চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের আমদানি-রপ্তানি-সংক্রান্ত সব কার্যক্রম সপ্তাহের সাত দিনই চালু রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. জাকির হোসেন। তিনি বলেছেন, সপ্তাহের প্রতিদিনই কার্যক্রম চালাতে যা যা করণীয়, তা করা হবে। এ জন্য চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষকেও সবার সহযোগিতা করতে হবে।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস্ অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের সঙ্গে এক সৌজন্য সাক্ষাতে কাস্টমস কমিশনার এই প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এ সময় শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য তরান্বিত করতে সাত দফা প্রস্তাবনা পেশ করেন।
সভায় কাস্টমস কমিশনার ছাড়াও চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অতিরিক্ত কমিশনার, যুগ্ম কমিশনার এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস্ অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফের নেতৃত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন- ভাইস চেয়ারম্যান মো. রিয়াজ উদ্দিন খান, পরিচালক মামুনুর রশিদ, খায়রুল আলম (সুজন), এসএম এনামুল হক, মোহাম্মদ আসলাম, মোহাম্মদ রাশেদ, কফিল উদ্দিন আহমেদ এবং মো. এ এইচ এম কামাল।
সভায় শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ কাস্টমস এবং বন্দরের সঙ্গে শিপিং এজেন্টদের দীর্ঘকালের পুঞ্জিভূত সমস্যা উপস্থাপন করে সাত দফা প্রস্তাবনা পেশ করেন। ওই সাত দফায় উলেস্নখ করা হয়েছে- কাস্টমসের কার্যক্রম সাত দিন ২৪ ঘণ্টা চালু রাখার আদেশ থাকলেও কাস্টমস হাউসের কার্যক্রম পুরোপুরি সচল থাকে না। এটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি। তবে সাত দিন ২৪ ঘণ্টা কাস্টমসের কার্যক্রম চালু থাকার পুরোপুরি ফল পেতে হলে অন্যান্য সংস্থাকেও তাদের কার্যক্রম চালু রাখতে হবে। যেমন শুক্রবার-শনিবার ও সরকারি ছুটি বিশেষ করে দুই ঈদের ছুটিতে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যবহারকারীরা তাদের কার্যক্রম চালু রাখলেই এর সুফল পাওয়া যাবে।
এসাইকুডায় বিপজ্জনক পণ্যের আইজিএম সংশোধন প্রসঙ্গে বলেন, কিছুদিন ধরে এসাইকুডায় দাখিলকৃত বিপজ্জনক পণ্যের আইজিএম নৌবাহিনীর সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ছাড়পত্র কাস্টমস এবং বন্দরের কাছে অস্পষ্ট থাকায় কাস্টমসের কাছেও আইজিএম সংশোধন করা সম্ভব হয় না। এ ধরনের সমস্যা যেন ভবিষ্যতে না হয়, এর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। এ ছাড়া এমএলও কোড সহজীকরণ ও দ্রম্নততার সঙ্গে প্রদানের ব্যবস্থা করা আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য খুবই জরুরি।
যথা সময় আমদানি পণ্যের নিলাম ও মেয়াদোত্তীর্ণ নষ্ট পণ্য ধ্বংসের বিষয়ে বলেন, সময়মতো আমদানি পণ্যের নিলাম সম্পাদন এবং পচনশীল পণ্য যথাসময় ধ্বংস করা হলে রাজস্ব আদায় বাড়বে। এ ছাড়া কনটেইনার পুনরায় ব্যবহার করা যাবে এবং বন্দরে জটের সৃষ্টি হবে না। বর্তমানে ৯ হাজারেরও অধিক নিলাম/ধ্বংসযোগ্য পণ্যের কনটেইনার বন্দরে পড়ে আছে।
জাহাজের অনলাইন ফাইনাল এন্ট্রি প্রসঙ্গে বলেন, জাহাজ বহিঃনোঙর/কুতুবদিয়ায় আসার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শিপিং এজেন্ট, কাস্টম প্রতিনিধি ও সার্ভেয়ার সংশ্লিষ্ট দলিলাদিসহ জাহাজে সশরীরে গিয়ে ফাইনাল এন্ট্রি দাখিল করতে হয়। দূরত্বের কারণে সবসময় জাহাজে সশরীরে গিয়ে ফাইনাল এন্ট্রি দেওয়া কষ্টসাধ্য হয়। এ ছাড়া দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার এই কাজ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু ফাইনাল এন্ট্রি সময়মতো করা না হলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জরিমানা আরোপ করে। তাই অন্যান্য সরকারি সংস্থার মতো ফাইনাল এন্ট্রি অনলাইনে দাখিলের ব্যবস্থা করা জরুরি।
এ ছাড়া এফ ডিভিশনের বুকিং সেল পতেঙ্গা থেকে কাস্টম হাউসে স্থানান্তর অথবা বুকিং-সংক্রান্ত কাজ অনলাইনে করার ব্যবস্থা করা যায়।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের ভিটিএমএস'র সঙ্গে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সংযোগ স্থাপন করলে জাহাজের গতিবিধি ও সামগ্রিক কার্যক্রম খুব সহজেই নজরদারি করতে পারবে। তাই এসব প্রস্তাবনার বাস্তবায়ন সময়ের দাবি।
এদিকে সমঝোতার প্রেক্ষিতে কনটেইনার পরিবহণের বিশেষায়িত গাড়ি প্রাইম মুভার ট্রেইলর শ্রমিকদের ধর্মঘট প্রত্যাহার করায় চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য স্বাভাবিক রয়েছে। জেলা প্রশাসনের দপ্তরে আয়োজিত এক জরুরি সভায় উভয়পক্ষের মধ্যে সমঝোতার পর শ্রমিকপক্ষ কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে কাজে যোগদান করে।
এর আগে গত বুধবার ভোর থেকে কর্মবিরতির কারণে আমদানি-রপ্তানি পণ্যভর্তি কনটেইনার ডিপোতে আনা-নেওয়ার কাজ বন্ধ থাকে। তবে বন্দরের ভেতর জেটির জাহাজ, ইয়ার্ড ও টার্মিনালে কনটেইনার লোড-আনলোড, স্থানান্তর কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিল। বেসরকারি পরিবহণ সংস্থার মালিকানাধীন প্রাইমমুভার ট্রেইলর চালক ও সহকারীদের নিয়োগপত্র, ছবিসহ পরিচয়পত্র ও সরকার ঘোষিত নিম্নতম মজুরি প্রদান, শ্রমঘণ্টা বাস্তবায়ন ইত্যাদি বাস্তবায়নের দাবিতে এই ধর্মঘট ডাকা হয়।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাইমমুভার ট্রেইলর, কনক্রিট মিক্সার, ফ্ল্যাটবেড ও ড্রামট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক হাসান মাহমুদ জানান, আমাদের দাবির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে সমঝোতার প্রেক্ষিতে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হয়।
বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, প্রাইম মুভার ও ফ্ল্যাটবেড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মালিকপক্ষ ও শ্রমিকপক্ষের মধ্যে নিয়োগপত্র নিয়ে বিদ্যমান সমস্যার সমঝোতা হয়েছে। মালিকপক্ষ ও শ্রমিকপক্ষ সম্মিলিতভাবে নিয়োগপত্র চূড়ান্ত করেছে এবং মালিকপক্ষ চূড়ান্ত নিয়োগপত্র মোতাবেক শ্রমিকদের নিয়োগপত্র দিতে সম্মত হয়। শ্রমিকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহারের পর আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য স্বাভাবিক রয়েছে।