তীব্র শীত আর ঘনকুয়াশা উপক্ষা করে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে পুরোদমে শুরু হয়েছে বোরো রোপণ।
হিমালয়ের কোলঘেষা উত্তরের জেলা দিনাজপুরে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। দিনের অধিকাংশ সসময় থাকে ককুয়াশায় ঢাঁকা, দুপুরে অল্প সময়ের জন্য সূর্যের দেখা মিললেও তেমন তাপ অনুভত হচ্ছে না। শীতের দাপটে কাঁপছে পুরো উত্তারঞ্চলের মানুষ। কনকনে শীত, হিমেল বাতাস আর ঘন কুয়াশায় যখন জনজীবন বিপর্যস্ত। এরই মাঝে শীত উপেক্ষা করে বোরো ধানের চারা রোপণ এবং জমি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন এ উপজেলার বোরো চাষিরা।
বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে দিনাজপুর আবহাওয়া অফিস। এর আগে গত সোমবার ৯দশমিক ৫ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং গত মঙ্গলবার এ জেলায় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল। যা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল এ জেলায়। এমন তীব্র শীত আর ঘনকুয়াশাকে উপেক্ষা করেই জমি তৈরি ও বোরোধানের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন বোরো চাষিরা। কৃষকদের আশা, আবহাওয়া ভালো থাকলে চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে বাম্পার ফলন হবে। গত বছরের তুলনায় এবছর বাজারে ধানের দাম কিছুটা বেশি থাকায় উপজেলায় ইরি-বোরোধান চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের। ফলে শীত উপেক্ষা করে উপজেলা জুড়েই ব্যাপকহারে ধান চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।
সরজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখাযায়, কাকডাকা ভোর থেকে ঘনকুয়ার মধ্যেই শীত উপেক্ষা করে চাষিরা শ্যালো মেশিন কিংবা পাম্পের সাহায্যে জমিতে পানি সেচ দিয়ে ধান রোপণের জন্য জমি উপযোগী করে তুলছেন। কেউ ট্রাক্টর বা কাল্টিভেটর, ছোট পাওয়ারট্রিলার দিয়ে জমি চাষ করে ইরি-বোরো রোপনের জন্য জমি প্রস্তুত করছেন। কোথাও বীজতলা তৈরি ও জমিতে রোপণের জন্য ধানের চারা উত্তোলনে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। ধানের দাম কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ায় ধান চাষে আগ্রহ বেড়েছে বলে জানান উপজেলার চাষিরা। উপজেলা কৃষিবিভাগ সূত্রে জানাযায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে।
সূত্র মতে যেসব জমিতে চাষ করা হচ্ছে ইরি-বোরো ধান, তার সার্বিক পরিচর্যার জন্য কৃষিবিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। যেসব কৃষক আমন ধানকাটার পর আলু বা সরিষা চাষ করেননি, তারা সে সব জমিতে আগাম বোরোধানের চারা রোপণ করছেন। ইরি বোরো ধানের মধ্যে কৃষিবিভাগের নতুন উদ্ভাবন করা ভ্যারাইটি হাইব্রীড ও উপশীজাতের ধান এবার বেশি আবাদ করেছেন। এছাড়া নতুন ভ্যারাইটি হিরা-১, হিরা-২, সোনার বাংলা, ব্রি-ধান ২৮, ব্রি-২৯, ব্রি-৮১, ব্রি-৭৪, ব্রি-৮৯সহ স্থানীয় জাতের কিছু ধান চাষে চারা বেশি রোপণ করা হচ্ছে।
উপজেলার শিবনগর, কড়াইপাড়া, এলুয়াড়ী, স্বরসতিপুর গ্রামগুলোতে দেখা যায়, ইরি-বোরো রোপণ শুরু করছেন চাষিরা। মাঠে মাঠে পুরোদমে বোরোধান রোপণ শুরু হয়েছে। স্থানীয় কৃষকরা জানান, এ বছর জমিতে বিভিন্ন হাইব্রিড জাতের ধান রোপণ করছেন।
কড়াইপাড়া গ্রামের কৃষক আবুল ফজল, নুরু মিয়া জানান, 'আমরা কৃষক, জমির ফসল দিয়েই আমাদের চলতে হয়। সময়মত ধান চাষ না করলে চলবো কি করে। তাই তীব্র শীত উপেক্ষা করেই মাঠে কাজ করতে হচ্ছে। শীতে ঠান্ডা পানিতে কাজ করতে খুব কষ্ট হচ্ছে, তবুও উপাই নেই। মাঝে মাঝে খড়কুটো জালিয়ে আগুন পোহাচ্ছি। জমি চাষ করে সার ও পানি দিয়ে বোরো রোপনের জন্য জমি প্রস্তুত করছি। বীজতলা থেকে চারা এনে সেই জমিতে রোপণ করবো। কিছু জমিতে চারা রোপণ শেষ হয়েছে।' ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা কৃষিবীদ রুম্মান আক্তার বলেন, বোরো ধান রোপণ শুরু থেকে কাটা ও মাড়াই পর্যন্ত সময় লাগে ৯০ দিন। উপজেলায় সবেমাত্র রোপন শুরু হয়েছে। বোরো রোপন চলবে ফেব্রম্নয়ারী পর্যন্ত। আবহাওয়া ভালো থাকলে এবং কোন প্রকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার বোরো বাম্পার ফলন আশা করছেন এই কর্মকর্তা।