এবার রমজানে সবজির বাজারে যেন আগুন লেগেছে। অতিরিক্ত দামের কারণে সবজি কিনতে ক্রেতাদের নাজেহাল অবস্থা। তবে স্বস্তি রয়েছে ছোলা-চিনি-খেসাড়ির দামে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-
খুলনা প্রতিনিধি জানান, এবারের রমজানে খুলনার বাজারে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার ছোলায় সয়লাব। খুলনার বাজার ধরে রাখতে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে পালস্না দিয়ে ভারতীয় ছোলা আমদানী করা হয়েছে। যে কারণে পাইকারি বাজারে ৯৭-৯৮ টাকার ছোলা এখন ৯৩-৯৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরা বাজারে একশ' থেকে একশ' পাঁচ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত অক্টোবরেও ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি ছিল ছোলার দাম।
কালী বাড়ি রোডের পাইকারী ব্যবসায়ী জালাল এন্টারপ্রাইজ এর স্বত্বাধিকারী জালাল উদ্দিন বলেন, ভারতের ছোলা ব্যাপক হারে আমদানি হওয়ায় কেজিতে অস্ট্রেলিয়ান ছোলায় ২-৩ টাকা লস হচ্ছে। মিলাররাও লসে বিক্রি করছে। এদিকে চিনির দামও কেজিতে ২০ টাকা কমেছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকার চিনি এখন ১১৫ টাকায় পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। খেসাড়িরও দাম অনেক কমেছে। ১২৫ থেকে ১৩০ টাকার খেসাড়ি পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১০৭ টাকায়। খুলনা বড় বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী বিধান স্টোরের কর্মচারী বলেন, ১২০ টাকার ছোলা এখন ১০০ টাকায় বিক্রি করছি। চিনি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি। তিনি বলেন, এবার রমজানে ছোলা, চিনি ও খেসাড়ির দাম বেশ কম। তবে তেলের বাজার অস্থির বলে জানান।
এদিকে এবারের রমজানের শুরু থেকেই বেগুন, খিরেই এবং লেবুর দাম অস্বাভাবিক ভাবে বেড়েছে। গত সপ্তাহে খুলনা ময়লাপোতা মোড়ের সন্ধ্যাবাজারে বেগুন বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। আজ সোমবার ওই বাজারে ঢুকতে নজরুল এর দোকানে যেয়ে দেখা যায়, বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি। খিরেই বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি। গত সপ্তাহে ছিলো ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি। আর লেবুর দাম গতকাল থেকে আরও বেড়েছে। কাগজি লেবু প্রতিপিচ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ১৭ টাকা। আর সিলেটি লেবু বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিচ ১৫ টাকা। মায়ের দোয়া ভেজিটেবল সপের মালিক লিটন এবং জাহিদ বলেন, রমজানের শুরুতে এসব জিনিসের চাহিদা বেশি থাকে এবং সরবরাহ কম থাকে যে কারণে দাম এত বেশি। তবে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেছেন, এবারের রমজানে দ্রব্যমূল্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে একাধিক মনিটরিং টিম কাজ করছে। ত্রেতা সাধারণ কোনো প্রকার প্রতারিত হলে সেই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি জানান, মৌসুমী সবজিতে ভরপুর সস্তার সবজি বাজারে রমজানের শুরুতেই উর্ধ্বমুখী মূল্যের উত্তাপ লেগেছে। কয়েকগুল বেড়েছে বেগুন, টমেটো, ক্ষীরা, লেবু এবং শসার দাম। পাশাপাশি অন্যান্য সবজিতেও লেগেছে আগুন। গত কয়েকদিন পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার প্রধান সবজির বাজারগুলো ঘুরে সবজির হঠাৎ মুল্য বৃদ্ধির এমন দৃশ্য দেখা যায়।
উপজেলার দাশুড়িয়া, ঢুলটি, বড়ইচারা এবং ঈশ্বরদী পৌর মার্কেট সবজির আড়ৎ গুলো ঘুড়ে সবজি বাজারে এমন উর্ধ্বমুখীতা লক্ষকরা যায়। দেখাযায়, দশ টাকা কেজির বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, লেবুর হালি ২০ টাকা থেকে হয়েছে ৮০ টাকা, ক্ষীরা ৩০ থেকে ৫০, শষা ৪০ থেকে ৫০, সজনে ডাটা ১৬০ থেকে ২০০, আলু ১৫ থেকে ২০, লাউ আকার ভেদে বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৮০, শিম ৭ টাকা থেকে ২০ টাকা, চিচিঙ্গা ২০ থেকে ৪৫ টাকা, ফুল ও বাধা কপি পিচ থেকে বিক্রি হচ্ছে ১০ ও ২০ টাকা কেজিতে, পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৩২ থেকে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ো প্রতি কেজি ৩০ টাকা, শিমের বিচির দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। আনারস ৫০ টাকা কেজি, তরমুজ ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি। এছাড়াও খেজুরের দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা।
দাশুড়িয়া বাজারে সবজি ক্রেতা আরিফুল বিলস্না বলেন, 'শুনেছি বিশ্বের অন্যান্য দেশে রমজানের সময় দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকে। কিন্তু কি অদ্ভুত একটি দেশ বাংলাদেশ, যেখানে রমজানের আগেই দ্রব্য মূল্য বাড়তে থাকে লাগামহীন ভাবে।' তবে অসাধু ব্যবসায়ীদের এমন দৌঁরাত্ম কমাতে সবজি বাজার গুলোতে উপজেলা প্রসাশনসহ সংশ্লিষ্টদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
ঈশ্বরদী পৌর সবজির বাজারের সবজি বিক্রেতা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'রমজানের আগের চেয়ে সবজির বাজার বর্তমানে খানিকটা চড়া হয়েছে। কেননা আগে কৃষকদের থেকে কম দামে কিনতে পারতাম। তাই কম দামে বিক্রিও করতে পারতাম। এখন কৃষকরাই কম দামে বিক্রি করছেন না। তাই আমাদের বেশি দামে সবজি ক্রয় করে বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। মূলত এ জন্যই সবজির বাজার খানিকটা চওড়া।
জানতে চাইলে ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবীর কুমার দাশ বলেন, 'আমরা মুদি দোকান গুলোকে মনিটরিং করছি। সেখানে বৈষম্য পাওয়ায় একাধিক ব্যবসায়ীকে ইতোমধ্যেই জরিমানার আওতায়ও আনা হয়েছে। তবে সবজি বাজার ওপেন পেস্নস হওয়ায় জরিমানার আওতায় আনা সম্ভব হয়না। তবুও আমরা সেটাকে নিয়মিত মনিটরিং এর আওতায় আনার চেষ্টা করছি। আজকেও এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আমরা দ্রম্নতই একটি পদক্ষেপ গ্রহন করতে যাচ্ছি।'