মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২

ঘাটাইলে সন্ধ্যা নামলেই ডাকাত আতঙ্ক, দুই মাসে ১০ ডাকাতি রাতভর পাহারায় গ্রামবাসী

ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
  ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
ঘাটাইলে সন্ধ্যা নামলেই ডাকাত আতঙ্ক, দুই মাসে ১০ ডাকাতি রাতভর পাহারায় গ্রামবাসী
টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে ডাকাত আতঙ্কে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন এলাকাবাসী -যাযাদি

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সাগরদিঘী ইউনিয়নে গত দুই মাসে প্রায় ১০টির উপরে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। কখনো ঘরের দরজা ভেঙে বসত বাড়িতে আবার কখনো রাস্তায় গাছ ফেলে ট্রাক বা বাসে ডাকাতির ঘটনা অহরহ ঘটছে। ডাকাত আতঙ্কে রাত কাটায় এই এলাকার সাধারণ মানুষ। দেশি অস্ত্র ঠেকিয়ে নিয়ে নিচ্ছে মোবাইল, স্বর্ণালঙ্কার, টাকা পয়সাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র। ডাকাতের আক্রমনে আহত হয়েছেন অনেকেই। ঘাটাইলে গত দুই মাসে এমন ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে দশটি। ভুক্তভোগীরা জানান, ডাকাত আতঙ্কে রাত কাটছে তাদের।

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায় সাগরদীঘি ইউনিয়নে ডাকাতির ঘটনার পর থেকেই গ্রামবাসীরা রাতে পালাক্রমে পাহারা দিতে দেখা যায়। শিক্ষাসফরে রওনা দেওয়া চারটি বাসে ডাকাতির ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ডাকাতরা গজারি গাছ ফেলে বাসগুলো আটকে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নগদ টাকা, মোবাইল ফোন ও স্বর্ণালংকার লুট করে। এ ঘটনায় স্থানীয় গ্রামবাসীরা রাতভর পাহারার ব্যবস্থা করেছেন।

গত মঙ্গলবার ভোর রাতে উপজেলার সাগরদিঘী ইউনিয়নের মালিরচালা এলাকায় এ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। সোয়াইতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বহনকারী বাসগুলো আটকিয়ে মুখোশধারী ডাকাতরা অস্ত্রের মুখে লুটপাট চালায়।

ভুক্তভোগী শিক্ষক ওবায়দুল ইসলাম রুবেল বলেন, 'আমরা শিক্ষাসফরে যাচ্ছিলাম, হঠাৎ গাছ ফেলে আমাদের পথ আটকানো হয়। এরপর কয়েকজন মুখোশধারী অস্ত্র দেখিয়ে সব লুট করে নেয়। আমরা আতঙ্কে ছিলাম, কেউ বাধা দেওয়ার সাহস পাইনি।'

এসময় তিন ছাত্রীকে শ্লীলতাহানি করা হয়েছে। তবে পুলিশ ডাকাতির বিষয়টি স্বীকার করলেও শ্লীলতাহানির বিষয়ে কোন কথা বলেননি।

ডাকাতদের ভয়ঙ্কর রূপ দেখে জ্ঞান হারান কৃষি বিষয়ের শিক্ষক আবুল কালাম (৫২)। সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সিনথিয়া আক্তার জানায়, ভয়ে সে অনেক কেঁদেছে এবং এখনো আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে পারেনি।

মালিরচালা এলাকার বাসিন্দা হায়দার আলী সিকদার বলেন, 'আমরা গ্রামবাসী রাতভর পাহারা দিচ্ছি। আতঙ্কের মধ্যে কাটছে সময়। পুলিশের সঙ্গে একেকদিন বিশজনের দল কাজ করছি।'

স্থানীয় আব্দুস সালাম লিটন ভূঁইয়া বলেন, 'ডাকাতির ফলে পুরো এলাকার মানুষ নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। সজাগ থেকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। পুলিশের আরও সহায়তা প্রয়োজন।'

ঘাটাইল থানার ওসি রকিবুল ইসলাম জানান, 'ডাকাতির ঘটনায় অভিযোগ পেয়েছি এবং অপরাধীদের শনাক্ত করতে কাজ করছি। ডাকাতদের ধরতে পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে।'

উলেস্নখ্য, এ ঘটনা নিয়ে ঘাটাইল- সাগরদিঘী সড়কে গত ১২ দিনে তিনটি ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে গত শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে আজমত আলী নামের একব্যক্তিকে কুপিয়ে টাকা, মোটর সাইকেল ও মোবাইল ফোন লুট করা হয়েছে। এছাড়া গত শনিবার (১৫ ফেব্রম্নয়ারী) উপজেলার সন্ধানপুর ইউনিয়নের ঘাটাইল-সাগরদীঘি সড়কের ফকিরচালা এলাকায় হানা দেয় ডাকাতদল। এলাকাবাসি ও পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায় সংঘবদ্ধ ডাকাতরা। যানবাহনের মধ্যে ছিল ট্রাক, সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল। ছিনিয়ে নেয় নগদ ২০ হাজার টাকা এবং ২০ হাজার টাকা মূল্যের একটি স্মার্টফোন এবং কাঁচামালবাহী এক ট্রাক চালকের কাছে থেকেই লুট করা হয় ৬০ হাজার টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র।

গ্রামবাসীরা প্রশাসনের কাছে দ্রম্নত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে