কৃষিযন্ত্র হরিলুট তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় সাবেক প্রকল্প পরিচালকসহ ৮ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও ডিপিডিসহ অন্য কর্মকর্তারা এখনো বহাল আছেন। এ ঘটনায় চলছে আলোচনা সমালোচনা ঝড়।
জানা গেছে, টানা ২ মাসের তদন্ত শেষে প্রকল্পের সাবেক পরিচালক তারিক মাহমুদুল ইসলামসহ কৃষি ক্যাডারের ৮ জন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে মন্ত্রণালয়। দেশে কৃষি উৎপাদন বাড়লেও উদ্বেগজনক হারে কৃষি শ্রমিক কমেছে। বিগত ১৫ বছরে দেশে ধান, আলু, ভুট্টা, সরিষাসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। ফলে কৃষিক্ষেত্রে শ্রমিকের চাহিদা বাড়লেও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে সরকার পাঁচ বছর মেয়াদি সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প গ্রহণ করে। ফসল আহরণে অপচয় কমানো, উৎপাদন বৃদ্ধি, সময় বাঁচানোসহ কৃষকদের সুবিধা চিন্তা করে এ প্রকল্পের আওতায় ভর্তুকিমূল্যে কৃষকদের কৃষি যন্ত্রপাতি প্রদানের সিদ্ধান্ত ছিল। প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে ৩ হাজার ২০ কোটি টাকা। সরকার ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল মেয়াদে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তবে শুরু থেকেই প্রকল্পটি নিয়ে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। শুরু থেকে কৃষকদের অভিযোগ ছিল। ভর্তুকিমূল্যে কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহের জন্য এসিআই মোটরস লিমিটেড, গ্রিনল্যান্ড টেকনোলজিস লিমিটেড ও এসকিউ ট্রেডিং অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংসহ ৩৪ কোম্পানিকে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু কৃষক এসব কোম্পানির বদলে নিম্নমানের কোম্পানি কৃষি যন্ত্রপাতি পাচ্ছেন।
\হঅন্যদিকে হাওড় ও উপকূলীয় এলাকার ৭০ শতাংশ এবং সমতলে ৫০ শতাংশ ভর্তুকিমূল্যে কৃষি যন্ত্রপাতি গরিব কৃষকদের দেওয়ার কথা। অভিযোগ রয়েছে, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের ভর্তুকির সুবিধায় ভাগ বসাচ্ছেন অসাধু কর্মকর্তা, যন্ত্র সরবরাহকারী কিছু কোম্পানি ও স্থানীয় দালাল। ভর্তুকির যন্ত্রের জন্য ঘুষ, যন্ত্রের দাম বাড়িয়ে কৃষকের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায়, ভুয়া উপকারভোগী বানিয়ে পুরো যন্ত্রের টাকা আত্মসাৎ, প্রকৃত কৃষকের বদলে অন্যকে যন্ত্র দেওয়া, মানহীন যন্ত্র সরবরাহ, যন্ত্র বিতরণে প্রভাবশালীদের প্রভাব, নষ্ট হলে কোম্পানিগুলোর বিক্রয়োত্তর সেবা না দেওয়া, এক যন্ত্র কয়েকবার বিক্রি করে একাধিকবার ভর্তুকি নেওয়াসহ রয়েছে নানা অভিযোগ।
এছাড়া হাওড় এলাকার বাইরের লোকজন হাওড় দেখিয়ে এই কৃষি যন্ত্রপাতি নিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
আরেকটি সূত্র বলছে, এই প্রকল্পের শুধু প্রকল্প পরিচালক কিংবা মাঠপর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তা নয় বরং এই প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক আলতাফুন নাহার, উপ-প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম শেখসহ প্রকল্পের সিনিয়র কৃষি প্রকৌশলী (ইনচার্জ) মো. আব্দুল আহাদ, সিনিয়র মনিটরিং অফিসার মুহাম্মদ কোরবান আলী, মনিটরিং অফিসার মোহাম্মদ জুলফিকার আলী ভুট্টো এবং প্রকল্পের মনিটরিং অফিসার আফছার আহাম্মেদ রাজিনসহ প্রকল্পের অন্যরা তাদের দায়িত্ব এড়ানোর সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে উপ-প্রকল্প পরিচালক আলতাফুন নাহার সঙ্গে কথা বলতে রোববার তার অফিসে গিয়ে তাকে পাওয়া না যাওয়ায় তার ফোন নাম্বারে একাধিক বার কল করে এবং খুদে বার্তা পাঠিয়ে তার সাড়া পাওয়া যায়নি।
আরেক উপ-প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম শেখের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি পরিচয় পেয়ে ব্যস্ত আছেন বলে ফোন রেখে দেন।
এ বিষয় কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ডক্টর এমদাদ উলস্নাহ মিয়ান মুঠোফোনে 'যায়যায়দিন'কে বলেন, যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে তাদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং বিভাগীয় মামলা নেওয়া হবে। বাকি যারা আছেন, তাদের বিরুদ্ধে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করার জন্য বলেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।