দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র মেঘের রাজ্য সাজেক ভ্যালি এখন বিবর্ণ দগ্ধ ভূমি। আগুনের আগ্রাসী ছোবলে জ্বলে-পুড়ে ছাই হয়ে গেছে সবুজ পাহাড়ের চূড়ায় মেঘ ছোঁয়া এ পর্যটন কেন্দ্রের রুইলুই পাড়া। সম্প্রতি আকস্মিক অগ্নিকান্ডের পর ধ্বংসস্তূপে পরিনত হয়েছে সাজেকের রিসোর্ট, কটেজ, রেস্তোরাঁ ও স্থানীয় বসবাসকারী ত্রিপুরা ও লুসাই ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী বাসিন্দাদের বসতবাড়ি। এতে ৩৪টি রিসোর্ট ও কটেজ, ৭টি রেস্টুরেন্ট ও ১৯টি দোকানের পাশাপাশি স্থানীয় লুসাই ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ৩৬ পরিবার ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গত সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় হটাৎ সাজেকের রুইলুই পাড়া এলাকার একটি কটেজে আগুন লেগে যায়। মুহুর্তেই আগুনের লেলিহান ছড়িয়ে পড়ে আশপাশে। মাত্র ৫ ঘন্টায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় সাজেক ভ্যালি। ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিটের ২৪ ঘন্টার নিরলস চেষ্টায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন। অগ্নিকান্ডের কারণ উদ্ঘাটনে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। রাতেই রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হাবিব উলস্নাহ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, সাজেক ইকো রিসোর্ট এর দ্বিতীয়তলা থেকে প্রথমে আগুনের ধোঁয়া বের হচ্ছে। চোখের ফলকেই দাও দাও করে আগুন জ্বলে উঠে। সাজেকের অধিকাংশ রিসোর্ট কাঠ ও বাঁশের তৈরি হওয়ায় আগুন দ্রম্নত ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিস আসার আগেই পুরো সাজেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
সর্বশেষ বুধবার সকালে স্থানীয় শিবমন্দির ও গির্জায় আশ্রয় নেওয়া ক্ষতিগ্রস্ত ত্রিপুরা ও লুসাই জনগোষ্ঠীর ৩৬ পরিবারের প্রত্যেককে সাড়ে ৭ হাজার টাকার চেক ও ৩০ কেজি করে চাল সহায়তা দেয় প্রশাসন। ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে ত্রাণ সহায়তা তুলে দেন বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরীন আক্তার। এ সময় ক্ষতিগ্রস্তদের শুকনো খাবার ও কম্বলও দেওয়া হয়। বিকেলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা, জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এদিকে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, সাজেকে প্রায়ই ছোট ছোট অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। তবে এখানে কোন ফায়ার সার্ভিস স্টেশন কিংবা আগুন নেভানোর পানির উৎস না থাকায় অগ্নিকান্ডের ক্ষয়ক্ষতি কোনভাবেই এড়াতে পারে না এখানকার মানুষ। এসময় তারা সাজেকে ফায়ার স্টেশন স্থাপনের দাবি জানান ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি ক্ষতি কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্নও দেখেন পুঁজি হারানো ক্ষতিগ্রস্ত এসব ব্যবসায়ী। এতে সরকারি সহায়তা চান তারা। রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক পূর্ণ চন্দ্র মৃৎসুদ্দী গণমাধ্যমকে জানান, 'গেল বছর সাজেকে ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু জায়গা (ভূমি) জটিলতায় তা আর আলোর মুখ দেখেনি। জেলা প্রশাসন জায়গা দিলে সাজেকে ফায়ার স্টেশন স্থাপন করা হবে।'
ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের পর মঙ্গলবার থেকে মেঘের রাজ্য সাজেকে পর্যটক যেতে বাঁধা নেই। রাঙামাটি জেলা প্রশাসক হাবিব উলস্নাহ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।