সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

কবিয়াল তারক গোঁসাইয়ের তিরোধান দিবস আজ

কবিধাম সেজেছ অপরুপ সাজে মতুয়াদের পদচারণায় মুখরিত এলাকা
রূপক মুখার্জি, লোহাগড়া (নড়াইল)
  ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
কবিয়াল তারক গোঁসাইয়ের তিরোধান দিবস আজ

বাংলা কবিগানের অন্যতম পথিকৃৎ কবিয়াল তারক গোঁসাইয়ের ১১০তম তিরোধান দিবস আজ বুধবার। তিরোধান দিবস স্মরণ উপলক্ষে জয়পুর কবিধামে ৩দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে মঙ্গলবার শুভ অধিবাস, বুধবার মহোৎসব ও বৃহস্পতিবার মীন মহোৎসব।

সাধক কবির তিরোধান তিথিকে ঘিরে লোহাগড়ার শহরের জয়পুরস্‌হ তারক গোঁসাইয়ের জন্মভিটা 'গোঁসাই বাড়ি', পাশের পরশমনি মহাশ্মশান, গোফাডাঙ্গার অশ্বিনী গোঁসাইয়ের লীলাভূমি এবং লক্ষ্ণীপাশা শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালিমাতা মন্দির সেজেছ অপরুপ সাজে। এ উপলক্ষে জয়পুর ও লক্ষ্ণীপাশাসহ আশেপাশের এলাকাজুড়ে গ্রামীণ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে বিভিন্ন দোকানিরা রকমারী পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছে মেলায়।

তিরোধান দিবসকে সামনে রেখে মঙ্গলবার সকাল থেকেই নড়াইলসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার মাতুয়া তথা ভক্ত-অনুরাগী কবিধাম জয়পুর গ্রামে আসতে শুরু করেছেন। জয় ঢংকার ছান্দসিক তাল, কাশি আর ঝাঝরের অপূর্ব বাদনে লোহাগড়া শহর মুখরিত হয়ে পড়েছে।

ইতিহাস থেকে জানা গেছে, নড়াইলের লোহাগড়ার জয়পুর গ্রামের 'গোঁসাই বাড়ি' একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী র্তীর্থক্ষেত্র। গোঁসাইবাড়ি দেশের মতুয়া সম্প্রদায়ের কাছে অতি পরিচিত ও পূজনীয় নাম। এমন কোন মতুয়া খুঁজে পাওয়া যাবে না, যিনি লোহাগড়ার জয়পুর গ্রামের গঁােসাই বাড়ি দর্শন করেন নাই। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের জীবন্ত কিংবদন্তি এই গোঁসাইবাড়ি। ভক্ত-অনুরাগী কাছে জয়পুরের গোঁসাই বাড়ি 'দ্বিতীয় তীর্থক্ষেত্র' হিসেবে পূজিত।

ইতিহাস থেকে আরও জানা গেছে, নড়াইলের লোহাগড়া শহরের জয়পুর একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী জনপদ। এই জয়পুর গ্রামে বাংলা ১৯৫২ সালরে ১৫ অগ্রহায়ণ অমাবস্যা তিথীতে জন্মগ্রহণ করেন মতুয়া ধর্মের অন্যতম ধর্মগুরু, যোগসিদ্ধ মহাপুরুষ তারক চন্দ্র সরকার। ভক্তকুলে তিনি 'তারক গোঁসাই' হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন।

তারক গোঁসাইয়ের পিতার নাম কাশীনাথ সরকার ও মাতার নাম অন্নপূর্ণা সরকার। কাশীনাথ ছিলেন একজন পেশাদার শিল্পী। কবিগান গেয়ে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন। এজন্য তিনি কবিগানের একটি দল গড়ে তুলে ছিলেন। কবিগান গেয়ে তিনি বেশ সুনাম অর্জন করেছিলেন।

কিন্তু, কাশীনাথ ও অন্নপূর্ণার ঘরে কোন সন্তান ছিল না। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়শই ঝগড়া বিবাদ লেগে থাকতো। র্দীঘদিন ধরে কোন সন্তান-সন্ততি না হওয়ায় কাশীনাথ 'পুত্রেষ্টী' যজ্ঞ করেন এবং পরবর্তীতে অন্নপূর্ণার গর্ভে তারক গোঁসাই জন্মগ্রহণ করেন।

তারক গোঁসাই কবিধাম পরিচালনা পর্ষদের অন্যতম কর্ণধার পরীক্ষিত গোঁসাই বলেন, মহাপুরুষ, সাধক কবি, রসরাজ তারক গোঁসাইয়ের ১১০ তম প্রয়াণ তিথীকে কেন্দ্র করে অত্র অঞ্চলজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে উৎসব সম্পন্ন করার জন্য তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালিমাতা মন্দির পরিচালনা পর্ষদের কোষাধ্যক্ষ ও উৎসব উদযাপন কমিটির আহবায়ক তপন বিশ্বাস বলেন, মহা শিবরাত্রি ব্রত উৎসব ও চারণ কবি তারক গোঁসাইয়ের প্রয়াণ তিথি উদযাপন উপলক্ষে বুধবার কালিমাতা মন্দিরে দিনব্যাপী নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে।

লোহাগড়া থানার ওসি আশিকুর রহমান বলেন, উৎসব উপলক্ষে ব্যাপক নিরাপত্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করছি শান্তিপূর্ণভাবে এ উৎসব সম্পন্ন হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে