বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

উপকূলীয় এলাকায় কমছে বনভূমি হুমকিতে বন্যপ্রাণী ও উপকূলবাসী

কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
  ২৮ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব এবং একটি চক্রের হাতে বনভূমি উজাড় হওয়ার ফলে পটুয়াখালীর উপকূলীয় এলাকায় বিশাল বনভূমি দিন দিন কমে যাচ্ছে। এতে উপকূলীয় বনাঞ্চলের বন্যপ্রাণী অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। পাশাপাশি উপকূলবাসীও হুমকিতে পড়েছেন।

পটুয়াখালীর উপকূলীয় এলাকার বিশাল একটি অংশজুড়ে কলাপাড়া ও কুয়াকাটার অংশ। কলাপাড়ার একদিকে আন্ধারমানিক মোহনা অন্যদিকে রামনাবাদ চ্যানেল। এর মধ্যে বিশাল একটি অংশে গত কয়েক দশক আগেও ছিল বিশাল বনভূমি। তবে তার ৬০-৭০ শতাংশ বনাঞ্চল এখন ধ্বংসের মুখে। শুধু তাই নয় কুয়াকাটা সৈকতের লেম্বুর বন, ঝাউবন, গঙ্গামতি পয়েন্টসহ বনাঞ্চলে থাকা বন্যপ্রাণী এখন খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।

উপকূলীয় এলাকার বিভিন্ন বনাঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, বিশাল একটি অংশের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ দিন দিন মরে যাচ্ছে। আবার কেটে ফেলা হচ্ছে তবে এসব বনাঞ্চল রক্ষায় তেমন তদারকি নেই বললেই চলে। যার ফলে যেমন বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ তেমনি নষ্ট হচ্ছে, পরিবেশের ভারসাম্য অন্যদিকে উপকূলবাসীর ঝুঁকি তো বাড়ছেই।

পরিবেশকর্মী ও স্থানীয়দের দাবি, জোয়ারের তীব্রতা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে যে পরিমাণ বন ধ্বংস করছে, এর দ্বিগুণ বন মানুষ সৃষ্ট কারণে ধ্বংস হচ্ছে। বন বিভাগের উদাসীনতার কারণেও দিন দিন এসব বনভূমি উজাড় হয়ে যাচ্ছে।

বন বিভাগের তথ্য মতে, প্রায় ১৫ একর জায়গাজুড়ে মরে যাওয়া গাছগুলো দাঁড়িয়ে আছে। এসবের বেশিরভাগই গেওয়া ও কেওড়া। এ ছাড়াও রয়েছে তেঁতুল, নিম, ক্যাজা, হিজল, কাঠবাদাম, ঝাউসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। মরে যাওয়া গাছগুলো জোয়ারের পানিতে গাছের গোড়ায় বালু আটকে নষ্ট হচ্ছে।

ঝাউবন এলাকার প্রবীণ জেলে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, 'দিন দিন গাছগুলো সব মরে যাচ্ছে। আগে কত বড় গাছ ছিল, কিন্তু এখন তো সবই বিলুপ্তির পথে। বিশেষ করে ২০০৭ সালে সিডরের পর থেকেই বেশিরভাগ গাছ মারা যাচ্ছে। আগের চেয়ে জোয়ারের পানিও বেড়েছে। গাছ কমে যাওয়ায় উপকূলবাসীর ঝুঁকিও বাড়ছে দিন দিন।

গঙ্গামতি এলাকার আব্দুর জব্বার বলেন, 'এক সময় এই জঙ্গলে প্রবেশ করতে ভয় করত। কত-শত পশু-পাখি ছিল আর এখন ছায়ায় বসার মতো একটি গাছও নেই। আমাদের দাবি, বেশি করে সরকার যেন গাছ লাগায়। এতে হয়ত আবার ফিরে পাব আমরা আগের বন-জঙ্গল।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপার কলাপাড়া জোনের সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন মাননু বলেন, 'একটি হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এবং আরেকটি হচ্ছে মনুষ্যসৃষ্ট বিপর্যয়। একটি চক্র বন উজাড়ে উঠেপড়ে লেগেছে। সমুদ্র উপকূলীয় এই সবুজ বেষ্টনী যদি না থাকে, তাহলে পুরো উপকূলবাসী হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করি আমি।'

পটুয়াখালী বনবিভাগের সহকারী বন কর্মকর্তা তারিকুর ইসলাম বলেন, 'ইতোমধ্যে এই উপকূলীয় এলাকায় এক লাখ ২৫ হাজার বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা রোপণের উদ্যোগ নিয়েছি। এ ছাড়াও চর-বিজয়ে বনায়নের জন্য বারবার চেষ্টা করা হলেও সামুদ্রিক স্রোত তা বিলীন করে দিচ্ছে। কিছু দুষ্কৃতকারীর জন্য বনের অনেক গাছ নষ্ট হচ্ছে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে