জাতিসংঘের তত্ত্বাবধায়নে বাংলাদেশে সংঘটিত গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি এই দাবি জানান।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'প্রায় ৬ শতাধিক রাজনৈতিক নেতাকর্মী বা বিভিন্ন সিভিল সোসাইটির মানুষ, শ্রমিক নেতাদের গুম করা হয়েছে। বেশির ভাগকেই খুঁজে পাওয়া যায়নি। এগুলোর কোনো সদুত্তর পায়নি, গুম হওয়া পরিবারের সদস্যরা। একটা লোককে রাষ্ট্র গুম করে রাখবে, সে কিছু জানবে না, তার সমস্ত অধিকার ক্ষুণ্ন করা হবে, তার পরিবারের মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হবে -এটা কখনোই মেনে নেওয়া যায় না। এই ধরনের অপরাধ যারা করে তাদের অবশ্যই খুঁজে বের করা দরকার।'
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার অত্যন্ত সংগতভাবে বলেছেন যে, এসব গুম-খুনের সুষ্ঠু, স্বাধীন
ও নিরপেক্ষ তদন্ত হতে হবে এবং সেই সঙ্গে এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, তাদের বিচার হতে হবে। তিনির্ যাবের নামও উচ্চারণ করেছেন।
গুম নিয়ে বিএনপির অভিযোগ প্রসঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী-নেতাদের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, 'তারাতো এ কথা বলবেনই। ওবায়দুল কাদের বলেছেন যে, 'জাতিসংঘের কোনো ক্ষমতা নেই এসব গুম-অপহরণের বিচার করার।' তার মানে এসব ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। নেত্রনিউজের প্রতিবেদনে আরও বেশি প্রমাণিত হয়েছে।' এ সময়ে গুম হওয়া পরিবারগুলোর দুঃখ-দুর্দশা ও অবর্ণীয় অবস্থার কথাও তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, 'জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনার যে বিবৃতি দিয়েছেন তাতে বিএনপির এতদিনের যে দাবি সেটাই প্রমাণিত হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার বিবৃতিতেও বলেছেন যে, জাতিসংঘের কর্মীদের ফাইন্ডিংসগুলো হচ্ছে এভাবে গুম হয়ে গেছে, এভাবে গুম করেছে। এসব ঘটনা তদন্তের জন্য নতুন একটি টিম আসবে। তারা আশা করেন যে, সরকার তাদেরকে অনুমতি দেবে। যদিও এর আগে কয়েকবার হিউম্যান রাইটস কমিশন আসতে চেয়েছিল। সরকার তাদেরকে বাধা দিয়েছে, আসতে দেয়নি।'
দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সরকারের সঙ্গে সংলাপের প্রশ্ন ওঠে না জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সংলাপের কোনো পরিবেশ বাংলাদেশে নেই। এখানে রাজনৈতিক যে সংকট তার সমাধানই সম্ভব না যতক্ষণ পর্যন্ত খালেদা জিয়ার মুক্তি না হবে, যতক্ষণ না মামলাগুলো প্রত্যাহার করা হবে, যতক্ষণ না এই সরকার পদত্যাগ করে একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে, সংসদ বাতিল না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত সংলাপের প্রশ্নই উঠবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, 'গত বুধবার আওয়ামী লীগের সমাবেশে হুঙ্কার দিয়েছেন নেতারা। বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়েছেন। এটাই তাদের চরিত্র। এভাবে তারা সব সময় বিরোধী দলকে দমন করতে চায়। যে ধরনের ভাষা তারা ব্যবহার করেছে সেই ভাষা সম্পূর্ণ সন্ত্রাসের ভাষা। তারা পরিষ্কার করে এমনও কথা বলেছে, বেরোতে দেওয়া হবে না, গলিতে ঢুকতে দেওয়া হবে না। এখন কী কারণে হঠাৎ করে রাস্তায় দাঁড়াতে দিয়েছে, তারপরে আসল চরিত্র কী দাঁড়াবে- কয়েকদিন পরেই দেখা ?যাবে।'
রাষ্ট্রে নতুন এলিট শ্রেণির তৈরি করেছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, জোর করে অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য শুধু নিজেদের স্বার্থ হাসিল করছে। রাষ্ট্রকে দখলে রাখতে একটা নতুন এলিট ক্লাস তৈরি করেছে তারা। সেই এই এলিট ক্লাসে কিছু আমলা আছে, কিছু রাজনীতিবিদ আছে, কিছু টেকনোক্রেট আছে সব মিলিয়ে তাদেরকে দিয়ে একই ভাষায় কথা বলায় এবং কথা বলছে। এ সময়ে তিনি জন্মাষ্টমী উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়কে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
খালেদা জিয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এমনিতেই তো তিনি অসুস্থ। সেই অসুস্থতার মধ্যে তিনি সুস্থ আছেন। এমন কোনো ব্যাপার নেই যে, এখনই তাকে হাসপাতালে যেতে হবে।