বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১

নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সুপারশপে পলিথিন!

বিশেষ প্রতিনিধি
  ০২ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সুপারশপে পলিথিন!

১ অক্টোবর থেকে সুপারশপে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হলেও ঢাকাসহ দেশের কোথাও তা কার্যকর হয়নি। সবখানেই আগের মতোই পলিথিন ব্যাগে সব ধরনের পণ্য বেচাকেনা হয়েছে। বেশিরভাগ সুপারশপ কর্তৃপক্ষের দাবি, পলিথিন নিষেধাজ্ঞার কথা তারা জানেন না। তবে কেউ কেউ জানিয়েছেন, তারা নিষেধাজ্ঞার কথা শুনেছেন। তবে পলিথিনের বিকল্প ব্যাগ তারা পাননি।

সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের সুপারশপে ১ অক্টোবর মঙ্গলবার থেকে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হয়। এর পরিবর্তে ব্যবহার করতে হবে পাট বা কাপড়ের ব্যাগ। তবে বড় বড় দুয়েকটি সুপারশপ ছাড়া ঢাকার বেশিরভাগ সুপারশপে পাটের ব্যাগ পৌঁছেনি। আবার পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে পাটের তৈরি বিভিন্ন আকৃতির ব্যাগ দেওয়া হলেও সেগুলো ৬ টাকা থেকে ১৭ টাকা পর্যন্ত দামে ক্রেতাদের কিনতে হয়েছে। প্রথম দিনে পাটের ব্যাগ কিনতে অনেক ক্রেতাকে অনিহা প্রকাশ করতে দেখা গেছে। মিরপুর এফএস স্কয়ার সুপারশপে মঙ্গলবার সকাল থেকে বেশিরভাগ ক্রেতাদের কেনা পণ্য পলিথিন ব্যাগে নিয়ে বের হতে দেখা যায়। দুপুরে এই শপিং স্টোরের পঞ্চম তলার প্যারাডাইস ফ্যাশনের ম্যানেজার মোর্শেদুল ইসলাম রিপন বলেন, আমরা সব সময় একটু মোটা জাতীয় পলি ব্যাগে বিক্রিত পণ্য ক্রেতার হাতে তুলে দিচ্ছি। সেই ব্যাগে আমাদের লগোসহ মার্কেটের নাম ও ঠিকানা রয়েছে। পলিথিনের ব্যাগ বন্ধের কথা আমরা জানি না। মার্কেটে এ জন্য মঙ্গলবার বেলা ২টা পর্যন্ত কোনো অভিযান হয়নি।

মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরের পাশে অরবিট আর্থ শপে কথা হয় ম্যানেজার মো. শুভর সঙ্গে, তিনি বলেন, 'মার্কেটের সবাই পলি ব্যাগেই পণ্য দিচ্ছে, আমরাও দিচ্ছি। কবে থেকে বন্ধ হলো আমরা জানি না। আপনার কাছে প্রথম শুনলাম। বন্ধ হলে মার্কেট কমিটি আমাদের জানাবে। সরকার যদি কাপড়ের বা পাটের ব্যাগ আমাদের সরবরাহ না করে আমরা কাপড়ের ব্যাগ কোথায় পাব। আমাদের মার্কেটে কোনো অভিযান হয়নি।'

শাহ আলী পস্নাজা সুপারশপের ইসরা ফ্যাশনের ম্যানেজার মো. জাকারিয়া বলেন, পলি ব্যাগ বন্ধের কথা আমরা জানি না। আমরা সব সময় ক্রেতাদের পণ্য কাগজের টিসু্য ব্যাগ দিয়ে থাকি। আমরা পলি ব্যাগ ব্যবহার করি না, পলিথিন পরিবেশের ক্ষতি করে। সরকার পাটের ব্যাগ সরবরাহ করলে আমরাও ক্রেতাদের পাটের ব্যাগেই বিক্রিত পণ্য দিব। কারখানা থেকেই সব পণ্য পলিব্যাগে আসে। আমাদের কিছু করার নেই। আপনারা কারখানা বন্ধ করুন আগে।

মিরপুর ১ নম্বর মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের দৃষ্টি ফ্যাশনে কথা হয় ম্যানেজার আল আমিনের সঙ্গে। তিনি জানান, আমরা পলিথিন বন্ধের কথা জানি না। ক্রেতারা পলিথিন ব্যাগেই পণ্য কিনে নিচ্ছে। তারাও কোনো অভিযোগ করেনি।

এ ছাড়া বসুন্ধরা, কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি, ফার্মগেট সেজান পস্নাজা, নিউমার্কেট এলাকা, উত্তারা মাস্কট পস্নাজার সুপারশপে পলিথিন ব্যাগ ও কাগজের ব্যাগে পণ্য বিক্রি করতে দেখা গেছে। অধিকাংশ দোকানের ম্যানেজাররা জানান, তারা এরই মধ্যে শপের বিভিন্ন জায়গায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। তাদের যে টিসু্য ব্যাগ, জালি ব্যাগ ছিল সেগুলো সরিয়ে নিয়েছেন। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে পাটের তৈরি বিভিন্ন আকৃতির ব্যাগ দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারর ১ অক্টোবর থেকে সুপারশপে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করে। এরপর ১ নভেম্বর থেকে কাঁচাবাজারে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করে। নিষিদ্ধ পলিথিন ও পলিপ্রপিলিন শপিং ব্যাগ উৎপাদন, মজুত, পরিবহণ, বিপণন ও ব্যবহার বন্ধের কার্যক্রম কঠোরভাবে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এরই অংশ হিসেবে ১ অক্টোবর থেকে সুপারশপে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ হয়। এর আগে ৯ সেপ্টেম্বর পলিথিন শপিং ব্যাগের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের লক্ষ্যে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সভায় পলিথিন ব্যাগ বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়।? পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এ তথ্য জানান।

এর আগে, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর বিধান অনুসারে আনুষ্ঠানিকভাবে ২০০২ সালের ১ মার্চ সরকার বাংলাদেশে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। সেই সময় পরিবেশ অধিদপ্তর শর্তসাপেক্ষে সব রকমের পলিথিন শপিং ব্যাগ উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, বিক্রি, মজুদ ও বিতরণ নিষিদ্ধ করে। ২০০২ সালে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর থেকে ৯৩১ টন পলিথিন জব্দ করা হয়েছে। ৫২টি কারখানা উচ্ছেদ করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে