সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
স্যালাইন বিতরণ কর্মসূচিতে রিজভী

ভবিষ্যতে আ'লীগকে জনগণ 'মীরজাফর' হিসেবে চিনবে

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৪ মে ২০২৪, ০০:০০
ভবিষ্যতে আ'লীগকে জনগণ 'মীরজাফর' হিসেবে চিনবে

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, কিয়ামত পর্যন্ত তো আপনারা ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। আপনাদের যখন বিদায় হবে। তখন যে ইতিহাস লেখা হবে সেই ইতিহাসে দেশের জনগণ আপনাদের মীরজাফর হিসেবে চিনবে। মীরজাফর যেমন নিগৃহীত হয়েছে আপনারা তেমন হবেন। আর বর্তমানে যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছে। আগামী প্রজন্ম বলবে এরাই দেশকে রক্ষা করেছে।

শুক্রবার সারাদেশে চলমান তীব্র দাবদাহে অতিষ্ঠ নগরীর পথচারীদের মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তরের তুরাগ থানা বিএনপির পক্ষ থেকে খাবার পানি, স্যালাইন বিতরণ কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, তীব্র গরমে মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। এই আবহাওয়ার কারণে আমরা শুধু প্রকৃতিকে দোষ দিতে পারি না। এই দোষ মানুষের আছে। প্রকৃতিকে প্রতিনিয়ত লুটেরা ভূমিদসু্যরা ধ্বংস করছে। এরা সবাই সরকারি দলের লোক। তারা যেমন প্রকৃতিকে ধ্বংস করছে এবং বিরোধী দলকে দমন করার পাশাপাশি ব্যবসা জমিজমা দখল করে নিয়েছে সরকারি দলের লোকজন। একে তো বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে মামলা দিচ্ছে। গুম খুন করছে। বাড়িঘর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করছে আওয়ামী

লীগের লোকজন। তারা (বিএনপির নেতাকর্মী) অনেকেই ঢাকায় এসে রিকশা চালায়। এদের অনেকেই দেখবেন বিএ পাস, এমএ পাস। ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেন বিএনপির নেতাকর্মী হতাশ তারা বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে। বিএনপি নেতাকর্মী বিদেশে পাড়ি দেবে কেন? বিদেশে পাড়ি দেওয়ার যে ভাড়া সেটাই তো তাদের পকেটে নাই।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশে তিনি বলেন, মেট্রোরেলের টাকা, বিভিন্ন ঠিকাদারি টাকা, পদ্মা সেতুর টাকা, কয়লা পুড়িয়ে যে তাপ বিদু্যৎকেন্দ্র করেছেন এই টাকাগুলো রাখবেন কোথায়? এ টাকাগুলো লুকানোর জন্য ক্ষমতাসীন লোকরাই বিদেশ পাড়ি দিচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের লোকজন ও তাদের ব্যবসায়ীরা কত টাকা লুটপাট করেছে এটা সাংবাদিকরা যাতে না জানে এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সাংবাদিকরা যাতে সেখানে যেতে না পারে। কারণ আওয়ামী লীগের লোকজন ও তাদের ব্যবসায়ীরা কোন ব্যাংক থেকে কত টাকা লুটপাট করেছে এর তথ্য হয়তো বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আছে। এই তথ্য সাংবাদিকরা যাতে জানতে না পারেন এজন্য তাদের ওপর বিধিনিষেধ দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বিএনপির লোকজন বিদেশে যাবে কেন? তারা জেলে যাচ্ছে। তাদের নির্যাতন করা হচ্ছে। তারপরও তারা এদেশে থেকে গণতন্ত্রের জন্য অদম্য সাহস নিয়ে লড়াই করে যাচ্ছে। এই আন্দোলনের প্রেরণা হচ্ছে খালেদা জিয়া। তিনি বিদেশে চলে যেতে পারতেন। কিন্তু জনগণকে ছেড়ে তিনি বিদেশে যাননি।

রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন অনেক রাজনৈতিক দল আমাকে উচ্ছেদ করতে চায়। আপনাকে উচ্ছেদ করে কাকে বসাবে? আপনাকে উচ্ছেদ করে কাউকে বসানো এটা কোনো রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব নয়। এই দায়িত্ব দেশের জনগণের।

তুরাগ থানার ৫৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি সোহেল রানার সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্বদ্যিালরের অধ্যাপক ড. আব্দুল লতিফ মাসুম, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক, সহ-সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, শাহ মাইনুল আহসান চৌধুরী পাইন, আমিনুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, মোস্তফা জামান, আকতার হোসেন, মহানগর বিএনপি নেতা হাজী ইউসুফ, এবিএম আবদুর রাজ্জাক, স্থানীয় বিএনপি নেতা জহিরুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি দুলাল হোসেন প্রমুখ।

ক্ষমতা ছেড়ে দিন: ফারুক

এদিকে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে একটি বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেছেন, ক্ষমতায় থাকলে বড় কথা বলা যায়। ক্ষমতায় থাকলে গ্রেপ্তারও করা যায়। ক্ষমতায় থাকলে বিনাকারণে খালেদা জিয়াকে জেলে রাখা যায়। কিন্তু জনগণ যখন রাস্তায় নেমে পড়বে তখন এসব কথায় কোনো কাজ হবে না।

শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বেগম খালেদা জিয়া, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ বিএনপি নেতাদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।

ফারুক বলেন, তখন ক্ষমতা আপনাকে ছাড়তেই হবে। তাই বলব, জনগণের কাছে হেরে যাওয়ার আগে ক্ষমতা ছেড়ে দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইনটা পাস করে দিয়ে নীরবে বিদায় নেন।

বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে স্বাধীনতা অধিকার আন্দোলন। সমাবেশে বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, বিএনপির তো অস্তিত্বই নাই। বিএনপি নাকি টিকবে না, বিএনপি অসত্য কথা বলে। বিএনপি বাসে আগুন দেয়, বিএনপি মানবাধিকার লঙ্ঘন করে তাই বিএনপির অস্তিত্ব থাকতে পারে না। এসব কথা আওয়ামী লীগ নেতাদের মুখ থেকে ১৬টি বছর যাবৎ শুনে আসছি এবং এখনো শুনতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর একটি সংবাদ সম্মেলন পত্রিকায় এসেছে। যে দেশে মানবাধিকার এবং সংবিধান লুণ্ঠিত হচ্ছে এমন একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আমাকে ছাড়া আর এদেশে কাকে প্রধানমন্ত্রী করবে, কে বা আছে। কিন্তু আমি বলব আপনাকে সরাবার ইচ্ছা আমাদের ছিল না। কারণ বিএনপি এমন একটি নেতার দল যে নেতা বাংলাদেশকে তলাবিহিন ঝুড়ি থেকে ঝুড়িতে রূপান্তরিত করেছে। তাই এমন নেতার দল কষ্মিণকালেও ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ষড়যন্ত্র করতে পারে না।

ষড়যন্ত্র মূলত আওয়ামী লীগ করে এমন মন্তব্য করে ফারুক বলেন, আপনারা যদি ষড়যন্ত্র না করতেন তাহলে ২০১৪ সালে কেন বিএনপিকে বাদ দিয়ে নির্বাচনে গেলেন। কেন ২০১৮ সালে বিএনপির সঙ্গে অঙ্গীকার করার পরও দিনের ভোট রাতে করলেন। কেন ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি ভাই ভাই ডামি ভোট করলেন। এসব কথার উত্তর আপনাকে একদিন দিতে হবে।

ফারুক বলেন, বিএনপি আপনাকে এবং আপনার দল আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চায় এ কারণে যে জনগণ চায় না আপনারা আর ক্ষমতায় থাকেন। কারণ জনগণ চায় না তিন টাকার কলা ১৪ টাকায় কিনুক। দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতির মধ্যে আপনি বিরোধী দলের নেতাদের যেভাবে বিনাকারণে জেলখানায় রাখছেন, তাতে জনগণ মনে করে আপনার দ্বারা সুষ্ঠু নির্বাচন কখনোই সম্ভব না। আর আপনার আমলে অর্থনীতি চাঙা হবে না। তাই জনগণ চাচ্ছে আপনি সরে যান। যার প্রমাণ জনগণ ৭ জানুয়ারির ভোটে দিয়েছে, কয়েক পার্সেন্টও ভোট পড়েনি।

স্বাধীনতা অধিকার আন্দোলনের কাজী মনিরুজ্জামান মনিরের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবীব, বিএনপির শিশুবিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ সিদ্দীকী, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমতুলস্নাহ, আলমগীর হোসেন, ওলামা দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা আলমগীর হোসেন, সাবেক ছাত্রদলের সহ-সভাপতি এজমল হোসেন পাইলট, মৎস্যজীবী দলের সদস্য ইসমাইল হোসেন সিরাজী, আদর্শ নাগরিক আন্দোলনের সভাপতি মীর আমির হোসেন আমু প্রমুখ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে