সোমবার, ০৯ জুন ২০২৫, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কুয়াশা আর বাতাসে শীতের তীব্রতা বেড়েছে

সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি তেঁতুলিয়ায় শৈত্যপ্রবাহে জরুরি সাড়াদান দামুড়হুদায় শীত উপেক্ষা করে বোরো আবাদ
স্বদেশ ডেস্ক
  ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
কুয়াশা আর বাতাসে শীতের তীব্রতা বেড়েছে
কুয়াশা আর বাতাসে শীতের তীব্রতা বেড়েছে

মাঘ মাসের তীব্র শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তরের জেলাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার জনজীবন। তীব্র ঠান্ডায় ছিন্নমল মানুষ বেশি অসহায় হয়ে পড়েছেন। এদিকে, উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী ও নীলফামারীর সৈয়দপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়েছে। তীব্র শীতের কারণে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় উত্তরাঞ্চলের শৈত্যপ্রবাহে জরুরী সাড়াদান কার্যক্রমের অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় কনকনে শীত উপক্ষো করে বোরো আবাদে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট-

ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, কুড়িগ্রামের ভারত সীমান্ত ঘেঁষা উপজেলা ফুলবাড়ীতে মাঘের তীব্র ঠান্ডা বিরাজ করছে। মঙ্গলবার ভোর সকাল থেকে ঘন কুয়াশায় ঠান্ডার তীব্রতা বেড়ে যায়। তীব্র ঠান্ডায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে জনজীবন। শিশু বয়োবৃদ্ধরা কাহিল হয়েছে। এদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ঠান্ডাজনিত জ্বর, সর্দী ও কাশির প্রাদুর্ভাব। গবাদী পশু গরু ছাগল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। দিনমজুর শ্রেণির মানুষ ঠান্ডার তীব্রতার কারনে মাঠে কাজে যেতে পারছেন না।

1

ভারতের সীমান্ত ঘেঁষা ফুলবাড়ী উপজেলাটি হওয়ায় হিমালয়ের ঠান্ডার পরশ ও হিম বাতাসে এখানে ঠান্ডার তীব্রতা বাড়ায়। এখানে বিকেল হলেই ঘনকুয়াশার সঙ্গে ঠান্ডার তীব্রতা বাড়ে। এখানকার গ্রামাঞ্চলের মানুষরা ঠান্ডা তীব্রতা থেকে রক্ষা পেতে খড়কুটো জ্বালিয়ে ঠান্ডা নিবারণের চেষ্টা করছেন।

রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মককর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, মঙ্গলবার কুড়িগ্রামে সর্বন্মিন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এখানে ঘনকুয়াশায় ঠান্ডা কাতর পরিবেশ বিরাজ করছে।

সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি জানান, মাঘ মাসের প্রথম সপ্তাহের শেষে নীলফামারীর সৈয়দপুরে সোমবার রাত থেকে ঘন কুয়াশা পড়ছে। সেইসঙ্গে বইছে হালকা হিমেল বাতাস, যা মঙ্গলবার সকাল প্রায় ১১টা পর্যন্ত বজায় ছিল। এর থাকার পর কুয়াশা সরে সূর্যের দেখা মিললেও রোদের কোনো প্রখরতা না থাকায় শীতে জবুথবু হয়ে পড়েছেন সৈয়দপুরের মানুষজন ও পশু। শীত ও কুয়াশার কারণে কেউ কাজ ছাড়া খুব একটা বের হচ্ছেন না। সকালের দিকে সড়ক ও মহাসড়কে গাড়ি চলে হেডলাইট জ্বালিয়ে। ঠান্ডার তীব্রতা থেকে বাঁচতে মানুষজন আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।

বিশেষ করে গ্রামীণ লোকজন শীতে কাহিল হয়ে পড়েছেন। কয়েকদিন আবহাওয়া ভালো থাকার পর হঠাৎ শীত ও কুয়াশা বাড়ায় গ্রামীণ জনজীবন ও খেটে খাওয়া মানুষজন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষের ভরষা পুরনো কাপড়ের দোকানগুলোতে ভিড় বেড়েছে। সেই সঙ্গে গ্রাম-গঞ্জে, বাসা-বাড়ির বাইরে অগুন জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে দেখা যাচ্ছে লোকজনকে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সকালে যেতে শিক্ষার্থীদের বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে।

সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লোকমান হাকিম জানান, মঙ্গলবার সকালে সৈয়দপুরে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ভিজিবিলিটি (দৃষ্টিসীমা) রয়েছে মাত্র ২০০ মিটার। তিনি জানান, ফ্লাইট চলাচলের জন্য কমপক্ষে ২০০০ মিটার ভিজিবিলিটি প্রয়োজন। শীতের মৌসুমে সকালের দুটি ফ্লাইট বেলা ১১টায় শিডিউল করা হয়েছে। দুপুরের পর মূলত: ফ্লাইটগুলো ওঠানামা করতে পারছে।

তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি জানিান, তেতুঁলিয়া উপজেলায় সেভ দ্যা চিল্ড্রেন ও ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট এন্ড অগার্নাইজেশন (ইএসডিও) এর আয়োজনে, উত্তরাঞ্চলের শৈত্যপ্রবাহে জরুরী সাড়াদান কার্যক্রম জোরদার করার জন্য উপজেলা পর্যায়ে প্রকল্পের অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রকল্পের প্রোগ্রাম ম্যানেজার সুজন খাঁনের সঞ্চালনায় উপজেলা সমাজসেবা অফিসার শাহ মো আল আমিন এর সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ইউএনও ফজলে রাব্বি। বিশেষ অতিথি উপস্থিত ছিলেন উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা, করুনা কান্ত রায়।

উত্তরাঞ্চলের শৈত্যপ্রবাহের বিষয়ক চলমান অবস্থা আলোচনার মাধ্যমে তুলে ধরেন ও কার্যক্রমের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করেন প্রজেক্ট অফিসার তপন বালা। ইএসডিও'র সিনিয়র এ্যাসিসটেন্ট প্রোগ্রাম কোর্ডিনেটর শামীম হোসেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন। সভায় অংশগ্রহণ করেন ভজনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মসলিম উদ্দিন ও শালবাহান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম প্রমুখ।

এদিকে দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) প্রতিনিধি জানান, ঘন কুয়াশা, হিমেল হাওয়া ও কনকনে শীতকে উপেক্ষা করে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায় ইরি-বোরো আবাদে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা। উপজেলায় চলিত মৌসুমে কৃষক ধানের দাম ভাল পাওয়ার আশায় আবাদের লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্ট বিভাগ মনে করছে। বর্তমানে দামুড়হুদা উপজেলায় চলছে ইরি-বোরো আবাদের মৌসুম। কুয়াশা ঢাকা শীতের সকাল হিমেল হাওয়া উপেক্ষা করে কৃষকরা বোর ধানের চারা রোপণের ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে বোরো আবাদের ধুম চলছে।

ভোরের আলো ফুটতেই কোমর বেঁধে ফসলের মাঠে নেমে পরেছেন কৃষকরা। বীজতলায় ধানের চারা পরিচর্যার পাশাপাশি জমি চাষবাদের কাজ চলছে পুরোদমে। বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে ধানের কচি চারার সবুজ গালিচা, কোথাও গভীর নলকূপ থেকে চলছে পানিসেচ, ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার দিয়ে চলছে জমি চাষের কাজ, গরু দিয়ে চলছে মাঠ সমান করার কাজ। আবার বোরো ধানের রোপণের জন্য বীজতলা থেকে তোলা হচ্ছে ধানের চারা। কৃষকের ব্যস্ততায় শীত যেন তাদের স্পর্শ করছে না। শরীরে রয়েছে হালকা পোষাক, মাথায় গরম কাপড়। সবমিলিয়ে ফুরফুরে মেজাজে বোরো আবাদে ব্যস্ত কৃষক। কিছু কিছু মাঠে জমির রোপণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৮ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ৯ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে কৃষি অফিস বলছে এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ছেড়ে যাবে।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ইরি বোরো চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। কেউ জমি চাষ দিয়ে প্রস্তুত করছেন, কেউ বীজ তুলছেন আবার কেউ চারা লাগাচ্ছেন।

উপজেলার কুড়ুলগাছি এলাকার ধানচাষী কৃষক জালাল উদ্দীন বলেন, বোরো ধান চাষ অনেক খরচের বিষয় আমাদের এই অঞ্চলের প্রায় কৃষকই বর্গাচাষী। এদের নিজের জমি নেই, অন্যের জমি লিজ নিয়ে চাষ করে থাকি। এমনিতেই যে টাকা খরচ করে ধানের চাষ করা হয় ধানের দাম ভালো পেলে লাভ হয়। ভালো ফলনের আশায় শীত ও উৎপাদন খরচ উপেক্ষা করে কঠোর পরিশ্রম করছি।

দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার জানান, বিগত বছরে তুলনায় আশা করছি, এ বছর ইরি-বোরো চাষ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। তবে সার, কীটনাশকসহ বাজারে কোন প্রভাব পড়বে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে