বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২

রাজস্থলীর পাহাড়ি ঝাড়ু ফুলের কদর দেশজুড়ে

রাজস্থলী (রাঙামাটি) প্রতিনিধি
  ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
রাজস্থলীর পাহাড়ি ঝাড়ু ফুলের কদর দেশজুড়ে
রাঙামাটির রাজস্থলীতে পাহাড়ে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো উলফুল দিয়ে তৈরি ঝাড়ু দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে -যাযাদি

শীত মৌসুমে পাহাড়ি অঞ্চলে ঝাড়ু ফুল ফোটার পূর্ণাঙ্গ সময়। প্রকৃতিগতভাবে পাহাড়ের ঢালু জমিতে এ ফুল ফুটে। তাই পাহাড়ে বসবাসরত সব সম্প্রদায়ই সেটি সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহের তাগিদে বাজারে এনে বিক্রি করেন। ঝাড়ু ফুল পরিবারের গৃহস্থালির পরিচ্ছন্নতার কাজে ব্যবহৃত হয়। গ্রাম থেকে শহরে এমনকি বিত্তবানদের ঘরে এই ঝাড়ু ফুল স্থান করে নেয়। পরিচ্ছন্নতার যত আধুনিক ও বিকল্প পণ্য থাকুক না কেন, ঝাড়ু ফুলের কোন বিকল্প নেই।

রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলায় পাহাড়ে প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন হওয়া ঝাড়ু ফুল স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সমতলের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। প্রাকৃতিক এই ঝাড়ু ফুল বিক্রি করে বহু পরিবার জীবন নির্বাহ করছে। পাহাড়ের উর্বর মাটিতে পরিকল্পিতভাবে বাণিজ্যিকভাবে ঝাড়ু ফুলের আবাদ হলে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে।

উপজেলার সাপ্তাহিক হাটে দেখা যায়, মূল সড়কের পাশে ঝাড়ু ফুলকে আঁটি বেঁধে সারি করে সাজিয়ে ক্রেতার আশায় দাঁড়িয়ে আছেন স্থানীয়রা। উপজেলার বলি পাড়া, নারাইছড়ি, মিতিংগা ছড়ি, কিস্ত পাড়া, মাঘাইনপাড়া, কুইক্যাছড়ি পাড়া, বগাছড়ি পাড়া, শিলছড়ি, জান্তিমইন, ঘিলামুখ নতুন পাড়াসহ বিভিন্ন গহীন অরণ্যের পাদদেশ থেকে এসব ফুল সংগ্রহ করেন তারা। তারপর ঝাড়ু তৈরি করে বিক্রির আশায় সাপ্তাহিক হাটে নিয়ে আসেন।

২০-৩০ শলাকা ফুল দিয়ে একটি ঝাড়ুর আটি বাঁধা হয়। প্রতিটি আটি আকার ও মানভেদে ৩০-৪০টাকা বিক্রি করা হয়। কিন্তু পরবর্তিতে হাত বদলে ঝাড়ু ফুলের এই স্টিক ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে। এক বান্ডিল ফুলে ৫০-১০০টি আটি থাকে। প্রতিটি বান্ডিল ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। মানভেদে এর দাম কমবেশি হতে পারে।

পাহাড়ি নারীরা জুমচাষ শেষে বাড়ি ফেরার পথে পাহাড় থেকে ফুল ঝাড়ু সংগ্রহ করে নিয়ে এসে স্থানীয় বাজারগুলোতে বিক্রি করেন। তারা সংসারে বাড়তি আয়ের পথ হিসেবে এটিকে বেছে নিয়েছেন।

ঝাড়ু ফুল বিক্রেতা রজিনা তনচংগ্যা বলেন, 'পাহাড়ের বিভিন্ন স্থান থেকে ঝাড়ু ফুল কেটে আঁটি তৈরি করে প্রতি সপ্তাহের বুধবারে রাজস্থলী বাজারে বিক্রি করি। যা পাই তা দিয়ে পরিবারের জন্য বাজার সদাই করে থাকি। এই বাড়তি আয় দিয়ে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ মেটাই।'

আরেক বিক্রেতা ললিমহন ও আকর্ষণ মালা তনচংগ্যা জানান, প্রতি সপ্তাহে ঝাড়ু বিক্রি করে সংসারে বাড়তি টাকা রোজগার করছেন। এ আয় দিয়ে সংসার টিকে আছে।

এদিকে রাজস্থলী উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত পাহাড়ি-যেমন মারমা, তনচংগ্যা ত্রিপুরা ও খিয়াং সম্প্রদায়ের কাছ থেকে পাইকারি দামে ঝাড়ু ফুল কিনে রোদে শুকিয়ে ঝাড়ুর আঁটি বানিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন হাট-বাজারগুলোতে সরবরাহ করছেন কয়েকজন চট্রগ্রামের রাঙ্গুনিয়া রোয়াজার হাট, ইছাখালী, শিলক, সৈয়দবাড়ী, মরিয়মনগর থেকে আসা ব্যবসায়ীরা।

রাজস্থলী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আবুল খায়ের বলেন, পাহাড়ে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো উলফুল ঝাড়ু হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ অঞ্চলে পিছিয়ে পরা পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর আর্থিক সংকট নিরসনে ঝাড়ু ফুল ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সহায়ক ভূমিকা রাখছে। এলাকার জনসাধারণের অর্থনৈতিক চাঙ্গা ও পরিবারের ভরণপোষণ মেটাচ্ছে। ফলে যাতে তারা বঞ্চিত না হয় সরকারি সুযোগ সুবিধার জন্য উপজেলা কৃষি অফিস সর্বাথক সহযোগিতা করবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে