মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

৯ বছর পর পাকিস্তানের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

যাযাদি ডেস্ক
  ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
৯ বছর পর পাকিস্তানের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৯ বছর পর পাকিস্তানের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

নয় বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তা তুলে নেওয়া হয়েছে।

গত ১৩ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সোমবার সিন্ডিকেটের একাধিক সদস্য নিশ্চিত করেছেন।

এই সিদ্ধান্তের ফলে পাকিস্তানের শিক্ষার্থীদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আর কোনো বাধা থাকছে না। আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও পাকিস্তানে উচ্চশিক্ষা নিতে পারবেন।

পাকিস্তানের সঙ্গে শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ নানা সহযোগিতা বিনিময়ও করতে পারবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

পাকিস্তানের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক স্থাপনের প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) সায়মা হক বিদিশা বলেন, '২০১৫ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা হয়েছিল। কিন্তু অনেকেই স্কলারশিপ নিয়ে কিংবা কনফারেন্সে যোগ দিতে সেখানে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করে। নিষেধাজ্ঞার কারণে সেটা সম্ভব হচ্ছিল না।'

'আমরা যেহেতু একটি একাডেমিক প্রতিষ্ঠান, সব দেশের সঙ্গেই আমাদের স্বাভাবিক সম্পর্ক আছে। সেটা বিবেচনা করেই আমরা সভায় আলোচনা করে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'

২০১৫ সালের ১৪ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এক জরুরি সিন্ডিকেট ডেকে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

ওই বছরের ২২ নভেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী বদর প্রধান আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকরের পর 'উদ্বেগ' প্রকাশ করে বিবৃতি দেয় পাকিস্তান। এরপর ঢাকায় পাকিস্তানি হাইকমিশনারকে ডেকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে 'কড়া প্রতিবাদ' জানানো হয়।

এর এক সপ্তাহের মধ্যে পাকিস্তানও বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে ডেকে একাত্তরে গণহত্যার দায় অস্বীকার করে।

পরে ১৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত জানিয়ে অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক বলেছিলেন, 'বুদ্ধিজীবীদের হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত, ৩০ লক্ষ মানুষ হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত-তাদের দেশ সন্ত্রাসী রাষ্ট্র পাকিস্তান। সেই পাকিস্তান যখন বলে একাত্তরে কোনো গণহত্যা ঘটেনি এবং কোনো গণহত্যার সঙ্গে পাকিস্তানের সেনাসদস্যরা জড়িত নয়- তখন আমরা বুঝতে পারি যে, একাত্তরে যারা গণহত্যা চালিয়েছিল এদেশে তারা দ্বিতীয়বার গণহত্যা চালাচ্ছে।'

একাত্তরে নয় মাস সারাদেশে হত্যাযজ্ঞের পাশাপাশি পরাজয়ে অন্তিম মুহূর্তে ১৪ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শিক্ষকদের ধরে নিয়ে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা।

তৎকালীন উপাচার্য বলেন, 'এসব ঘটনার প্রত্যক্ষ প্রমাণ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে। এই প্রত্যক্ষ প্রমাণ সারা পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কাইভগুলোতে আছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাত্তরের ঘটনার প্রমাণ যেখানে রয়েছে সেই জায়গায় এই ধরনের মিথ্যাচার করা।'

'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বসে এ ধরনের মিথ্যার সঙ্গে আপস করা অসম্ভব ব্যাপার।'

অধ্যাপক আরেফিন বলেন, 'আমাদের বিজয়ের মাসের প্রথম দিনের বিজয়র্ যালি থেকেই আমরা বলে আসছি- পাকিস্তানের কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান, কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পহেলা ডিসেম্বর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ধরনের সম্পর্ক রক্ষা সম্ভব নয়।'

সিন্ডিকেটে সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা পর সম্পর্কচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানান তিনি।

তিনি বলেছিলেন, একাত্তরে গণহত্যার জন্য পাকিস্তান নিঃস্বার্থ ক্ষমা প্রার্থনা না করা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে পাকিস্তানের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি সংস্থা কোনো কিছুর সঙ্গে আর সম্পর্ক থাকবে না।

গবেষণা, ছাত্র প্রতিনিধি, শিক্ষক প্রতিনিধি, শিক্ষক-ছাত্র প্রতিনিধি বিনিময় এবং যেসব স্মারক চুক্তি হয়েছে সেগুলোও স্থগিত থাকবে বলে জানান তিনি।

প্রবল গণআন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটলে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টায় রয়েছে পাকিস্তান।

এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে সিন্ডিকেট সভায় পাকিস্তানের সম্পর্ক পুনরায় স্বাভাবিক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সিন্ডিকেট সভায় উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মামুন আহমেদসহ সিন্ডিকেট সভার সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে ৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ প্রায় এক দশক পরে ঢাবি উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে