নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষি জমিতে সেচের পানির অভাবে ২৫শ' হেক্টর কৃষি জমি অনাবাদির সম্মুখে রয়েছে। সেচের পানির অভাবে শুকিয়ে গেছে মাঠ। নষ্ট হচ্ছে ধানের বীজতলা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উদাসীনতায় প্রতিবছর হাজার হাজার মণ ধান উৎপাদনে ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণে কৃষকেরা ধান আবাদে নিরুৎসাহী হয়ে পড়েছেন। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেওয়ার দাবি জানান প্রান্তিক কৃষকরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী সেচ প্রকল্পের আওতায় রূপগঞ্জে উপজেলার তারাবো, মুড়াপাড়া, কাঞ্চন, ভুলতা ও গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার কৃষি জমিতে সেচের পানির অভাবে ২৫শ' হেক্টর কৃষি জমি শুকিয়ে গেছে। জমিতে ফাটল দেখা গেছে। কৃষকদের ধানের বীজ তলা শুকিয়ে নষ্ট হচ্ছে। অনেকে শুকনো জমিতেই হালচাষ দিয়ে পানির অপেক্ষায় রয়েছেন। পানি না পেয়ে কৃষকরা হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন। কবে সেচের পানি পাবে সে দিনগুলো গুনছেন। এমন অবস্থায় স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে কৃষকেরা দ্রম্নত সেচের পানি ছাড়ার ব্যবস্থা করার দাবি জানান।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি বছর রূপগঞ্জে ৫ হাজার ২ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে দুই হাজার পাঁচশ' হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি দুই হাজার পাঁচশ' হেক্টর জমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেচ প্রকল্পের পানি না পেয়ে কৃজি জমিতে চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী অগ্রণী সেচ প্রকল্প-১ এর তথ্য সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৪ সালে ৯০ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী অগ্রণী সেচ প্রকল্প-১ ও পরে ১৯৯৩ সালে ১০১ কোটি টাকা ব্যয়ে শীতলক্ষ্যার পূর্বপাড়ের পাঁচ হাজার হেক্টর জমি ঘিরে সেচ প্রকল্প নির্মাণ করা হয়।
হাটাবো দক্ষিণ বাড়ৈপাড় এলাকার কৃষক শাহ-আলম বলেন, 'পাউবো আমাদের ঠিক মতো পানি দেয় না। আমরা কার্তিক মাসে বীজতলা প্রস্তুত করেছি। এ বীজতলা জমিতে রোপণ করতে পারছি না। পৌষ মাসে যদি সেচের পানি ছেড়ে দিতো বিঘা প্রতি ২০-২৫ মণ ধান হতো। পানি পাই না বিধায় জমিগুলো ফেটে চৌঁচির হয়ে যাচ্ছে।'
কৃষক ওমর আলী মিয়া বলেন, 'আমরা কৃষক মানুষ। কৃষি কাজ করেই আমাদের জীবন চলে। আগের মতো ফলন হয় না। এ সময় আমরা বোরো ধান লাগাতাম। মাঘ মাসের অর্ধেক চলে গেলেও পানির জন্য ক্ষেত প্রস্তুত করতে পারিনি। সংসার কিভাবে চলবে সেই দুশ্চিন্তায় রাত কাটছে।'
কৃষক মকবুল হোসেন বলেন, 'বাংলাদেশ হচ্ছে কৃষি নির্ভরশীল দেশ। অথচ এ দেশের কৃষকরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভিন্ন অজুহাতের কারণে প্রান্তিক কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। একদিকে সারের উর্ধ্বগতি মূল। শ্রমিকদের মজুরি বেশি। বীজের দামও বেশি। আবারও সময় মতো মিলে না সেচের পানি। আমাদের কৃষি কাজ ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আর কোনো পথ নাই।'
উপজেলা কৃষি অফিসার আফরোজা সুলতানা বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে রূপগঞ্জে ৫ হাজার ২ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে দুই হাজার পাঁচশ' হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। বাকি দুই হাজার পাঁচশ' হেক্টর জমি পাউবো'র সেচ প্রকল্পের আওতাধীন রয়েছে। পাউবো সেচের পানি না ছাড়ার কারণে চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। কৃষকরা প্রতিনিয়তই আমাদের কৃষি অফিসে এসে পানি ছাড়ার বিষয়ে বলছেন। ইতিমধ্যে আমরা পাউবো'র সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।
পাউবো'র উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রকিবুল আলম রাজিব বলেন, 'আমরা অল রেডি এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আলাপ আলোচনা হয়েছে। টেন্ডার জটিলতার কারণে এখনো ক্যানেল ও খালগুলো খনন করা হয়নি। যে বাজেট দেওয়া হয়েছে তা খুবই অল্প। খালগুলো খনন করে এ সপ্তাহের মধ্যে পানি ছেড়ে দেব।'
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, 'কৃষকরা সেচের পানির বিষয়ে আমার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। পাউবো'র কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছেন প্রশাসনিক জটিলতার কারণে তারা অর্থ ছাড় করতে পারেননি। এ জন্য আমরা উপজেলা প্রশাসন থেকে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। আগামী ১০ দিনের মধ্যে যেন এ পানিটা ছাড়া হয় এবং পরবর্তী বছরগুলোতে যেন বোরো মৌসুমের পূর্বেই টাকাটা ছাড় করা হয় সে ব্যাপারে কাজ করা হচ্ছে।'