মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২
কমছে জমির পরিমাণ শুরু হয়েছে উত্তেজনা

চারঘাটে ফসলি জমিতে পুকুর খননের হিড়িক

চারঘাট (রাজশাহী) প্রতিনিধি
  ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
চারঘাটে ফসলি জমিতে পুকুর খননের হিড়িক
রাজশাহীর চারঘাটে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এভাবেই চলছে পুকুর খনন -যাযাদি

রাজশাহীর চারঘাটে কয়েক বছর ধরে চলছে ফসলি জমিতে পুকুর খননের হিড়িক। জমি নষ্ট করে পুকুর খনন বন্ধে ভুক্তভোগী কৃষকরা সব সময় সোচ্চার থেকেছেন। জমি রক্ষায় তারা দফায় দফায় অভিযোগ দিয়েছেন উপজেলা ও জেলা প্রশাসনে। কিন্তু তাতে কোনো ফল হয়নি। ব্যতিক্রম দুই-একটি ক্ষেত্রে লোক দেখানো অভিযান করে খননকারীদের জরিমানাতেই স্বীমাবদ্ধ প্রশাসন। কিন্তু দিন শেষে পুকুরখনন ঠেকানো যায়নি। প্রশাসনকে ম্যানেজ কওে এক পর্যায়ে পুকুরখনন সম্পন্‌্ন হয়েছে। এখনো চলছে অব্যাহতভাবে পুকুরখনন। প্রশাসনের ভুমিকা রহস্যজনক।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চারঘাট কৃষিবিদ আল মামুন হাসান বলেন, কৃষি জমিতে পুকুরখনন বন্ধে জেলা প্রশাসনের সভায় নিয়মিতকথা উত্থাপন হয়। কৃষি জমির শ্রেণি বদল করে পুকুরখনন পুরোপুরি বেআইনি। কিন্তু কেনোভাবেই পুকুরখনন বন্ধ হয়নি। ফলে কৃষি প্রধানএ অঞ্চলে দিনেদিনে কৃষি জমির পরিমান আশঙ্কাজনক ভাবে কমছে।

ভুক্তভোগী কৃষকদেও অভিযোগ, কোনো একটি এলাকায় পুকুরকাটা হলে তার আশপাশের কয়েকশ' বিঘা কৃষি জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে জমি পরিত্যক্ত হয়ে যাচ্ছে। এতে প্রতিকূল প্রভাব পড়ছে পরিবেশে এবং ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে।

স্থানীয় একাধিক ব্যাক্তি জানান, পুকুরখননে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, এসিল্যান্ড থেকে শুরু করে থানাপুলিশ ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের কাছে পুকুরখনন বন্ধের জন্য গেলেও কাজের কাজ কিছুই হয় না। মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে অভিযোগকারীদের বিদায় করা হয়। পরে জানা যায় স্থানীয় প্রশাসন ও প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় চারঘাটে বাধাহীনভাবে চলছে পুকুরখনন। শেষ পর্যন্ত পুকুরখনন আর বন্ধ হয় না, বরং একজনের দেখাদেখি অন্যরাও পুকুরখননে উৎসাহিত হচ্ছে।

চারঘাট উপজেলাসহ আশেপাশের বিভিন্ন উপজেলায় পুকুরখননে গড়ে উঠেছে দালাল সিন্ডিকেট। এসব সিন্ডিকেট পুকুর খননকারী ও স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও প্রভাবশালীদের মাঝে লেনদেনের দরদাম ও বন্দোবস্ত করছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন হাসান বলেন, গত কয়েক বছর ধরে চারঘাটে দিনদিন আবাদী জমির পরিমান আশঙ্কাজনকভাবে কমছে। এক সময় যে জমিতে আবাদ করা হতো ধান, গমসহ বিভিন্ন ধরণের ফসল। আজ সেখানে শুধুই পুকুর আর পুকুর। যে মাঠের দিকে তাকালে সবুজ ফসলে কৃষকদের প্রানজুড়ে যেত, সেখানে এখন তাকালে শুধুই চোখে পড়বে পুকুর।

তিনি বলেন, এ অঞ্চলে পুকুরখননের মৌসুম শুরু হয় নভেম্বর থেকে জুন-জুলাই-বর্ষা না আসার আগ পর্যন্ত। শুধু চারঘাটেই পুকুরখনন স্বীমাবদ্ধ নয়, আশেপাশের পুঠিয়া, দুর্গাপুর, বাঘা, দুর্গাপুর ও বাগমারায় যেদিকে তাকানো যায়, চোখে পড়ে শুধু পুকুর আর পুকুর। যেখানে এক সময় ফসলের সমারোহ দেখা যেত।

জানা গেছে, কৃষিজমি, খাল-বিল, নালা-ডোবার জমি নামমাত্র টাকায় ইজারা নিয়ে পুকুর খনন করছে প্রভাবশালী মহল। পুকুরখনন করে মাছচাষের মাধ্যমে দ্রম্নত সময়ে অধিক মুনাফা লাভের আশায় স্থানীয় প্রভাবশালীরা যেমন পুকুরখননে ঝুঁকেছেন তেমনি জেলার বাইরের টাকাওয়ালা লোকজন ও পুকুরখননে কোটি টাকা বিনিয়োগ করছেন। ফলে চারঘাটে পাট, গম ও ধান চাষ কমেছে।

সরজমিনে চারঘাট উপজেলার নিমপাড়া ইউনিয়নের জোতকার্ত্তিক হিন্দুপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন ব্যক্তির সাড়ে ১১ বিঘা তিন ফসলি জমি লিজ নিয়েছেন বিএনপির কয়েকজন নেতা। সেখানে করা হবে পুকুর। ফলে পুকুরখন বন্ধ করতে এলাকাবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে। এরই মধ্যে গত দুইদিন আগে সেখানে শুরু হয়েছে পুকুরখনন। সেই পুকুরখননকে কেন্দ্র করে গত দুইদিন আগে দুইপক্ষের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। তারপরেও সেখানে অবাধে চলছে অবৈধভাবে পুকুরখনন। পুকুরখননকে কেন্দ্র করে যে কোন সময় ঘটে যেতে পারে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ।

এ দিকে জোতকার্ত্তিক হিন্দুপাড়ার পাশে নন্দনগাছী রেল লাইনের উত্তরে আরও একটি পুকুরখনন চলছে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে। সেই পুকুরখনন বন্ধে স্থানীয়রা একাধিকবার স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগীতা কামনা করলেও ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। এদিকে চারঘাট সদও ইউনিয়নের তালবাড়িয়া, পাচবাড়িয়া, ভায়ালক্ষিপুর ইউনিয়ন সরদহ ইউনিয়ন, শলুয়া ইউনিয়ন ও নিমপাড়া ইউনিয়নের ফসলের মাঠ জুড়ে খনন কাজ অব্যাহত রেখেছেন অবৈধভাবে পুকুর খননকারীরা।

এতে প্রশাসনের ভুমিকা এলাকাবাসীর কাছে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এসব এলাকায় দিনের পর দিন, মাসের পর মাস পুকুরখনন অব্যাহত থাকলেও প্রশাসনের নজরে থাকলেও প্রশাসন ব্যবস্থা না নেয়ায় অব্যাহত রয়েছে পুকুরখনন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, 'আমি সবে মাত্র যোগদান করেছি। এখনও কোন অভিযোগ আমার চোখে পড়েনি। তবে এমন অভিযোগ ও অবৈধভাবে পুকুরখনন করলে আইনের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে