দেয়াল ঘেঁষেই ছোট্ট একটি বেড়ার ঘরের দেখা মেলেছে। রাউজান উপজেলার এক দিনমজুর পরিবার নিয়ে ঘরটিতে বসবাস করে স্থানীয় হাজি সোলায়মান নামে এক ব্যক্তির মাছের প্রজেক্ট দেখাশুনা করেন।

এদিকে হাটহাজারী পৌরসভা অফিসের চিত্রও একি। উপজেলা অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা নিজ উদ্যোগে কয়েক লাখ টাকা ব্যয় করে কোনরকম সংস্কার করে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। চিকনদন্ডী ও হাটহাজারী উপজেলাধীন সিটি কর্পোরেশন ১ নং দক্ষিণ পাহাড়তলীর অফিসে গিয়ে একই রুপ দেখা গেছে।

অপরদিকে গড়দুয়ারা, শিকারপুর ও বুড়িশ্চর ইউনিয়নে বীজাগারের কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। উপজেলা কৃষি অফিসেও কোন রেকর্ড পাওয়া যায়নি।

পৌরসভা ও ১৪ ইউনিয়নের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ স্ব স্ব ইউনিয়নে বীজাগার সংস্কার এবং যেসব ইউনিয়নে বীজাগার নেই সেসব ইউনিয়নে বীজাগার নির্মাণের দাবি জানান।

উপজেলা কৃষি অফিসার আল মামুন শিকদার বলেন, বিগত দিনের সব অফিসার বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতনকে জানিয়েছেন। ১৭ সালে এলজিইডি কর্তৃক ভবনের বিস্তারিত পাঠানো হয়েছিল। নিজস্ব অফিস না থাকায় কৃষকদের সেবা পৌঁছে দিতে কি পরিমান দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে তা একমাত্র কর্মকর্তারাই জানেন।

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত উপ পরিচালক (শষ্য) ওমর ফারুক বলেন, যেহেতু জায়গা সংক্রান্ত বিষয়, এটা এস্টেট অফিসার ভালো জানবেন।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার নাছির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ফরহাদাবাদের বিষয়টি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে