শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১
উদ্বোধনের পর পাঠানো হলো তুলা, এলো পাথর

সুলতানগঞ্জ-মায়া নৌপথ ছয় দশক পর চালু

রাজশাহী অফিস ও গোদাগাড়ী প্রতিনিধি
  ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
সুলতানগঞ্জ-মায়া নৌপথ ছয় দশক পর চালু

বাংলাদেশ ও ভারতের নৌ প্রটোকলের আওতায় ছয় দশক পর ফের চালু হলো রাজশাহীর গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ নৌবন্দর এবং ভারতের মুর্শিদাবাদের মায়া নৌবন্দর পর্যন্ত পণ্যবাহী নৌযান চলাচল। পদ্মা ও মহানন্দার মোহনায় সুলতানগঞ্জে সোমবার সকালে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এবং নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা ও বিআইডবিস্নউটি'র চেয়ারম্যান কমোডর আরিফ আহমেদ মোস্তফা, রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী, রাজশাহী-৫ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল ওয়াদুদ দারা, রাজশাহী-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল কালাম আজাদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল ওদুদ, রাজশাহীতে নিযুক্ত ভারতের সহকারী হাইকমিশনার মনোজ কুমার প্রমুখ।

পরে অতিথিরা সুলতানগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।

সুধী সমাবেশে রাসিক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, 'পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের ধূলিয়ান থেকে নৌপথটি গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ, রাজশাহী ও পাকশী হয়ে আরিচাঘাট পর্যন্ত গেছে। দীর্ঘদিন এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ ছিল না। আমি গত পাঁচ বছর বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া, লেখালেখি ও ডিও লেটার দিয়েছি। ফলে এটা গতিশীল হয়েছে। অবশেষে প্রথম পর্যায়ে সুলতানগঞ্জ-মায়া নৌপথে নৌযান চলাচলের শুরু হলো। পরে এটি রাজশাহী হয়ে আরিচা পর্যন্ত চালু হবে। রাজশাহী নগরীতে নৌবন্দর স্থাপন করা হবে। এর মাধ্যমে রাজশাহীর অর্থনীতি গতিশীল হবে, অনেক কর্মসংস্থান হবে।'

নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, '১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আগ পর্যন্ত সুলতানগঞ্জ-মায়া গোদাগাড়ী-ভারতের লালগোলা নৌঘাটের মধ্যে নৌপথে বাণিজ্য চালু ছিল। পরে রুটটি বন্ধ হয়ে যায়। আজ বাংলাদেশ সীমান্তের সুলতানগঞ্জ নৌ-বন্দরটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হলো। এই মাধ্যমে রাজশাহীর সুলতানগঞ্জ ঘাটটি নদীবন্দরের মর্যাদা পেল।'

প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'সুলতানগঞ্জ নৌ-বন্দরের মাধ্যমে ভারত থেকে পণ্য আমদানিতে সময় ও খরচ কমে যাবে। এতে উপকৃত হবেন বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, বছরে এই নৌপথে দুই দেশের মধ্যে হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হবে। আগামীতে এই নৌরুট পাবনার আরিচা পর্যন্ত সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে।'

গোদাগাড়ী-সুলতানগঞ্জ নৌবন্দরটি এ অঞ্চলের অর্থনীতির জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করল মন্তব্য করে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, 'ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেল। সুলতানগঞ্জ নৌবন্দরটি ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ২৩তম নৌবন্দর। খুব শিগগির অবকাঠামোসহ সার্বিক উন্নয়নের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ বন্দরে রূপান্তরিত হবে। বাংলাদেশে ২৪টি স্থলবন্দর রয়েছে, যার ২৩টিই বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে। অপরটি মিয়ানমারের সঙ্গে। এরই মধ্যে ১৭টি স্থলবন্দর চালু হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'বাংলাদেশ যেন পাকিস্তান, আফগানিস্তান, লিবিয়ার মতো বিচ্ছিন্নতাবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হয় সেই ষড়যন্ত্র চালানো হয়েছিল। সেখান থেকে কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়, সবার সঙ্গে বন্ধুত্বের জায়গায় নিয়ে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে। এরই মধ্যে তাদের সঙ্গে পর্যটন পরিবহণেও অভাবনীয় একটি জায়গায় চলে এসেছি।'

ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের যে রূপান্তরমূলক পরিবর্তন ঘটেছে তার আরেকটি শক্তিশালী উদাহরণ হলো আজকের ঘটনা। গত দশ বছর আমাদের অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার দ্রম্নত বৃদ্ধি এবং আমাদের কানেক্টিভিটি লিঙ্কে এই রূপান্তরটি সবচেয়ে স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান।'

এই প্রটোকল রুটের মাধ্যমে কার্গো চলাচলের জন্য প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে উলেস্নখ করে এই রুটটি বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর সংযোগ উন্নত করতে সাহায্য করবে বলে জানান ভারতীয় হাইকমিশনার।

তিনি আরও বলেন, 'মাওয়া-সুলতানগঞ্জ রুট আবার চালু করা বাণিজ্য ও যাতায়াতের জন্য নদী পরিবহণের আরও বৃহত্তর ব্যবহারের দিকে অগ্রসর হওয়ার আমাদের সংকল্পকে দেখায়। এই রুটে বছরে ট্রাফিকের সম্ভাবনা প্রায় ২৫ লাখ টন। যার মূল্য প্রায় ২২০ কোটি টাকা।'

সভাপতির বক্তব্যে বিআইডবিস্নউটি'র চেয়ারম্যান কমোডর আরিফ আহমেদ মোস্তফা বলেন, 'রাজশাহী থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান পর্যন্ত ৭৮ কিলোমিটার একটি নৌপথের অনুমোদন থাকলেও পদ্মার নাব্য সংকটের কারণে কার্যকর করা হয়নি। ফলে রুটটি সংক্ষিপ্ত করে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ থেকে ভারতের মুর্শিদাবাদের মায়া নৌবন্দর পর্যন্ত আড়াআড়িভাবে ১৭ কিলোমিটার পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে পণ্য আনা-নেওয়া হবে।'

শুরুতে এই নৌপথে ভারত থেকে পাথর বালি ও বিভিন্ন ধরনের খাদ্যসামগ্রী আনা হবে বলেও জানান বিআইডবিস্নউটি'র চেয়ারম্যান।

সোমবার সকালে নৌবন্দরটি উদ্বোধন শেষে বাংলাদেশ থেকে ১১ টনের অধিক তুলা নিয়ে একটি জাহাজ ভারতের উদ্দেশে পাঠানো হয়। এ ছাড়া দুপুর আড়াইটার দিকে ১০০ টন পাথর ভর্তি একটি উইন শিপ সুলতানগঞ্জ নৌবন্দরে এসে পৌঁছায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে