সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

প্রধান সড়কে 'মেরাদিয়া হাট' যানজটে নাকাল বাসিন্দারা

এম এইচ সৈকত
  ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
প্রধান সড়কে 'মেরাদিয়া হাট' যানজটে নাকাল বাসিন্দারা
রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বুধবার বসছে 'মেরাদিয়া হাট'। সাপ্তাহিক এই হাটের দিনে রামপুরা-স্টাফ কোয়ার্টার সড়কের প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে সড়ক ব্যবহারকারী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় -যাযাদি

রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বসছে 'মেরাদিয়া হাট'। আগে প্রতিদিন হাট বসলেও বর্তমানে সপ্তাহে একদিন বুধবার হাট বসে। জুলাই-আগস্টের গণঅভু্যত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরে রামপুরার বনশ্রী ও দক্ষিণ বনশ্রীর আবাসিকের কোনো সড়কে অস্থায়ী দোকানপাট বসতে না পারায় বনশ্রী-স্টাফ কোয়ার্টার প্রধান সড়কের দুইপাশে বসছে দোকানপাট। ফলে সাপ্তাহিক হাটের দিনে রামপুরা-স্টাফ কোয়ার্টার সড়কের প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে এই সড়ক ব্যবহারকারী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের ভোগান্তির শেষ নেই।

যানজট নিরসনে কাজ করা পুলিশ সদস্যরা জানান, আগে মেরাদিয়া হাটের কারণে সপ্তাহে একদিন রামপুরা-স্টাফ কোয়ার্টার রোডে যানজট কিছুটা বেশি থাকত। কিন্তু বর্তমানে মূল সড়কের পাশে দোকানপাট বসায় তীব্র যানজট থাকে। এতে আমাদেরও দায়িত্ব পালনে হিমশিম খেতে হয়। জনসাধারণের স্বার্থে তবুও আমরা দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।'

হাটের অস্থায়ী ব্যবসায়ীরা জানান, প্রায় ত্রিশ বছর ধরে মেরাদিয়া হাটে ব্যবসা করে আসছি। সাবেক আওয়ামী সরকারের আমলেও আমরা এই হাটে দোকানদারী করেছি। কিন্তু এখন অদৃশ্য কারণে আমাদের আবাসিকের ভিতরে বসতে দেওয়া হয় না। ফলে আমরা মূল সড়কের দুইপাশে বসে ব্যবসা করছি। এতে যাত্রীদের কিছুটা কষ্ট হলেও সুবিধা পাচ্ছে অধিকাংশ মানুষ।'

এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, 'মেরাদিয়া হাটে দেশি হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল, মাছ, ডিম, শাকসবজি পাওয়া যায়। এছাড়াও সবধরনের পোশাক ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাওয়া যায়। এসব নিত্যপণ্য গরিব-অসহায় থেকে শুরু করে গুলশান-বনানীর বিত্তশালীরাও কিনে থাকেন। আমাদের ব্যবসার পাশাপাশি মানুষগুলোও উপকৃত হচ্ছে। তাই পুরোনো এই হাট প্রতিস্থাপন না করে, হুট করে বন্ধ করে দিয়ে আমাদের পেটে লাথি মারার পাশাপাশি ক্রেতাদের বুকে ছুরি মেরেছে অদৃশ্য ক্ষমতা।'

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী জানান, সাবেক সরকারের আমলে আমরা ছাত্রলীগ, যুবলীগ, পুলিশকে প্রতিনিয়ত চাঁদা দিয়ে ব্যবসা করতাম। এ চাঁদার বড় একটি ভাগ চলে যেত বনশ্রী সোসাইটির দরবারে। কিন্তু সরকার চলে যাওয়ার পরে শিক্ষার্থীদের ভয়ে হাটে কেউ চাঁদা নিতে আসে না। যার কারণে কিছুদিন বিনা চাঁদায় আমরা দোকানদারি করেছি। কিন্তু ছাত্রলীগ, যুবলীগ, পুলিশকে দিয়ে চাঁদা উঠিয়ে যে সিংহভাগ বনশ্রী সোসাইটি পেত তা এখন আর পায় না। বনশ্রী সোসাইটি আবাসিকের ভেতরে সব গেট লাগিয়ে দোকানপাট নিষিদ্ধ করেছে। যার কারণে পেটের দায়ে আমরা এখন মূল রাস্তার দু'পাশে বসে ব্যবসা করছি।

হাটের ক্রেতারা বলেন, 'মেরাদিয়া হাটে টাটকা জিনিস পাওয়া যায়। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে এখানে খরিদ্দার আসে। তুলনামূলক রাজধানীর অন্যান্য বাজারের তুলনায় এখানে দামও কিছুটা কম। কিন্তু কি কারণে হঠাৎ করে হাট বসতে দেওয়া হচ্ছে না তা জানতে পারিনি। এই হাট অনেকে পুরনো। কোরবানির সময়ও এখানে দূর-দূরান্ত থেকে এসে গরু কেনেন ক্রেতারা। হাট স্থায়ীভাবে বন্ধ না করে স্থানান্তর করা হোক।'

বাসের যাত্রী জুয়েল রানা বলেন, 'আমি প্রতিদিন ব্যবসায়ী কাজে আসমানি পরিবহণে মদনপুর থেকে উওরা জসিমউদ্দিন যাই। এক দেড় ঘণ্টায় গন্তব্যে পৌঁছে যাই। কিন্তু বর্তমানে মূল সড়কে হাট বসার কারণে তিন ঘণ্টা কিংবা তারও অধিক সময় লাগে। অথচ হাট বসলেও এর আগে এত সময় লাগেনি।'

বনশ্রী আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী নাজমুল ইসলাম বলেন, 'দেশ নতুন করে স্বাধীন হওয়ার পরে আমরা মেরাদিয়া হাট নিয়ে বনশ্রী সোসাইটিসহ থানা পুলিশের সঙ্গে অনেকবার বসেছি। কিন্তু সবার মত এক না হওয়ায় হাট নিয়ে আশানুরূপ কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।'

বনশ্রী সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হক বলেন, 'তৎকালীন সরকারের আমলে বিভিন্নভাবে অবৈধ দোকানপাট বসিয়ে লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করেছে একটি মহল। আমাদের জায়গা দখল নিয়ে কোরবানির হাটসহ সাপ্তাহিক হাট বসানো হতো। কিন্তু এখন তা আর হতে দেওয়া যাবে না। আমরা আবাসিকের সব গেট বন্ধ করে দিয়েছি। সব ধরনের অবৈধ দোকানপাট নিষিদ্ধ করেছি। কারণ এ জায়গা আমাদের। আমরাই রক্ষা করব।'

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) খোন্দকার নজমুল হাসান পিপিএম (বার) বলেন, 'বিষয়টি আমি অবগত ছিলাম না। আপনি জানানোর পরে জানলাম। সামনের বুধবারে যদি মূল রাস্তায় হাট বসে তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাস্তায় কোনো ধরনের দখলদারিত্ব থাকবে না। রাস্তায় দোকানপাট বসতেও দিবো না। রাস্তা পরিষ্কার থাকবে। রাস্তায় ট্রাফিকের অভিযান চলমান আছে এবং সামনেও থাকবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে