শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

জাপা নিজের শক্তিতে নির্বাচন করলে স্বাগত জানাব

সংবাদ ব্রিফিংয়ে ওবায়দুল কাদের
যাযাদি রিপোর্ট
  ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
জাপা নিজের শক্তিতে নির্বাচন করলে স্বাগত জানাব

জাতীয় পার্টি কোনো আসন চাইলে তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, পরপর তিনটি জাতীয় নির্বাচনে সমঝোতা হলেও সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এবার নিজের শক্তিতে নির্বাচন করলে আওয়ামী লীগ স্বাগত জানাবে।

রোববার দুপুরে আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, 'জাতীয় পার্টির আসনগুলোতে ছাড় দেওয়ার ব্যাপারে তাদের কোনো তালিকা পাইনি। তারা যদি নিজেদের শক্তির ওপর দাঁড়িয়ে নির্বাচন করেন, এ মুহূর্তে এটাই হবে তাদের জন্য সবচেয়ে ভালো খবর।'

ওবায়দুল কাদের বলেন, '১৪ দলের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের জোট, তাদের সঙ্গে আমাদের সিদ্ধান্ত হবে। সেই জোটকে বাইরে রেখে নির্বাচন করব সেই কথা আমরা ভাবিনি। যারা জিতে আসতে পারবেন, আগেও নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছেন, এ রকম গ্রহণযোগ্য নেতা অবশ্যই বাদ পড়বেন না।'

তবে আগের তিন নির্বাচনে শরিকদের যেসব আসনে ছাড় দেওয়া হয়েছিল, সেখানে পরিবর্তনের ইঙ্গিতও দিয়ে তিনি বলেন, 'এখানে অ্যাটজাস্টমেন্টের ব্যাপার আছে। এসব বিষয়গুলো ভেবে দেখা দরকার। মানুষ চায় না, এমন কোনো নাম জোট থেকে আমরা সমর্থন করতে পারব না।'

আওয়ামী লীগ সম্পাদক জানান, ২০০৮ সাল থেকে সর্বশেষ তিনটি জাতীয় নির্বাচনের মধ্যে নবম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি মহাজোট করেই অংশ নেয়। ২০১৪ সালে বিএনপির বর্জনে দশম সংসদ নির্বাচনে জোট না হলেও আসন সমঝোতা হয় দুই দলে। জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছিল এমন ৩৪টি আসনে প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ, এসব আসনেই জিতে আসেন লাঙ্গলের প্রার্থীরা। এই সমঝোতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল রওশন এরশাদের, যিনি ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণের বিষয়ে জোরালো ভূমিকা নেন।

তিনি বলেন, 'বিএনপি-জামায়াত জোটের সহিংস আন্দোলনের মুখে জাতীয় পার্টির দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ একেবারে শেষ মুহূর্তে দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু রওশন বলেন, তিনি ভোটে ১

যাবেন, তার অনুসারীরাও উঠবেন না। ভোট শেষে রওশন এরশাদকে সংসদীয় দলের নেতা বানান জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা, তিনি হন বিরোধীদলীয় নেতা। ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনের পরও একই পদে থাকেন রওশন।'

কাদের বলেন, 'জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সঙ্গে দ্বন্দ্বে পেরে না উঠে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও তার অনুসারীরা এবার ভোটে আসছেন না।'

এদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বহিষ্কারের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, 'আমরা কি দলের পক্ষ থেকে বলেছি যে যারা স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন তাদের দল থেকে বহিষ্কার করব? এ সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগে এখনো হয়নি।'

কর্মকর্তাদের বদলি সংক্রান্ত এক প্রশ্নে জবাবে স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, 'শৃঙ্খলাজনিত তাদের কোনো ব্যবস্থা বা অন্য কোনো ব্যবস্থা, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ট্রান্সফার- এগুলো আওয়ামী লীগ করছে না, প্রধানমন্ত্রী করছেন না। সবই নির্বাচন কমিশন করছে। ইউএনও ট্রান্সফার, ওসিদের ট্রান্সফার, ডিসিদের ট্রান্সফার- কাজগুলো আর সরকারের নয়। নির্বাচন কমিশন বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করছে।'

বিএনপি প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, '২৮টি নিবন্ধিত দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। বিএনপির সঙ্গে এখন ৩২ বা ৫৪ দল- তাদের সঙ্গে নেই। অনেকে তাদের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। বিএনপি না হলে নির্বাচন অশুদ্ধ হয়ে যাবে, এক তরফা হয়ে যাবে কেন? বিএনপির যে ভুয়া আন্দোলনে। এ আন্দোলনের কারণে অনেকে বিভ্রান্ত হয়েছে। আজ তাদের ঝটিকা মিছিল করতে হয় অন্ধকারে। কুয়াশার মধ্যে হঠাৎ করে গুহা থেকে বেরিয়ে শুরু করে দেয় মিছিল। কিছুক্ষণ পর আর নেই। পুলিশ দেখলে চলে যায়। তাদের বুকে সাহস নেই।'

তারেক জিয়াকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, 'আমি তারেক রহমানকে বলব, সাহস থাকলে, রাজনীতি করতে চাইলে, সৎ সাহস থাকলে মাঠে আসুন। আমরা একটা রাজনৈতিক দল, আপনারা আমাদের প্রতিপক্ষ; কিন্তু শত্রম্ন কখনো ভাবিনি। ষড়যন্ত্র করিনি। খালেদা জিয়াকে হত্যা করতে যাইনি, জিয়াউর রহমানকে হত্যা করতে যাইনি, আমরা হত্যার রাজনীতি করি না। ষড়যন্ত্রের রাজনীতি আমরা বিশ্বাস করি না। সৎ সাহস থাকলে কেন আসেন না? লন্ডনে বসে বাংলাদেশে আন্দোলন করবেন, এ ভুলের রাজনীতির কারণে আপনারা কিছু দিন পর দলের নেতাকর্মীদের হারাবেন।'

তিনি বলেন, 'বিএনপির অনেকেই নেতিবাচক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে চান। তার প্রমাণ তাদের দলের অনেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। শুধু শমসের মবিন, তৈমূর আলম খন্দকার নন, জেনারেল ইবরাহিম বীর প্রতীক সাহেবও নির্বাচনে এসেছেন। আজ অনেকেরই শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। অনেকে বিএনপির নেতিবাচক রাজনীতিতে জড়িয়ে নিজেদের রাজনৈতিক জীবন ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন। আর তারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে চান না। সুস্থ ও স্বাভাবিক রাজনৈতিক ধারায় ফিরে আসতে শুরু করেছেন।'

যারা এসেছেন তাদের মধ্যে অনেক বড় বড় নেতা আছেন উলেস্নখ করে আওয়ামী লীগ সম্পাদক বলেন, 'শুধু শাহজাহান ওমর নন, অনেকে এসেছেন। তারা বিএনপির রাজনীতিতে অত্যন্ত সক্রিয় ছিলেন। আজ বিএনপির রাজনীতিকে তারা প্রত্যাখ্যান করে বিশুদ্ধ রাজনীতিতে ফিরে আসতে শুরু করেছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাদের ধন্যবাদ জানাই। আমরা বিশ্বাস করি, সামনে বিএনপির অনেক নেতা ও কর্মী অসুস্থ রাজনীতি থেকে বেরিয়ে সুস্থ ধারার রাজনীতিতে ফিরে আসবেন।'

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপস্নব বড়ুয়া, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাপা, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজী প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে