বৃহস্পতিবার, ০৫ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

থানচিতে দুইজন চিকিৎসক দিয়েই চলছে ৫০ শয্যার হাসপাতাল

ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা
ক্যমুই অং মারমা, বান্দরবান
  ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
থানচিতে দুইজন চিকিৎসক দিয়েই চলছে ৫০ শয্যার হাসপাতাল
বান্দরবানে থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স -যাযাদি

বাইরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন দেখে যে কারোরই মনে হবে এটি একটি আধুনিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র। রয়েছে বিদু্যৎ, পানি সরবরাহ এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন, সৌরবিদু্যতের সুবিধাসহ আধুনিক প্রায় সব ব্যবস্থা। এদিকে এ স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সটিতে সবকিছু থাকার সত্ত্বেও নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য প্রযুক্তিবিদসহ নূ্যনতম জনবল। ফলে অনেকটা অচলাবস্থার মধ্যে রয়েছে হাসপাতালটি। এ যেন 'বাইরে বাবুগিরি ঘরে ভাত জোটে না'।

বলছিলাম ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হওয়া থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের কথা। নানা সংকটের কারণে দুর্গম এলাকায় বসবাস করা এসব মানুষ সঠিক স্বাস্থ্য সেবা পেতে বাধ্য হয়েই বান্দরবান সদরে প্রাইভেটে হাসপাতালমুখী হচ্ছেন।

1

সরেজমিনে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, রোগীশূন্য হয়ে পড়ে আছে শয্যাগুলো। পুরোনো ৩১ শয্যায় শিশুসহ ভর্তি রোগী রয়েছে কয়েকজন। এদের মধ্যে বেশির ভাগই ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু রোগী। এদিকে বর্হিঃবিভাগেও দেখা যায়নি কোন রোগী।

সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, বিশেষজ্ঞসহ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ১২ জন চিকিৎসক, ১৮ জন নার্স ও ৫ জন উপ-সহকারী চিকিৎসকসহ ১০২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকার কথা। কিন্তু কর্মরত আছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ মাত্র দুইজন চিকিৎসক ও ৫ জন নার্স। শূন্য রয়েছে ৪৫ জনের পদ।

এদিকে, ২০২১ সালে সম্প্রসারিত ১৯ শয্যার আধুনিক সুবিধাসংবলিত হাসপাতালে চালু হওয়ার পর থেকে কোনো রোগী ভর্তি হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা জানিয়েছেন। ৪টি কেবিন ও ওয়ার্ডের ১৫টি শয্যায় ধুলা জমেছে। বিছানা থেকে বের হচ্ছে দুর্গন্ধ। ছাদে স্থাপিত বিশাল সৌরবিদু্যতের প্যানেলও বিকল হয়ে রয়েছে পড়ে।

অন্যদিকে, হাসপাতালে রয়েছে শুধু এসিজি, নেবুলাইজার ও ৩টি অক্সিজেন সিলিন্ডার। নেই বায়োকেমিস্ট্রি অ্যানালাইজার, ওটি ও প্যাথলজি, এক্সরে মেশিন ও আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি। এতে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে জটিল রোগের বিভিন্ন চিকিৎসাসেবা। ফলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রেফার করতে হয় জেলা সদর হাসপাতালে।

বাইক দুর্ঘটনায় আহত য়ংরাও ম্রো জানান, 'পায়ে আঘাত পেয়েছি। কিন্তু এ হাসপাতালে এ-ক্সরে মেশিন না থাকায় আমাকে বান্দরবানে রেফার করে দিয়েছে তারা।'

মাংলুং পাড়া থেকে চিকিৎসা নিতে আসা নাংলে খুমী নামে এক রোগী জানান, হাসপাতালের বেডগুলো খুবই নোংরা। তাই বাড়ি থেকে আলাদা কম্বল নিয়ে আসতে হয় এখানে ভর্তি হতে হলে। ওয়ার্ডবয়দের সচরাচর দেখা যায় না এখানে।

হুকু পাড়া থেকে পেট ব্যথা নিয়ে আসা আরেক রোগী অংথাংলিং খুমী জানান, এখানে কার কাছে চিকিৎসা নিবো ডাক্তার নাই, নার্স নাই, নাই যন্ত্রপাতি। তাই অন্যের কাছে ধার দেনা করে জেলা সদরে গিয়ে আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে হয়েছে আমাকে।

থানচি বাজার এলাকা থেকে ম্যালেরিয়া রোগী স্বামী সামশুল আলমকে চিকিৎসা করাতে আসা হাসিনা আক্তার জানান, চিকিৎসক সংকট জেনেও জেলা সদরে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার সামর্থ্য না থাকায় তার স্বামীকে হাসপাতালটিতে ভর্তি করতে হয়েছে।

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, তিনিসহ মোট দুজন চিকিৎসক আছেন হাসপাতালে। কেবল দুজন চিকিৎসক দিয়ে হাসপাতাল চালানো যায় না। কিন্তু রোগীরা যেমন বাধ্য হয়ে ভর্তি হন, তেমনি তারা দুজনে ২৪ ঘণ্টা হাসপাতাল চালাতে বাধ্য হচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, মন্ত্রণালয়সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে লোকবল বাড়ানোর চাহিদাপত্র পাঠালেও মিলছে না কোন সুফল।

তবে স্বাস্থ্য বিভাগের দেখভালের দায়িত্ব পাওয়া বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য আবুল কালাম বলেন, শুধু থানচিতে নয়, প্রায় সব স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসক সংকটসহ পর্যাপ্ত সরঞ্জামের ঘাটতি রয়েছে। তৃনমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে চিকিৎসক ও সরঞ্জামসহ জনবল নিয়োগের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি। ছবির ক্যাপশনঃ বান্দরবানের থানচি উপজেলার ৫০ শয্যা থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের চিত্র।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে