বৃহস্পতিবার, ০৫ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
পাঠদান ব্যাহত, খন্ডকালীন শিক্ষকই ভরসা

৩৬ বছর ধরে শিক্ষক সঙ্কটে রাজস্থলীর তাইতং পাড়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়

রাজস্থলী (রাঙামাটি) প্রতিনিধি
  ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
৩৬ বছর ধরে শিক্ষক সঙ্কটে রাজস্থলীর তাইতং পাড়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়

'পিতামাতা আমাদের জীবনদান করেন ঠিকই, শিক্ষকরা সেই জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করেন।' বিশ্ববিখ্যাত গ্রিক বিজ্ঞানী ও দার্শনিক এ্যারিস্টটল আড়াই হাজার বছর আগে এমন মন্তব্য করেছিলেন। কিন্তু সুন্দরভাবে যোগ্য মানুষ গড়ার কারিগর সংকটে আছে দুর্গম পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলার একমাত্র ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠিত রাজস্থলী তাইতং পাড়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়।

১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে শিক্ষা দিয়ে আসছিল। তখন থেকে ১১টি পদে শিক্ষক বিভিন্ন বিষয়ে অন্তর্ভূক্ত ছিল। ১৯৮৭ সালে তৎকালিন এরশাদ সরকারের আমলে জাতীকরণ হওয়ার পর বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক অবসরে যান। এরপর আর কোন শিক্ষক পদায়ন হয়নি। ফলে দীর্ঘ ৩৬ বছর ধরে জোড়াতালী দিয়ে শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সাড়ে পাঁচশ' শিক্ষার্থীর অতিথি শিক্ষকের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে বিদ্যালয়টি।

1

জানতে চাইলে বিদ্যালয় গভর্নিং বডির সভাপতি ও রাজস্থলী ইউএনও সজীব কান্তি রুদ্র বলেন, বিত্তবানদের অর্থায়নে অতিথি শিক্ষক নিয়োগ করে শিক্ষার্থীদের পড়ানো হচ্ছে। তবে অতিথি শিক্ষক দিয়ে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করার নিয়ম নেই।

এ দিকে স্থানীয়রা জানান, আশির দশকের পশ্চাৎপদ জনপদে অনেকের ত্যাগের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টির তিন যুগেও শিক্ষক শূণ্যতা কাটেনি। এলাকাবাসীর অর্থায়নে অতিথি শিক্ষকের ব্যয় বহন করা হচ্ছে। শূণ্যপদে শিক্ষক পদায়ণ ও নতুন পদ সৃষ্টিতে প্রধান উপদেষ্টা, শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষা সচিবের হস্তক্ষেপ কামনা করেন স্থানীয়রা।

স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায়, সাড়ে ৭ শতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য স্বল্প সংখ্যক শিক্ষক দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলছে শ্রেণি কার্যক্রম। শিক্ষক সংকটের ফলে নিয়মিত ক্লাস নিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে শিক্ষকদের। এতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি হতাশ অভিভাবকরাও। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার চাহিদা পত্র পাঠানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাই দ্রম্নত পর্যাপ্ত শিক্ষক পদায়নের দাবি স্কুল কর্তৃপক্ষের।

শিক্ষাবিদ ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাস্টার শেখ খলিলুর রহমান শেখ বলেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শিক্ষপ্রতিষ্ঠানে যদি একজনও শিক্ষক না থাকে তাহলে শিক্ষার্থীরা ভোগান্তির শিকার হবে। তা ছাড়া রাঙামাটি জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সংকট রয়েছে। উপজেলার সমন্বয় মিটিংগুলোতে বারবার এ বিষয়টি উত্থাপন করা হচ্ছে। বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারি শিক্ষক আসলাম হোসেন বলেন, শিক্ষক সংকটের কারণে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শ্রেণি কার্যক্রম। ফলে ক্লাসে শিক্ষার্থী বেশি হওয়ার কারণে ভালো কোন সাপোর্ট শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে না। শূন্য পদ পূরণসহ শিক্ষকদের পদের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি তোলেন তিনি। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তরিৎ কান্তি বড়ুয়া বলেন, শিক্ষক সংকটের কারণে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। শিক্ষকদের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য প্রতিবেদন দেওয়া হলেও সুরাহা মিলছে না। তিনি নিজেও সরাসরি কয়েকবার যোগাযোগ করেছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে