দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স এখন নিজেই স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে খোলা স্থানে রাখা হয়েছে হাসপাতালের বর্জ্য। এর ফলে দুষিত হচ্ছে পরিবেশ, বাতাশে ভেসে আসছে দুর্গন্ধ ও রোগজীবাণু। রোগীরা রোগ থেকে রক্ষা পেতে হাসপাতালে গিয়ে আরও নতুন রোগের জীবাণু নিয়ে ঘরে ফিরছেন।
এলাকাবাসী জানায়, কর্তৃপক্ষের গাফিলাতি ও বর্জ্য অব্যবস্থাপনা না থাকার কারণে দূষণ হচ্ছে পরিবেশ এবং ছাড়াচ্ছে রোগ জীবাণু।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে ডাস্টবিন থাকলেও তার পাশেই খোলা স্থানে ফেলা হচ্ছে চিকিৎসা বর্জ্য, দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। বর্জ্যগুলো কুকুর ও মুরগি ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিচ্ছে। সেখানে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, মশা মাছি পড়ে ভনভন করছে। এতে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ও সাধারণ মানুষ। তথ্য সংগ্রের সময় স্থানীয়রা জানায়, সন্ধা হলেই মাদক সেবীদের আনাগোনা বৃদ্ধি পায়, হাসপাতালের কোনায় কানায় বসে মাদকের আড্ডা, অনেক মাদকসেবী ময়লার ভাগাড় থেকে ইঞ্জেকশনের ব্যবহৃত সিরিঞ্জ সংগ্রহ করে ব্যবহার করছে মাদক সেবনের কাজে।
হাসপাতালের চিকিৎসা বর্জ্য সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ২০০৮ সালে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় হাসপাতাল বর্জ্য বিধিমালা তৈরি করলেও, সংশ্লিষ্টদের কোনো উদ্যোগ না থাকায় বিধিমালাটি বাস্তব রূপ পায়নি। হাসপাতালের বর্জ্যের মধ্যে রয়েছে ব্যবহৃত সুই, সিরিঞ্জ, তুলা, অব্যবহৃত অষুধ, রোগীদের রক্ত, গজ-ব্যান্ডেজ নেপকিনসহ নানারকম চিকিৎসা বর্জ্য ও রোগীদের উচ্ছিস্ট পঁচা খাবার। সে বিধিমালায় হাসপাতালের বর্জ্য সংরক্ষণ এবং তা পুড়িয়ে নষ্ট করার কথা উলেস্নখ থাকলেও বাস্তবে এর প্রয়োগ নেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ফুলবাড়ী উপজেলায় একটি সরকারি হাসপাতাল, ৪টি বেসরকারি ক্লিনিক এবং ১৩টি প্যাথলজী রয়েছে। এর মধ্যে কারো পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। এছাড়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের নবায়নকৃত লাইসেন্স নেই। এসব প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও নেই। তারা বলছেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে উদ্যোগ না থাকায় তারা সঠিক সমাধান পাচ্ছেন না।
হাসাপাতালের বর্জ্য একদিকে যেমন পরিবেশ দূষণ করছে, অপরদিকে রোগ জীবাণু ছড়াচ্ছে। মশামাছি পড়ছে ওইসব বর্জ্যে। হাসপাতাল থেকে সৃষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ এসব বর্জ্য যত্রতত্র ফেলায় হেপাটাইটিস বি, সি কিংবা এইডসসহ মারাত্মক রোগ ছড়াতে পারে বলে বিশেষজ্ঞ মহলের অভিমত। অথচ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়টি তেমন গুরুত্বই পাচ্ছে না।
আব্দুল মালেক নামে হাসপাতালে আসা রোগীর স্বজন জানান, হাসপাতালের ভেতর খোলা জায়গায় এভাবে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। এতে করে পরিবেশ দুষণ হচ্ছে, সেইসঙ্গে নানা রকম রোগ জীবাণু ছড়াতে পারে। অথচ কর্তৃপক্ষের নজর নেই।
জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মশিউর রহমান বলেন, খোলা জায়গায় বর্জ্য পোড়ালে ধোয়ায় রোগীদের সমস্যা হতে পারে। বর্জ্যগুলো ইনসিনারেশন ব্যবস্থা না থাকায় ধ্বংস করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই স্বাস্থ্য কপেস্নক্সের পাশে রাখা হয়। সপ্তাহে দুইদিন পৌরসভার গাড়ি এসে সেগুলো নিয়ে যায়। ডাস্টবিনে না ফেলে খোলা স্থানে ফেলার ব্যাপারে বলেন, জনবল সংকট। ২ লাখ মানুষের জন্য একটি মাত্র সরকারি হাসপাতাল। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
পৌর শহরের ওয়ান জেনারেল হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ম্যানেজার সবুজ কুমার মহন্ত বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তকে বারবার জানালেও তারা কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তারা জানিয়েছে বর্জ্য সংগ্রহের জন্য এখনও কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়া সম্ভব হয়নি। আপাতত মাটিতে পুঁতে রাখা হয় এবং মাঝে মাঝে নদীতে ফেলা হয়। একই কথা বলেন ওয়ান থাউজেন্ড ডেইজ লাইফ হসপিটাল এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টার এর ম্যানেজার ফারুক হোসেন।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও পৌর প্রশাসক জাফর আরিফ চৌধুরী বলেন, যত্রতত্র চিকিৎসা বর্জ্য ফেলা যাবে না। নিয়ম অনুযায়ী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে এসব বর্জ্য সংরক্ষণ অথবা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। নইলে সরাসরি ওই বর্জ্য নিয়ে এসে অন্য কোথাও ফেললে সেখানেও পরিবেশ দূষণ হবে এবং রোগ জীবাণু ছড়াবে। তাই পোড়ানোর পর অবশিষ্ট অংশটুকু পৌরসভা সংগ্রহ করে ময়লা ফেলার নির্ধারিত স্থানে ফেলবেন।
দিনাজপুর সিভিল সার্জন ডা. আসিফ ফেসদৌস জানান, চিকিৎসা বর্জ্য যেখানে সেখানে ফেলার কথা না। মূলত ইনসিনারেশনের মাধ্যমে করা উচিৎ। যেহেতু আমাদের স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সগুলোতে ইন্সিনিয়ারেশনের ব্যবস্থাপনা নেই, সেহেতু লোকালি পুড়িয়ে ফেলার ব্যবস্থা থাকে। যদি ফুলবাড়ীতে এমন ব্যবস্থা না থাকে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
দিনাজপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক প্রভাতি রানী বলেন, হাসপাতালের পরিবেশ গত ছাড়পত্রের বিষয়টি রংপুর বিভাগীয় অধিদপ্তরে প্রক্রিয়াধীন। এসব বর্জ্য আগে স্বপ্ন নামের একটি সংস্থা সংগ্রহ করত। এখন তাদের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় নতুন করে চুক্তি হয়েছে কিনা এটি সহকারী পরিচালক বলতে পারবেন।