করোনা মহামারির দাপটে সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বজুড়ে ফের বাড়ছে এ রোগে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা, আর তার সঙ্গে পালস্না দিয়ে কমছে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তির সংখ্যাও। মঙ্গলবার থেকে বুধবার ২৪ ঘণ্টার পরিসংখ্যান এমন তথ্যই জানাচ্ছে। সংবাদসূত্র :এএফপি, আল-জাজিরা মহামারি শুরুর পর থেকে বিশ্বে এ রোগে আক্রান্ত, মৃতু্য ও সুস্থতার হালনাগাদ তথ্য প্রদানকারী ওয়েবসাইট 'ওয়ার্ল্ডোমিটার'র তথ্য অনুযায়ী, বুধবার বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ছয় লাখ ৫৭ হাজার ৩৬৯ জন এবং মারা গেছেন ১০ হাজার ১১০ জন। এছাড়া এদিন করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন চার লাখ ৩৪ হাজার ৮৩৫ জন। আগের দিন মঙ্গলবার বিশ্বে করোনায় নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল পাঁচ লাখ ৯৫ হাজার ২৯০ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৯ হাজার ৫০৫ জন। ওই দিন করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা মানুষের সংখ্যা ছিল চার লাখ ৫০ হাজার ৫০৫ জন। অর্থাৎ, ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে বিশ্বজুড়ে নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ৬২ হাজার ৭৯, মৃতের সংখ্যা বেড়েছে ৬০৫ এবং করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা মানুষের সংখ্যা কমেছে ৪৪ হাজার ৪০৪ জন। ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার থেকে বুধবার ২৪ ঘণ্টায় করোনায় নতুন আক্রান্ত রোগী সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রে। অন্যদিকে, এ রোগে মৃতু্যর হিসাবে শীর্ষে ছিল ইন্দোনেশিয়া। বুধবার যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৮৪ হাজার ৪৯৬ এবং এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৪৮৩ জন। অন্যদিকে, করোনার এশীয় উপকেন্দ্র (এপিসেন্টার) হিসেবে পরিচিতি পাওয়া দেশ ইন্দোনেশিয়ায় বুধবার করোনায় মারা গেছেন এক হাজার ৮২৪ জন, যা ছিল ওই দিন দৈনিক মৃতু্যর হিসাবে বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক মৃতু্য। পাশাপাশি, বুধবার দেশটিতে করোনায় নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৪৭ হাজার ৭৯১ জন। এছাড়া বুধবার বিশ্বের অন্য যেসব দেশে করোনায় আক্রান্ত-মৃতু্যর উচ্চহার দেখা গেছে, সে দেশগুলো হলো ব্রাজিলে নতুন আক্রান্ত ৪৮ হাজার ৪৪৩, মৃতু্য এক হাজার ৩৬৬; ইরানে নতুন আক্রান্ত ৩৩ হাজার ৮১৭, মৃতু্য ৩০৩; যুক্তরাজ্যে নতুন আক্রান্ত ২৭ হাজার ৭৩৪, মৃতু্য ৯১; ফ্রান্সে নতুন আক্রান্ত ২৭ হাজার ৯৩৪, মৃতু্য ৪০; স্পেনে নতুন আক্রান্ত ২৭ হাজার ১৫০, মৃতু্য ৭৩ এবং রাশিয়ায় নতুন আক্রান্ত ২২ হাজার ৪২০, মৃতু্য ৭৯৮। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে সক্রিয় করোনা রোগী আছেন এক কোটি ৪৩ লাখ ৬৬ হাজার ১৬১ জন। তাদের মধ্যে মৃদু উপসর্গ বহন করছেন এক কোটি ৪২ লাখ ৭৯ হাজার ৯২০ জন এবং গুরুতর অসুস্থ আছেন ৮৬ হাজার ৫৪২ জন। তথ্য অনুযায়ী, মহামারি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে মোট ১৯ কোটি ৭০ লাখ এবং মারা গেছে মোট ৪২ লাখ ৫ হাজার। এছাড়া এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে উঠেছেন মোট ১৭ কোটি ৮৪ লাখ। এদিকে, অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম শহর সিডনিতে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে ব্যাপকভাবে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃহস্পতিবার সেখানে একদিনে ২৩৯ জন করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। মহামারি শুরুর পর সেখানে এটিই একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। করোনার অধিক সংক্রমণশীল ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার পর সিডনিতে এরই মধ্যে চলমান লকডাউন আরও চার সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে। সিডনির ৫০ লাখ মানুষকে আগামী ২৮ আগস্ট পর্যন্ত মেনে চলতে হবে এই বিধিনিষেধ। উলেস্নখ্য, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে বিশ্বের প্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। করোনায় প্রথম মৃতু্যর ঘটনাও ঘটেছিল চীনে। তারপর অত্যন্ত দ্রম্নতগতিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসটি। পরিস্থিতি সামাল দিতে ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি বিশ্বজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিস্নউএইচও)। কিন্তু তাতেও এই ভাইরাসটির সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসায় অবশেষে ওই বছর ১১ মার্চ করোনাকে বৈশ্বিক মহামারি হিসেবে ঘোষণা করে ডবিস্নউএইচও। ভারতে সংক্রমণ কিছুটা কমেছে মৃতু্য প্রায় অপরিবর্তিত এদিকে, ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ভারতে করোনায় দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা কমলেও প্রায় অপরিবর্তিত আছে ?মৃতের সংখ্যা। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার দেশটিতে করোনায় নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৪৩ হাজার ৫০৯ এবং এ রোগে মৃতের সংখ্যা ছিল ৬৪১ জন। আগের দিন মঙ্গলবার দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৪৩ হাজার ৬৫৪ ও ?মৃতের সংখ্যা ছিল ৬৪০ জন। অর্থাৎ, ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দেশটিতে নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমেছে ১৪৫ জন, মৃতু্য বেড়েছে এক জন। এ পর্যন্ত দেশটিতে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তিন কোটি ১৫ লাখ ২৮ হাজার ১১৪ জন এবং এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন চার লাখ ২২ হাজার ৬৬২ জন। এছাড়া বর্তমানে ভারতে সক্রিয় করোনা রোগী আছেন চার লাখ ৯ হাজার ৮০৫ জন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশটিতে বর্তমানে করোনায় দৈনিক শনাক্তের হার দুই দশমিক ৩৮ শতাংশ।