বৃহস্পতিবার, ০৫ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কেশবপুরে কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত বোরো বীজতলা

কাহারোলে বীজতলা রক্ষায় পলিথিনের ব্যবহার
স্বদেশ ডেস্ক
  ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
কেশবপুরে কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত বোরো বীজতলা
কেশবপুরে কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত বোরো বীজতলা

যশোরের কেশবপুরে কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত বোরো বীজতলা। এর ফলে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। এদিকে, দিনাজপুরের কাহারোলে কুয়াশা ও ঠান্ডা থেকে বীজতলা রক্ষায় পলিথিনের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-

কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি জানান, যশোরের কেশবপুরে প্রচন্ড ঠান্ডা বা কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়ে বোরো ধানের বীজতলা ক্ষতির মুখে পড়েছে। তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক কৃষকের বীজতলা লালচে-সাদাবর্ণ হয়ে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ফলে বোরো ধান আবাদ করতে চারা নিয়ে বিপাকে পড়ছেন কৃষকরা। কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়ে বীজতলা লালচে হওয়ার খবর পেয়ে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

1

জানা গেছে, জানুয়ারির শুরু থেকে এ উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র থেকে মাঝারি ধরণের শৈত্যপ্রবাহ। এর সঙ্গে ঘন কুয়াশায় বোরো বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়ে বীজতলায় চারা লালচে বর্ণ ধারণ করে উপরের দিক থেকে শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বীজতলা উৎপাদন নিয়ে অনেক কৃষক বিপাকে পড়েছেন।

উপজেলার মধ্যকুল গ্রামের কৃষক শাহীনুর রহমান বলেন, তার বোরো ধানের বীজতলা তীব্র শীতের কারণে লালচে বর্ণ ধারণ করেছে। বীজতলা স্বাভাবিক ফিরে না এলে বোরো আবাদ নিয়ে বিপাকে পড়তে হবে। কৃষি অফিসের পরামর্শ বীজতলা পরিচর্যা শুরু করা হচ্ছে।

মঙ্গলকোট গ্রামের কৃষক আব্দুল বারী বলেন, তিনি বোরো আবাদের জন্য দুই কাঠা জমিতে বীজতলা করেছেন। কয়েক দিনের শৈত্যপ্রবাহ আর ঘন কুয়াশায় বীজতলা ক্ষতির মুখে পড়েছে। চারাগুলো হলুদ হয়ে গেছে।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে কেশবপুর উপজেলায় বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ হাজার ৪২৫ হেক্টর। এর জন্য ৭২১ হেক্টর বীজতলার প্রয়োজন।

ভারপ্রাপ্ত উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, চলতি বছর ভয়াবহ বন্যার কারণে নিম্নাঞ্চলের কৃষকদের বোরোর বীজতলা তৈরিতে বিলম্ব হয়। সম্প্রতি তীব্র শীতের কারণে কিছু কিছু বীজতলা কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়েছে। বীজতলা রক্ষা করতে কৃষকদের প্রতি রাতে বীজতলায় পানি জমিয়ে সকালে ছেড়ে দিতে হবে। ঘন কুয়াশা থেকে রক্ষার জন্য প্রতি রাতে পলিথিন দিয়ে চারার বেড ঢেকে রাখতে হবে। সকালে বীজতলা থেকে কুয়াশা ঝেড়ে ফেলার পাশাপাশি ছত্রাকনাশক থিয়োভিট, কুইক পটাশ অনুমোদিত মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।

এদিকে, কাহারোল (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, কাহারোলে কুয়াশা ও ঠান্ডা থেকে বীজতলা রক্ষায় পলিথিনের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে বোরো ধান চাষিরা বীজতলাকে ঘন কুয়াশা ও তীব্র ঠান্ডার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য পলিথিন ব্যবহার করছেন। এতে একদিকে যেমন- কুয়াশা ও ঠান্ডার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাচ্ছে, অন্যদিকে চারাগুলো পলিথিনের নীচে সতেজ থাকছে বলে অনেক কৃষক জানান।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, উপজেলায় চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে বোরো ধান চাষাবাদে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমি। সে অনুযায়ী বীজতলার লক্ষ্যমাত্রা ২৭৮ হেক্টর জমি। উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের ঈশানপুর গ্রামের বোরো ধান চাষি সামসুল ইসলাম জানান, তিনি চলতি ইরি-বোরো মৌসুম ৬ একর জমিতে বোরো ধান চাষাবাদ করবেন। সে জন্য আগাম জাতের বোরো ধানের বীজ বপন করেছেন। শীত ও ঘন কুয়াশায় হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বীজগুলোকে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখছেন।

অপর চাষি মফিজ উদ্দীন তিনি বলেন, 'আমি ৭ একর জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষাবাদ করবো। এ জন্য ব্রি-ধান ২৯ ও ব্রি-ধান ৮৯ জাতের বীজ জমিতে বপন করেছি এবং সম্পূর্ণরূপে বীজগুলোকে পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিয়েছি। যাতে করে বীজগুলো ভালো থাকে।'

এ দিকে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মলিস্নকা রানী সেহানবীশ জানান, উপজেলার কৃষকদের বীজতলাগুলোকে পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, যাতে করে বীজতলা নষ্ট না হয়। এ বিষয়ে কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে