রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ

যাযাদি ডেস্ক
  ০৮ মে ২০২৪, ০০:০০
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ

বাংলাভাষা ও সাহিত্যের উৎকর্ষের নায়ক এবং বাঙালির আত্মিক মুক্তি ও সার্বিক স্বনির্ভরতার প্রতীক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনা অসংখ্য এবং বৈচিত্র্যময়। তার মেধা-মনন-সৃজনশীলতায় সমৃদ্ধ হয়েছে কবিতা, সংগীত, উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক, প্রবন্ধ, ভ্রমণ, শিশুতোষ রচনাসহ সাহিত্যের প্রতিটি শাখা। 'হে নূতন,/দেখা দিক আর-বার জন্মের প্রথম শুভক্ষণ/ তোমার প্রকাশ হোক কুহেলিকা করি উদ্ঘাটন সূর্যের মতন...।'- নিজের জন্মদিন পঁচিশে বৈশাখকে এভাবেই আহ্বান করেছিলেন তিনি। মহাকালের যাত্রায় ব্যতিক্রমী এক 'রবি'র কিরণে উজ্জ্বল এই দিন। আজ পঁচিশে বৈশাখ, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১২৬৮ বঙ্গাব্দের এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা 'আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি' গানটি আমাদের জাতীয় সংগীত। ভারত ও শ্রীলংকার জাতীয় সংগীতের রচয়িতাও তিনি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাধারে কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ ও চিত্রশিল্পী। তবে প্রধানত তিনি কবি। মাত্র আট বছর বয়সে কবিতা লেখা শুরু করেন। বাঙালি সমাজে তার রচিত সংগীতের জনপ্রিয়তা এত বছর পরও তুলনাহীনভাবে বাড়ছে। তিনি প্রায় ২ হাজার গান রচনা করেন। অধিকাংশ গানেরই সুরারোপ করেন। তার সব গান 'গীতবিতান' গ্রন্থে রয়েছে। জীবিতকালে তার প্রকাশিত মৌলিক কবিতাগ্রন্থ ৫২টি, উপন্যাস ১৩, ছোটগল্পের বই ৯৫, প্রবন্ধ ও গদ্যগ্রন্থ ৩৬ এবং নাটকের বই ৩৮টি। কবির মৃতু্যর পর বিশ্বভারতী থেকে ৩৬ খন্ডে 'রবীন্দ্র রচনাবলি' প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া ১৯ খন্ডে রয়েছে 'রবীন্দ্র চিঠিপত্র'। ১৯২৮ থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত কবির আঁকা চিত্রকর্মের সংখ্যা আড়াই হাজারেরও বেশি। কবির প্রথম চিত্র প্রদর্শনী দক্ষিণ ফ্রান্সের শিল্পীদের উদ্যোগে ১৯২৬ সালে প্যারিসের পিগাল আর্ট গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত হয়।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রায় একক প্রচেষ্টায় বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে আধুনিক করে তুলেছিলেন। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর-সারদা দেবী দম্পতির চতুর্দশ সন্তান রবীন্দ্রনাথ ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার জয়ের মধ্য দিয়ে তার অতুলনীয় সাহিত্য সৃজনী প্রতিভায় বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বসাহিত্যের মর্যাদাপূর্ণ আসনে অধিষ্ঠিত করেন।

বাঙালির নিত্যদিনের জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপস্থিতি এখনো দীপ্যমান। তার জন্মদিনটি শুধু বাংলাদেশেই নয়, এখন সারাবিশ্বে ছড়িয়ে থাকা বাঙালির কাছেই এক আনন্দঘন উৎসবের দিন। রাজধানী ঢাকাসহ কবির স্মৃতিধন্য স্থানগুলোয় জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে কবিগুরুর জন্মদিনের উৎসব পালিত হয়। এ ছাড়া সারাদেশেই রবীন্দ্রজয়ন্তীর অজস্র অনুষ্ঠান আয়োজন করে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় প্রিয় কবির স্মৃতির প্রতি।

বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের অধিকারী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ১৩৪৮ সালের ২২ শ্রাবণ (ইংরেজি-৭ আগস্ট ১৯৪১) দীর্ঘ রোগ ভোগের পর কলকাতায় পৈতৃক বাসভবনে মৃতু্যবরণ করেন। রবীন্দ্রনাথের পূর্বপুরুষরা খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় পর্যায়ে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কবির জন্মবার্ষিকী পালনের জন্য আগেই নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে অনুষ্ঠান হবে ঢাকার ছায়ানটে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন এ উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে।

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের রবীন্দ্র কাচারি বাড়িতে কবির ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ৩ দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ কুঠিবাড়ীতে আয়োজন করা হয়েছে নানা অনুষ্ঠানমালার। এ উপলক্ষে বসছে ২ দিনব্যাপী গ্রামীণ মেলা। খুলনার ফুলতলা উপজেলার দক্ষিণডিহি গ্রামে রবীন্দ্র কমপেস্নক্সে আয়োজন করা হয়েছে তিন দিনের নানা অনুষ্ঠানের। আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি এখানে বসছে লোকমেলা। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে এ উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে